নিজস্ব সংবাদদাতা: বাংলাদেশে ইসকনে নিষেধাজ্ঞা চেয়ে ঢাকার পথে হেফাজতে ইসলামের বিক্ষোভ সমাবেশ। ইসকনের নামে নাকি আওয়ামি লিগ ফের নতুন করে আসার চেষ্টা করছে। এমনই দাবি করেছেন হেফাজতের নায়েব আমির আহমদ আলি কাসেমি। শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর থেকেই বাংলাদেশে বিপন্ন হিন্দুরা। সংখ্যালঘুদের উপর অত্যাচার লাগামছাড়া বেড়ে গিয়েছে। এর মাঝেই গ্রেপ্তার হয়েছেন ইসকনের সন্ন্যাসী চিন্ময় কৃষ্ণ দাস। যা নিয়ে কড়া বার্তা দিয়েছে ভারত।
এক সময় হাসিনার বন্ধু হিসাবেই পরিচিত ছিল হেফাজতে ইসলাম। কিন্তু গণঅভ্যুত্থানে আওয়ামি সরকারের পতনের পর মাথাচারা দিয়ে উঠেছে হেফাজতের কট্টরপন্থীরা। ইসকনকে নিষিদ্ধের দাবিতে আজ শুক্রবার ঢাকায় বিক্ষোভ সমাবেশের ডাক দেয় হেফাজতে। পাশাপাশি চট্টগ্রামে তরুণ আইনজীবী সাইফুল ইসলাম আলিফ হত্যার প্রতিবাদও জানানো হয়। এদিন হেফাজতের নায়েব বলেন, "ইসকন কোনও হিন্দু সংগঠন নয়, একটি জঙ্গি সংগঠন। ভারত এই দেশকে বিপথগামী করার চেষ্টা করছে, সেটা সফল হতে দেওয়া যাবে না। এখনও পর্যন্ত কোনও হিন্দু ভাইদের গায়ে ফুলের টোকাও পড়েনি।" হেফাজতের মতোই বিভিন্ন মৌলবাদী সংগঠন ইসকনকে নিষিদ্ধের দাবিতে বিক্ষোভ দেখাচ্ছে।
গত ২৫ নভেম্বর বিকেলে চিন্ময় প্রভুকে ঢাকার বিমানবন্দর এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশ। ২৬ তারিখ চট্টগ্রামের আদালতে তোলা হয় তাঁকে। শুনানি শেষে জামিন খারিজ হয় এই হিন্দু সন্ন্যাসীর। চিন্ময়কে আদালতে পেশের আগে থেকেই ভিড় জমতে শুরু করেছিল আদালত চত্বরে। জামিন খারিজ হতেই গোটা এলাকা রণক্ষেত্রের চেহারা নেয়। প্রিজন ভ্যান আটকে চলতে থাকে বিক্ষোভ। হিন্দুদের বিক্ষোভ থামাতে লাঠিচার্জের পাশাপাশি সাউন্ড গ্রেনেড ছোড়ে পুলিশ। উত্তাল এই পরিস্থিতিতে মৃত্যু হয় চট্টগ্রামে সহকারী পাবলিক প্রসিকিউটর (এপিপি) সাইফুল ইসলামের। এর মাঝেই ইসকনকে নিষিদ্ধের দাবিতে সুপ্রিম কোর্টের অ্যাডভোকেট মনিরুজ্জামান বুধবার বিচারপতি ফারাহ মাহবুব ও বিচারপতি দেবাশিস রায় চৌধুরীর হাই কোর্ট বেঞ্চে রিট পিটিশন দাখিল করেন। কিন্তু সেই মামলা খারিজ হয়ে যায় আদালতে।
হিন্দুদের উপর লাগাতার নির্যাতন, চিন্ময় কৃষ্ণ দাসের গ্রেপ্তারি, ইসকনকে নিষিদ্ধ করার আবেদন- নানা কারণে অগ্নিগর্ভ হয়ে উঠেছে বাংলাদেশের পরিস্থিতি। যেভাবে প্রত্যেক দিন আঘাত নেমে আসছে সংখ্যালঘু হিন্দুদের উপর, সেই নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করছে ভারত, ব্রিটেন। প্রতিবেশী দেশের উত্তপ্ত পরিস্থিতি নিয়ে বিদেশমন্ত্রী এস জয়শংকরের সঙ্গে বৈঠকে বসেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। এহেন পরিস্থিতিতে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে বাংলাদেশকে আরও একবার রাষ্ট্রীয় কর্তব্য মনে করিয়ে দিলেন ভারতের বিদেশমন্ত্রকের মুখপাত্র রণধীর জয়সওয়াল। তিনি বলেন, বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তার দায়িত্ব নিতে হবে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকেই। যেভাবে বাংলাদেশে চরমপন্থী ভাবধারা ছড়িয়ে পড়ছে, ভারত তা নিয়ে উদ্বিগ্ন। সংখ্যালঘুদের সুরক্ষিত রাখতে বাংলাদেশ সরকার যেন উপযুক্ত পদক্ষেপ করে।