ক্ষীরোদ ভট্টাচার্য: প্রকাশিত হল আইসিএমআরের চতুর্থ সেরো সার্ভে রিপোর্ট। যাতে কিছুটা হলেও স্বস্তিতে পশ্চিমবঙ্গ। রাজ্যের কত শতাংশ জনসংখ্যার মধ্যে গোষ্ঠী সংক্রমণ হয়েছে তা জানতে অতিসম্প্রতি সমীক্ষা করে ICMR (ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অফ মেডিক্যাল রিসার্চ)। রিপোর্ট বলছে গড়ে ৫৫ শতাংশের বেশি মানুষ ইতিমধ্যে কোভিড পজিটিভ। তবে কাঙ্খিত হার্ড ইমিউনিটি তৈরি হয়নি। এটা যেমন একটা দিক, আবার ডাক্তার, নার্স, স্বাস্থ্যকর্মীদের মধ্যে লাগামছাড়া সংক্রমণ হয়েছিল। তাঁদের মধ্যে কিন্তু গোষ্ঠী সংক্রমণ হয়েছে। ফলে করোনা ভাইরাসকে ঘিরে ভয় রয়েই গেল।
দেশের ৬৭.৭ শতাংশ জনগোষ্ঠীর মধ্যে হার্ড ইমিউনিটি তৈরি হয়েছে। তুলনায় পশিমবঙ্গের সেরো প্রেভিল্যান্স গড়ে ৬০.৯ শতাংশ। আইসিএমআরের চতুর্থ সমীক্ষা রিপোর্টে এমনটাই বলা হয়েছে। সেই সমীক্ষা রিপোর্টের মধ্যেই পশিমবঙ্গের পাঁচটি জেলাও ছিল। এই পাঁচটি জেলা হল আলিপুরদুয়ার, বাঁকুড়া, ঝাড়গ্রাম, কলকাতা লাগোয়া দক্ষিন ২৪ পরগনা এবং পূর্ব মেদিনীপুর। এই পাঁচটি জেলায় যথাক্রমে ৪০৮, ৪১১, ৪১০, ৪১৩ এবং ৪০১ জনকে স্যাম্পল সার্ভের আওতায় আনা হয়। রাজ্যের স্বাস্থ্য দপ্তরের প্রধান সচিব নারায়ণ স্বরূপ নিগমকে পাঠানো সেই রিপোর্ট অনুযায়ী যথাক্রমে, ৫৯.১, ৬৬.৭, ৫৪.১, ৬২.২ এবং ৫৩.৯ শতাংশ রিপোর্ট পজিটিভ এসেছে। যেখানে দেশের ৬৭.৭ শতাংশ বা দুই তৃতীয়াংশের মধ্যে স্বাভাবিক গোষ্ঠী সংক্রমন হয়েছে। অর্থাৎ দ্বিতীয় দফায় লাগামছাড়া সংক্রমণের পরেও পশিমবঙ্গে কিন্তু গোষ্ঠী সংক্রমন হয়নি। আর ঠিক এই কারনেই জন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ও প্রশাসনের তরফে মাস্ক ব্যবহারে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।
[আরও পড়ুন: Coronavirus: জলের দরে হোটেল ভাড়া! পর্যটক টানতে Digha-য় চালু ‘স্পেশ্যাল অফার’]
কলকাতার স্কুল অফ ট্রপিক্যাল মেডিসিনের ক্লিনিক্যাল ফার্মাকোলজির প্রাক্তন বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক তথা রাজ্যের কোভিড পরামর্শদাতা কমিটির সদস্য ডা. শান্তনু ত্রিপাঠির কথায়, “আইসিএমআরের এই দেশব্যাপী চতুর্থ সেরো সার্ভে রিপোর্ট নিঃসন্দেহে আশাব্যঞ্জক। ধীরে ধীরে আমরা গোষ্ঠী সংক্রমন বা হার্ড ইমিউনিটির দিকে এগিয়ে চলেছি। তবে এখন দরকার প্রদেশ স্তরে জেলা ভিত্তিক সেরো সার্ভিল্যান্স। এবং সেই মতো কোভিড বিধি ও নীতি নির্ধারন করা।”
আইসিএমআর-এর রিপোর্টে এই পাঁচটি জেলার স্বাস্থ্যকর্মীদের উপরও সমীক্ষা চালিয়েছে আইসিএমআর। সেই রিপোর্ট বলছে রাজ্যের স্বাস্থ্য কর্মীদের মধ্যে কিন্তু স্বাভাবিক গোষ্ঠী সংক্রমণ হয়েছে। আলিপুরদুয়ার (৮৮), বাঁকুড়া (৭৯), ঝাড়গ্রাম (৭২.৭), দক্ষিণ ২৪ পরগনা (৮২.৭) এবং পূর্ব মেদিনীপুর জেলায় (৭৮) শতাংশ স্বাস্থ্যকর্মী ইতিমধ্যেই করোনা পজিটিভ। করোনা সংক্রমিত হয়ে স্বাভাবিক প্রতিরোধ ক্ষমতা বা এন্টিবডি তৈরি হয়েছে। এখানে মনে রাখতে হবে, যাদের থেকে স্যাম্পল সংগ্রহ হয়েছে তাঁদের মধ্যে ৫ শতাংশ করোনার ভ্যাকসিন পেয়েছেন। এই সব তথ্য সংগ্রহ হয়েছে ৩১ মে পর্যন্ত। বিশেষজ্ঞদের অভিমত, করোনা সংক্রমিত বা পজিটিভ রোগীর কাছে থাকায় স্বাস্থ্যকর্মীদের সংক্রমণ যেমন বেড়েছে, আবার অ্যান্টিবডিও তৈরি হয়েছে।