সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: বলিউডের বর্ষীয়ান অভিনেতা প্রেম চোপড়া (Prem Chopra) ভুগছিলেন হৃদযন্ত্রের এক জটিল সমস্যায়। হঠাৎ করে বুকে ব্যথা হওয়ায় নভেম্বরের প্রথম দিকেই ভর্তি হয়েছিলেন মুম্বইয়ের লীলাবতী হাসপাতালে। সমস্যা ছিল বেশ গুরুতর। খবরটা শুরুতে প্রকাশ্যে না এলেও, সম্প্রতি তাঁর জামাই শরমন জোশি ইনস্টাগ্রামে পোস্ট করে বিষয়টা জানান। প্রেম চোপড়া ভুগছিলেন 'সিভিওর অ্যাওর্টিক স্টেনোসিস' (Severe Aortic Stenosis) ডিজিজে। সফল অস্ত্রোপচারের পর এখন তিনি সম্পূর্ণ সুস্থ। হাসপাতালে ভর্তির এক সপ্তাহ পর ১৫ নভেম্বর তিনি বাড়ি ফেরেন। ৯০ বছর বয়সী এই প্রবীণ অভনেতা এখন সম্পূর্ণ সুস্থ। এমনটাই জানাচ্ছেন অভিনেতা শরমন। কিন্তু কী এই 'সিভিওর অ্যাওর্টিক স্টেনোসিস'? তা কি জানেন?
অ্যাওর্টিক স্টেনোসিস হল হৃদপিণ্ডের অ্যাওর্টিক কপাটিকা বা ভালভের একটি সমস্যা। এই কপাটিকা বাম নিলয় এবং মহাধমনীর মাঝে অবস্থিত। এর প্রধান কাজ হল রক্তকে হৃদপিণ্ড থেকে পাম্প করে সারা শরীরে পৌঁছে দেওয়া। স্টেনোসিস হলে এই ভালভটি শক্ত ও সঙ্কুচিত হয়ে যায়। ফলে ভালভের মুখ সরু হয়ে যায়। এতে রক্ত প্রবাহ বাধা পায়। এই কারণে হৃদপিণ্ডকে রক্ত বের করার জন্য অতিরিক্ত চাপ দিতে হয়। দীর্ঘকাল ধরে এই চাপ চলতে থাকলে হৃদপিণ্ডের কার্যক্ষমতা কমতে শুরু করে।
কেন হয় এই রোগ?
এই রোগের প্রধান ৩টি কারণ দেখা যায়। প্রথমত, বয়সজনিত পরিবর্তন। এটিই সবচেয়ে সাধারণ কারণ। বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ভালভের উপর ক্যালসিয়াম এবং অন্যান্য পদার্থ জমা হতে থাকে। এতে ভালভ শক্ত হয়ে যায়। দ্বিতীয়ত, জন্মের সময় কপাটিকার ত্রুটি। জন্মগতভাবে ভালভটিতে তিনটি কুসুমের বদলে দুটি কুসুম থাকলে এই সমস্যা দেখা যায়। তৃতীয়ত, রিউম্যাটিক ফিভারের ইতিহাস। ছোটবেলায় রিউম্যাটিক ফিভার হলে এই কপাটিকা ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।
শুরুর দিকে রোগীর কোনও লক্ষণ নাও থাকতে পারে। কিন্তু স্টেনোসিস গুরুতর হলে সাধারণত এই লক্ষণগুলি দেখা যায়।
১) পরিশ্রমের সময় বুকে চাপ বা ব্যথা অনুভূত হওয়া।
২) সামান্য পরিশ্রমে অথবা শুয়ে থাকলে শ্বাস নিতে কষ্ট হওয়া।
৩) রক্ত প্রবাহ কমে যাওয়ার ফলে হঠাৎ মাথা ঘোরা বা জ্ঞান হারানোর মতো ঘটনা ঘটতে পারে।
৪) এছাড়াও দ্রুত শারীরিক দুর্বলতা এবং ক্লান্তি দেখা দিতে পারে।
চিকিৎসা কীভাবে করবেন?
সিভিওর অ্যাওর্টিক স্টেনোসিসের একমাত্র নিশ্চিত চিকিৎসা হল ভালভ রিপ্লেসমেন্ট। দুটি পদ্ধতিতে এটি করা যেতে পারে।
১) সার্জিক্যাল অ্যাওর্টিক ভালভ রিপ্লেসমেন্ট (SAVR): এটি একটি প্রচলিত ওপেন-হার্ট সার্জারি।
২) ট্রান্সক্যাথেটার অ্যাওর্টিক ভালভ ইমপ্ল্যান্টেশন (TAVI): এটি তুলনামূলকভাবে নতুন এবং কম ঝুঁকিপূর্ণ পদ্ধতি। প্রবীণ বা অন্য জটিলতাযুক্ত রোগীদের জন্য এটি অত্যন্ত কার্যকর।
লক্ষণ দেখা দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই দ্রুত একজন হৃদরোগ বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেওয়া উচিত। সময়মতো ও সঠিক চিকিৎসা করালে রোগী সুস্থ হয়ে সম্পূর্ণ স্বাভাবিক জীবন ফিরে পেতে পারেন।
