সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: চল্লিশ পেরোলেই চালশে! আলসে মানুষের অজুহাত হতে পারে। কিন্তু যিনি সাফল্যের সরণিতে কুড়ি-কুড়ি বছর পার করে দেন, তাঁর জন্য নয়। চল্লিশ বছরে পা দিলেন ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডো। বয়স? সেটা তো একটা সংখ্যা মাত্র। ক্যালেন্ডারের পাতা উলটে যায় বড় জোর। আসলে এখনও বছর কুড়ির তরুণদের বলে বলে গোল দিতে পারেন সিআর৭। শক্তি, গতি, ক্ষীপ্রতা, গোল চেনার দক্ষতা আর চ্যাম্পিয়নের মানসিকতা- আজও একই ভাবে রোনাল্ডোর ইউএসপি।
না, বয়সকে ধরে রাখা যায় না। সে তার আপন গতিতে বাড়তে থাকে। একই ভাবে বাড়ে রোনাল্ডোর রেকর্ডের সংখ্যা। উদাহরণ চাই? ৩০ বছরের আগে তাঁর গোল সংখ্যা ৪৪৩। আর সেখানে গত দশ বছরে গোল ৪৬০। শুধু এই সংখ্যক গোলই বিশ্বের বহু তাবড় তাবড় স্ট্রাইকারের নেই। আর এখানে তো থামার কথা নয়। আল নাসের বা পর্তুগালের ম্যাচ মানে চোখ বন্ধ করা বলা যায়, গোল আসতে চলেছে রোনাল্ডোর পা থেকে। ও, শুধু পা নয়, হেড থেকেও। পরিসংখ্যান বলছে, শুধু ১৫৩টি গোল রয়েছে হেডে। বলার অপেক্ষা রাখে না যে, এটাও একটা রেকর্ড।
ঠিক এভাবেই তিনি পৌঁছেছেন ৯২৩টি গোলে। ৯২৪, ৯২৫, ৯২৬... ১০০০ গোল। সময়ের অপেক্ষা। ৪০ বছরে পা দিয়ে সেটাই প্রাথমিক লক্ষ্য হতে পারে। সম্প্রতি ক্লাব ফুটবলে ৭০০ জয়ের রেকর্ড গড়েছেন সিআর৭। সেটাও আরও বাড়তে থাকবে। কিন্তু রোনাল্ডো নিজেই ঘোষণা করেছেন, সংখ্যাটা ১০০০ হোক বা ৯২৩-এই থেমে যাক, তিনি বিশ্বের সবচেয়ে পরিপূর্ণ ফুটবলার। সম্প্রতি একটি সাক্ষাৎকারে ৫ বারের ব্যালন ডি'ওর জয়ী বলেছেন, “আমিই সর্বকালের সেরা প্লেয়ার। এটা আমি বিশ্বাস করি।" এই আত্মবিশ্বাসটাই পার্থক্য গড়ে দেয়। বহু তারা একা একা ঝড়ে যায়। কিন্তু তিনি যুদ্ধক্ষেত্রে দাঁড়িয়ে থাকেন কবচকুণ্ডল পরে।
পর্তুগালের মাদেইরার দরিদ্র পরিবারে বড় হয়ে ওঠা। আর্থিক অনটনের সঙ্গে নিত্য লড়াই করতে করতেই এই বর্ম শরীরে ধারণ করেছেন। কেউ বলেন 'মনস্টার মেন্টালিটি', অনেকে হিংসাও করেন। কিন্তু এই যোদ্ধাসুলভ মানসিকতা আছে বলেই পিতার মৃত্যুর পরও লড়াই থেকে সরেন না। কিংবা সন্তানের প্রয়াণের পর নামেন লিভারপুলের বিরুদ্ধে যুদ্ধে। উঠে দাঁড়িয়ে কুর্নিশ জানানো ছাড়া আর কীই বা করার থাকে আপামর ফুটবল ভক্তদের।
আর সেই জন্যই গগনচুম্বী সাফল্যে থাকতেই রিয়াল মাদ্রিদ ছেড়ে যোগ দেন ইটালির জুভেন্টাসে। সমালোচনায় মুখর হন ম্যাঞ্চেস্টার ইউনাইটেডের সার্বিক পরিকাঠামোর। আর সেই বিশ্লেষণ যে সত্যি, তা ওই বিস্ফোরক ইন্টারভিউয়ের দুবছর পরও ভালো মতো টের পাওয়া যাচ্ছে। অথচ যখন দ্বিতীয়বার রেড ডেভিলসের জার্সি পরে নেমেছিলেন, তখন পিটার ড্রুরি বলে উঠেছিলেন, 'মাদেইরা, ম্যাঞ্চেস্টার, মাদ্রিদ, তুরিন অ্যান্ড ম্যাঞ্চেস্টার এগেইন।' সত্যিই তো 'আ ওয়াকিং ওয়ার্ক অফ আর্ট'।
সেই রিইউনাইটেড অবশ্য সুখের হয়নি। সেখান থেকে সকলকে চমকে দিয়ে চলে আসেন সৌদি আরবের ক্লাব আল নাসেরে। তখনও বোঝা যায়নি, এই ঘটনার প্রভাব কতদূর বিস্তৃত হতে পারে। একে একে সৌদির পথ ধরেছেন করিম বেঞ্জিমা, নেইমার, সাদিও মানের মতো তারকারা। আর রোনাল্ডোর সৌদিযাত্রার দুবছরের মধ্যেই ফিফার বিরাট ঘোষণা। ২০৩৪-র বিশ্বকাপ আয়োজিত হবে সৌদি আরবে।
এ তো গেল ভবিষ্যতের কথা। অতীত যে তাঁকে মনে রেখেছে, তার প্রমাণ রিয়াল মাদ্রিদ। স্পেনের ক্লাবের জার্সিতে সর্বোচ্চ গোলদাতা তিনি। লস ব্ল্যাঙ্কোসদের হয়ে ৪৫০ গোল রয়েছে তাঁর। মোট পাঁচটি চ্যাম্পিয়ন্স লিগের মধ্যে চারটি মাদ্রিদের হয়ে। সোশাল মিডিয়ায় ক্লাবের পক্ষ থেকে লেখা হয়েছে, ‘প্রিয় ক্রিশ্চিয়ানো, রিয়াল মাদ্রিদের পক্ষ থেকে তোমার ৪০ তম জন্মদিনে উষ্ণ শুভেচ্ছা জানাই। তোমার মতো কিংবদন্তিকে নিয়ে মাদ্রিদের সমর্থকরা গর্বিত। আমাদের ইতিহাসে তোমার অবদান অবিস্মরণীয়। তুমি আর তোমার পরিবারের দিনটা ভালো কাটুক’।
মাদ্রিদের সাদা জার্সির রাজকীয়তা থেকে পর্তুগালের অধিনায়ক, রেকর্ড তাঁর পায়ে পায়ে ঘোরে। চ্যাম্পিয়ন্স লিগে সর্বোচ্চ গোলদাতা তিনি (১৪০)। ১৩৫টি গোল করে আন্তর্জাতিক ফুটবলে সর্বোচ্চ গোলদাতা। আবার সিআর৭ সবচেয়ে বেশি আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলা ফুটবলার (২১৭)। ইউরো কাপের ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি গোল রয়েছে তাঁর নামে (১৪)। ২০১৮-র বিশ্বকাপে স্পেনের বিরুদ্ধে হ্যাটট্রিক করেছিলেন তিনি। যা বিশ্বকাপের ইতিহাসে প্রবীণতম হিসেবে হ্যাটট্রিক (৩৩ বছর ১৩০ দিন)।
বয়স তাঁর চোখের কোণায় যতই ত্রিকোণামিতি খেলুক না কেন, তা ফুটবলার রোনাল্ডোকে আরও পরিপূর্ণতা দান করেছে। ধরে নেওয়া যাক, চল্লিশে সবে শুরু। পায়ে পায়ে আরও রেকর্ডের অভিযানে নামবেন সিআর৭। আকাশে লাফ দিয়ে দুহাত ছড়িয়ে নেমে আসবেন মানুষের পৃথিবীতেই।