আর্জেন্টিনা: ০
ক্রোয়েশিয়া: ৩ (রেবিচ, মদ্রিচ, রাকিতিচ)
সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: মেসির ভাগ্যটাই খারাপ। নাকি বলা ভাল দেশের জার্সি গায়ে মেসির ভাগ্যটা খারাপ। নাহলে অন্তত এভাবে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে ম্যাচ হাতছাড়া হতে দেখতে হত না। আইসল্যান্ডের বিরুদ্ধে ভাগ্যদেবী সহায় হননি ঠিকই, কিন্তু এবারও কি একই কথা বলা চলে? যাঁর কাঁধে দেশকে একটা বিশ্বকাপ এনে দেওয়ার দায়িত্ব, কোথায় তাঁর জাদু? ম্যাজিকের ছিটেফোঁটাও যে নেই। উলটে গোটা দুনিয়াকে অবাক করে রাশিয়া বিশ্বকাপ থেকে ভ্যানিশ হওয়ার মুখে অন্যতম ফেভরিটরা!
[অনন্য নজির এমবাপের, পেরুকে হারিয়ে বিশ্বকাপের নক-আউটে ফ্রান্স]
ম্যাচের বয়স তখন ৬০ মিনিট। গ্যালারিতে দাঁতে নখ কাটছেন দিয়েগো মারাদোনা। এক গোলে পিছিয়ে দুশ্চিন্তা আর অশুভ আশঙ্কায় তখন মারাদোনার সঙ্গে মুখ শুকিয়েছে আর্জেন্টিনা ভক্তদেরও। কোন দিকে গড়াচ্ছে ম্যাচ? কী লেখা রয়েছে সাম্পাওলির দলের ভাগ্যে? ভাবতে ভাবতেই খেলায় সমতা ফেরানোর সুবর্ণ একটা সুযোগ এসেছিল। হিগুয়েনের বাড়ানো বল এক টাচে মেসি জালে ভরে দিলেই কেল্লা ফতে। কিন্তু নাহ। মেসির যে ভাগ্যটাই খারাপ। আর তাঁর সঙ্গে ভাগ্য খারাপ গোটা বিশ্বের ফুটবলপ্রেমীদের। যাঁরা মেসি ম্যাজিক দেখার প্রহর গুনছিলেন প্রতিনিয়ত। তাঁদের কিছুই দিতে পারলেন না ফুটবলের রাজপুত্র। উলটে জুটল একরাশ হতাশা। মাথার উপর যেন আকাশ ভেঙে পড়ল। আর সেই সঙ্গে কঠিন হল টুর্নামেন্টের শেষ ষোলোয় পৌঁছানোর রাস্তা।
গত ম্যাচে আইসল্যান্ডের ডিফেন্সে ক্ষত-বিক্ষত হতে হয়েছিল এলএম টেনকে। মেসিকে ব্লক করতে রক্ষণে নেমে এসেছিলেন আটজন। সেই গণ্ডি পেরনো সম্ভব হয়নি। কিন্তু এদিন প্রথমার্ধের ছবিটা তেমন ছিল না। বিপক্ষ ডেরায় ঢুকে পড়ার অনেকটা ফাঁকা জায়গা পেয়েছিলেন আর্জেন্টাইন অধিনায়ক। কিন্তু দুর্ভাগ্য, উইংয়ের সাপলাই লাইনই তো বন্ধ। মেসি-অ্যাগুয়েরোকে বল বাড়ানোর কেউ নেই। ডি মারিয়াকে বসিয়ে পেরেজকে দলে নিয়েও কিছুই পালটাতে পারলেন না সাম্পাওলি। তার মধ্যেও দারুণ সুযোগ তৈরি করেও ফিনিশ করতে পারলেন না পেরেজ, অ্যাগুয়েরোরা। উলটোদিকে ক্রোয়েশিয়ার ডিফেন্স এবং ফরোয়ার্ড লাইন, দুয়ের প্রদর্শনই দুর্দান্ত। প্রথমার্ধে রাকিতিচ এবং মান্ডজুকিচের প্রায় নিশ্চিত গোল হাতছাড়া না হলে আরও বেশি লজ্জায় পড়তে হত মেসিদের।
[দল গোল করতেই পোশাক খুললেন ফুটবলপ্রেমী, ভাইরাল ছবি]
ক্রোয়েশিয়ার আরও একটি কারণে প্রশংসা প্রাপ্য। এক গোলে এগিয়ে গিয়েও একবারের জন্যও আক্রমণের ঝাঁজ কমায়নি। প্রথমার্ধে ফুটবলের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলে ফাউলের খেলা। তবে দ্বিতীয়ার্ধে খেলার গতি বাড়ে। আর্জেন্টাইন গোলকিপারের ভুলে দুর্দান্ত ভলিতে প্রথমে বল জালে জড়ান রেবিচ। মেসিকে ব্লক করার চেয়েও তাঁরা নিজেদের আক্রমণেই যেন তখন বেশি মন দিয়েছিলেন। আর তাই সাফল্য এল আরও দুবার। পরস্পরের মধ্যে অসামান্য বোঝাপড়াই কাজে দিল। আর্জেন্টাইন রক্ষণভাগকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে, রীতিমতো বোকা বানিয়ে গোল করলেন মদ্রিচ ও রাকিতিচ। সব মিলিয়ে গোটা ম্যাচে দাপিয়ে খেললেন ক্রোট ফুটবলারা। আর সেই সঙ্গে টুর্নামেন্টের শেষ ষোলোয় পৌঁছে গেল ক্রোয়েশিয়া।
একদিকে যখন চওড়া হাসি দালিচের মুখে, তখন ম্যাচ শেষ হতেই মেসিদের মাঠ ছাড়ার আগেই ড্রেসিং রুমের দিকে দৌড় দিলেন সাম্পাওলি। শেষ ষোলোয় পৌঁছাতে গেলে নাইজেরিয়াকে হারালেই হবে না, অন্য দলের ফলাফলগুলির দিকেও তাকিয়ে থাকতে হবে মারাদোনার দেশকে। গতদিন সাংবাদিক সম্মেলনে হারার আগেই একপ্রকার হার স্বীকার করে নিয়েছিলেন তিনি। এদিন কী ব্যাখ্যা দেবেন কোচ? মেসিই বা হতাশা কাটাবেন কী করে? ভেবে পাচ্ছেন না সমর্থকরাও।
The post মেসিদের নিয়ে ছেলেখেলা করলেন ক্রোটরা, লজ্জার হার আর্জেন্টিনার appeared first on Sangbad Pratidin.