শ্রীকান্ত পাত্র, ঘাটাল: অতিবর্ষণ, বন্যা ও 'ডানা' ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাব পড়ল পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার ধান উৎপাদনে। জেলা কৃষিদপ্তর সূত্রে জানা গিয়েছে, চলতি বছর আমন ধান উৎপাদন গত বছরের তুলনায় প্রায় পাঁচ লক্ষ মেট্রিক টন কম হয়েছে। নজিরবিহীনভাবে জেলায় ধান কম উৎপাদনের জন্য অতিবর্ষণ, বন্যা ও 'ডানা' ঘূর্ণিঝড়কেই দায়ী করছে জেলা কৃষিদপ্তর।
পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা কৃষিদপ্তরের উপ-অধিকর্তা (প্রশাসন) মৃদুল ভক্ত বলেন, "গত বছরের তুলনায় এবছর জেলায় আমন ধান উৎপাদন অনেকটাই কম। তার মূল কারণ হল, অতিবর্ষণ, বন্যা ও 'ডানা' ঘূর্ণিঝড়ের দাপট। জেলায় ধানচাষের কোনও ঘাটতি ছিল না। বন্যাজনিত প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে চাষ নষ্ট হয়েছে ব্যাপক। সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে ঘাটাল মহকুমায়। ধানচাষের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে ঘাটাল মহকুমার প্রায় সবকটি ব্লকে। ফলে ধান উৎপাদনে ব্যাপক ঘাটতি হয়েছে জেলায়। গত বছরের তুলনায় প্রায় পাঁচ লক্ষ মেট্রিক টন ধান উৎপাদন কম হয়েছে।"
জেলায় ধানের ফলন কম চন্দ্রকোণার টকাহেদুয়া গ্রামে ধান ঝাড়ার কাজ চলছে। হয়েছে বলে মানছেন জেলার কৃষি ও সেচ কর্মাধ্যক্ষ আশিস হুতাইতও। তিনিও মৃদুলবাবুর সঙ্গে একমত পোষণ করে বলেন, "প্রাকৃতিক দুর্যোগের ফলে জেলায় ধান উৎপাদন অনেকটাই কম হয়েছে। সবচেয়ে বেশি প্রভাব পড়েছে ঘাটাল মহকুমার সবকটি ব্লকে। প্রায় ২৭ হাজার হেক্টর কৃষিজমি নষ্ট হয়েছে ঘাটাল মহকুমায়। স্বভাবতই জেলায় আমন ধান উৎপাদন কম হয়েছে। তার ফলে যে জেলায় খাদ্যের ঘাটতি হবে, তা কিন্তু নয়।"
জেলা কৃষি দপ্তর সূত্রে জানা গিয়েছে, চলতি বর্ষে জেলায় প্রায় তিন লক্ষ ৮০ হাজার হেক্টর জমিতে আমন ধানচাষ হয়েছিল। ধান উৎপাদন হয়েছে ১৩ লক্ষ মেট্রিক টনের কাছাকাছি। সাধারণত জেলায় প্রতি বছর গড় ধান উৎপাদন হয়ে থাকে ১৮ থেকে ১৯ লক্ষ মেট্রিক টনের কাছাকাছি। ২০২২-২৩ অর্থবর্ষে জেলায় ধান উৎপাদন হয়েছিল ১৯ লক্ষ ৪৫ মেট্রিক টন। আবার ২০২১-২২ সালে ধান উৎপাদন হয়েছিল ১৪ লক্ষ ৯২ মেট্রিক টন। সেবার জেলায় ঘাটাল- সহ বেশ কয়েকটি ব্লকে বন্যাজনিত কারণে ধান উৎপাদন কম হয়েছিল। গত বছরও ধানের উৎপাদন হয়েছিল ১৮ লক্ষ মেট্রিক টনের কাছাকাছি। চলতি বছরে জেলায় আমন ধান উৎপাদন হয়েছে প্রায় ১৩ লক্ষ মেট্রিক টন। গত বছরের তুলনায় পাঁচ লক্ষ মেট্রিক টন ধান উৎপাদন কম।
পশ্চিম মেদিনীপুর জেলায় প্রধান ফসল হল আমন ধান। ধান উৎপাদনে জেলার মধ্যে ঘাটাল, দাসপুর, গড়বেতা, কেশপুর, ডেবরা, পিংলা, সবং, নারায়ণগড় প্রভৃতি ব্লক এগিয়ে। চলতি বছরে ঘাটাল মহকুমায় বন্যা ও 'ডানা' ঘূর্ণিঝড়ের দাপটে ২৭ হাজার ২২ হেক্টর জমির ধানচাষ নষ্ট হয়েছে বলে ঘাটাল মহকুমা কৃষি দপ্তর জানিয়েছে। সেইসঙ্গে কেশপুরের কিছু জায়গা ও ডেবরা ব্লকেও কৃষিজমি নষ্ট হয়েছে অতিবর্ষণ ও বন্যায়। তার উপর 'ডানা' ঘূর্ণিঝড়ে পাকা ধানে মই দিয়ে ধান উৎপাদনের দফারফা করে ছেড়েছে।
তার ফলে সামগ্রিকভাবে জেলায় ধান উৎপাদনে ব্যাপক প্রভাব পড়েছে বলে মনে করছে জেলা কৃষিদপ্তর। ধান উৎপাদন কম হলেও জেলায় খাদ্যের কোনও ঘাটতি হবে না বলে দাবি করেছেন জেলার কৃষি কর্মাধ্যক্ষ আশিস হুতাইত। তিনি বলেন, "জেলায় প্রাকৃতিক দুর্যোগ সত্ত্বেও যে পরিমাণ ধান উৎপাদন হয়েছে, তার পুরো কৃতিত্ব জেলার ধান চাষিদের। আমি তাঁদের ধন্যবাদ জানাব, এত দুর্যোগ সত্ত্বেও ধান উৎপাদন করে তাঁরা আমাদের মুখ রক্ষা করেছেন। আমি তাঁদের কাছে কৃতজ্ঞ।"