নন্দিতা রায়, নয়াদিল্লি: দিল্লির আমলাতন্ত্রের রাশ নিয়ে তুঙ্গে কেন্দ্র বনাম কেজরি সরকারের লড়াই। দেশের শাসকদলকে ঘিরে ফেলতে আসরে নেমেছে বিরোধী জোট ‘ইন্ডিয়া’ও। সংসদে মোদি সরকারের অধ্যাদেশ বাণ ভোঁতা করতে হুইপ জারি করেছে কংগ্রেস-সহ অন্যান্য দল। এই প্রেক্ষাপটেই আজ মঙ্গলবার লোকসভায় দিল্লি অর্ডিন্যান্স পেশ করবেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ।
গতকালই লোকসভায় বিতর্কিত অধ্যাদেশটি পেশ হওয়ার কথা ছিল। তবে সদন মুলতুবি হয়ে যাওয়ায় তা হয়নি। আজ সেটি সদনের কর্মসূচিতে লিস্টেড হয়েছে। জানা গিয়েছে, সরকারকে ঘিরে ধরার রণকৌশল নিলেও আজ Government of National Capital Territory of Delhi (Amendment) Bill-টি নিয়ে আলোচনায় অংশ নেবেন বিরোধী সাংসদরা। কারণ, সংসদের নিম্নকক্ষে নিরঙ্কুশ হওয়ায় হট্টগোলের মাঝেই প্রায় বিনা আলোচনায় অতীতে বেশ কয়েকটি বিল পাশ করিয়েছে মোদি সরকার। এবারও তেমনটা হোক, চায় না বিরোধী ইন্ডিয়া জোট। তবে লোকসভায় অর্ডিন্যান্সটি পাশ করাতে সরকারের কোনও সমস্যা হবে না। পরিসংখ্যান বলছে, বিরোধীদের কৌশল হবে রাজ্যসভায় সরকারকে ঘিরে ধরা। তবে উচ্চকক্ষেও বিলটি পাশ করানো নিয়ে আত্মবিশ্বাসী কেন্দ্র।
জানা গিয়েছে, যে বিলটি সরকারপক্ষ সংসদে আনতে চলেছে তাতে অধ্যাদেশের কিছু অংশ পরিবর্তন করা হয়েছে। কেন্দ্রীয় সরকার ৩-এ এবং ৪৫-ডি ধারায় গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন করেছে। ধারা ৩-এ, যা অধ্যাদেশের অংশ ছিল, প্রস্তাবিত বিল থেকে সম্পূর্ণরূপে মুছে ফেলা হয়েছে। আবার বিলে নতুন বিষয়ও যুক্ত হয়েছে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ সংসদে বিলটি পেশ করতে পারেন।
সূত্রের খবর, লোকসভায় বিলের উপর আলোচনায় অংশ নিয়ে তৃণমূলের দলনেতা সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় ও দলের বর্ষীয়ান সাংসদ সৌগত রায় বক্তব্য রাখতে পারেন। রাজ্যসভায় দলনেতা ডেরেক ও’ব্রায়েন-সহ অন্যান্য দলের পক্ষ থেকে আরও একজন বক্তব্য রাখবেন বলেই ঠিক হয়েছে।
[আরও পড়ুন: সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল ভালবাসার ঘনিষ্ঠ মুহূর্ত, লজ্জায় আত্মঘাতী দুই কলেজ পড়ুয়া!]
মণিপুর নিয়ে উত্তাল সংসদে ইন্ডিয়া জোটের সাংসদরা প্রধানমন্ত্রীর বিবৃতির দাবিতে অনড় অবস্থান গ্রহণ করায় এখনও পর্যন্ত কোনও বিলের উপরেই আলোচনায় অংশ গ্রহণ করেনি। কিন্তু দিল্লি অর্ডিন্যান্স বিলের উপরে আলোচনায় লোকসভা এবং রাজ্যসভা-উভয় কক্ষেই তারা অংশ নেবে বলে ইন্ডিয়া জোটের বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়েছে।
বিলটির মাধ্যমে কেন্দ্র সরকার দিল্লির আমলাদের নিয়োগ এবং বদলি সংক্রান্ত বিষয়ের উপর নিয়ন্ত্রণ পেতে চাইছে বলে অভিযোগ উঠেছে। বিলটি নিয়ে প্রথম থেকেই বিরোধিতা করে আসছে আম আদমি পার্টি (আপ)। ইন্ডিয়া জোট তাদের পাশে দাঁড়ানোর সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে। কারণ তারা মনে করছে বিলটির মাধ্যমে কেন্দ্র সরকার যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোর উপর আঘাত হেনে রাজ্য বা কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের অধিকারে হস্তক্ষেপ করতে চাইছে।
উল্লেখ্য, এই অর্ডিন্যান্স সংক্রান্ত মামলা সুপ্রিম কোর্টের সাংবিধানিক বেঞ্চে বিচারাধীন। গত মাসে শীর্ষ আদালত জানিয়েছে, অধ্যাদেশটির সাংবিধানিক বৈধতা খতিয়ে দেখা হবে। সেই সঙ্গে যাচাই করা হবে, এ বিষয়ে সংসদের অধিকারের সীমাও। এই মণিপুর কাণ্ড ও বিতর্কিত বিলটি নিয়ে বাদল অধিবেশনে নতুন করে অশান্তি ছড়াতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।