সুনীপা চক্রবর্তী, ঝাড়গ্রাম: এ যেন অনেকটা 'বাঘবন্দি খেলা'। ভিনরাজ্য থেকে বাংলা সীমানায় ঢুকে পড়া রয়্যাল বেঙ্গল টাইগারকে বন্দি করতে কোন কসুর ছাড়ছে না বনদপ্তর। গাছে বাঁধা টোপ নিমেষে শিকার করে নিয়ে পালিয়েছিল বাঘিনী জিনাত। এবার তাকে ধরতে জঙ্গলে বসল বিশেষ খাঁচা। ১০ থেকে ১২ ফুট চওড়া তাঁবুর আকারে ওই খাঁচাটি আসলে গাছের ডাল, লতাপাতা দিয়ে ঘেরা ছোটখাটো একটা ঝোপের মতো। সামনে খোলা রাস্তা। ভিতরে রয়েছে টোপ হিসেবে মহিষ শাবক। টোপ ধরতে একবার রাস্তা দিয়ে হেঁটে ভিতরে ঢুকলেই অটোমেটিক খাঁচার গেট বন্ধ হয়ে যাবে আর বাঘিনী হবে খাঁচাবন্দি। এই কৌশলে ক্ষিপ্র বাঘিনীটিকে ধরতে মরিয়া ঝাড়খণ্ডের পূর্ব সিংভূম জেলার বনদপ্তর।
ঘুমপাড়ানি বন্দুক হাতে তৈরি বনদপ্তরের কর্মীরা। নিজস্ব ছবি।
বনদপ্তরের চারজন বিশেষজ্ঞ লোহার ঘেরাটোপ যুক্ত গাড়িতে নির্দিষ্ট দূরত্ব থেকে লক্ষ রাখছেন, বাঘিনী আদৌ খাঁচায় ঢুকছে কিনা। ঘাটশিলা মহকুমার চাকুলিয়া রেঞ্জের চিঁয়াবান্ধি জঙ্গলে বিশেষজ্ঞ বনকর্মী ছাড়া এই মুহূর্তে কারও প্রবেশ নিষেধ। এই জঙ্গল থেকে আধ কিলোমিটারের মধ্যে একটি আনন্দমার্গীদের স্কুল রয়েছে। তা গত তিনদিন ধরে বন্ধ রাখা হয়েছে প্রশাসনের নির্দেশে। ওই এলাকায় ভারতীয় ন্যায় সংহিতার ১৬৩ ধারা জারি করা হয়েছে। পাশাপাশি চলছে মাইকিংও।
শনিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত বনদপ্তর সূত্রে জানা গিয়েছে, বাঘিনীটি রাজাবাসা, চিঁয়াবান্ধির যে টানা পাঁচ থেকে ৬ কিমি জঙ্গল রয়েছে সেখানেই আছে এবং জঙ্গলের পশু শিকার করে খাচ্ছে। এদিন শনিবার সন্ধ্যায় ঝাড়গ্রাম বনদপ্তর সূত্রে জানা গিয়েছে বাঘিনীটি রাজাবাসা জঙ্গলের দিকে রয়েছে। যেটা ঝাড়গ্রাম জেলার জামবনি ব্লকের গিধনি রেঞ্জের ঝাড়খণ্ড সীমানা থেকে প্রায় দশ কিলোমিটার দূরে। বাঘটির অভিমুখ শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত ওড়িশার দিকে বলে জিপিএসের মাধ্যমে জানা যাচ্ছে। তবে বাঘিনীটি অনবরত নিজের অবস্থান পরিবর্তন করছে। জিপিএসের পাশাপাশি ড্রোন উড়িয়েও জিনাতের গতিবিধি বোঝার চেষ্টা চলছে বলে স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে। এখন প্রশ্ন একটাই, এই বাঘবন্দি খেলা চলবে আর কতদিন? এনিয়ে রাজ্যের বনমন্ত্রী বীরবাহা হাঁসদা বলেন, "বাঘ ঝাড়খণ্ডেই আছে। বাংলার সীমানা থেকে অনেকটাই দূরে। আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। বনদপ্তর সতর্ক নজর রাখছে।"