shono
Advertisement

‘লুকিয়ে বাঁচা যাবে না’, মহম্মদকে নিয়ে মন্তব্যের পরই ভারতে হামলার হুমকি আল কায়দার

অভিযুক্ত বিজেপি নেতাদের গ্রেপ্তারির দাবি তৃণমূলের।
Posted: 08:55 AM Jun 08, 2022Updated: 09:24 AM Jun 08, 2022

বিশেষ সংবাদদাতা, নয়াদিল্লি: বিজেপির (BJP) ঘৃণাভাষণের জেরে দেশের সামনে ঘনিয়ে এসেছে বিপদ। আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে দেশের মুখ পুড়েছে তো বটেই, অর্থনৈতিক থেকে শুরু করে কূটনৈতিক ও নিরাপত্তা ক্ষেত্রেও প্রভূত ক্ষতির পরিস্থতি তৈরি হয়েছে। হজরত মহম্মদকে নিয়ে বিজেপি মুখপাত্র নূপুর শর্মার (Nupur Sharma) আপত্তিকর মন্তব্যের জেরে বহির্বিশ্ব থেকে ভারতের উপর চাপ বেড়েই চলেছে। পাশাপাশি এই মন্তব্যের জেরে দিল্লি, মুম্বই, উত্তরপ্রদেশ ও গুজরাটে আত্মঘাতী হামলার হুমকি দিল আল কায়দা।

Advertisement

৬ তারিখ এই জঙ্গি সংগঠনের তরফে প্রকাশ করা বিবৃতিতে এই আক্রমণকে ‘নবীর মর্যাদা রক্ষার লড়াই’ বলে উল্লেখ করা হয়েছে। হুমকি বার্তায় ‘আল কায়দা ফর সাব কন্টিনেন্ট’ লিখেছে – ‘‘দিল্লি, গুজরাট, উত্তরপ্রদেশ ও মুম্বইতে যে ‘হিন্দু সন্ত্রাসবাদী’রা রয়েছে তারা এখন মৃত্যুর প্রতীক্ষা করুক। বাড়িতে বা সেনাঘাঁটিতে লুকিয়ে তারা পার পাবে না। আল কায়দার যোদ্ধারা নিজেদের এবং শিশুদের শরীরে বিস্ফোরক বেঁধে হামলা চালাবে।’’ আল কায়দার এই হুমকি নিয়ে অবশ‌্য কেন্দ্রীয় সরকার কোনও প্রতিক্রিয়া দেয়নি। এই বিবৃতিকে আদৌ কোনও গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে কি না, তা স্পষ্ট নয়।

[আরও পড়ুন: কয়লা সংকটে জেরবার রেলও, জ্বালানির অভাবে বাতিল ১৯০০ ট্রেন]

তবে পশ্চিম এশিয়ার একাধিক দেশ, বিশ্বের প্রায় সমস্ত মুসলিম দেশ থেকেই বিজেপির বিরুদ্ধে চড়া সুরে সমালোচনা শোনা গিয়েছে। কাতার, ওমান, ইরাক, ইরান, কুয়েত, সৌদি আরব, জর্ডন, পাকিস্তান তো ছিলই, সুর চড়িয়েছে আফগানিস্তানও। তালিবান মুখপাত্র জাবিদুল্লাহ মুজাহিদ বিজেপি মুখপাত্রর বক্তব্য ধর্মীর গোঁড়ামির উদাহরণ হিসেবে উল্লেখ করে ভারত সরকারকে ইসলামের অপমান থেকে বিরত থাকা এবং মুসলিমদের ভাবাবেগের কথা মাথায় রাখার পরামর্শ দিয়েছে।

ইতিমধ্যেই ৫৭টি মুসলিম দেশের সংগঠন অর্গানাইজেশন অব ইসলামিক কো-অপারেশন এই ইস্যুতে প্রতিবাদ জানিয়েছে। বেশ কয়েকটি আরব দেশে ভারতীয় পণ্য বয়কট শুরু হয়ে গিয়েছে। ভারতের বিরোধিতা শুরু করেছে ছোট ছোট মুসলিম দেশগুলোও। যে সমস্ত দেশ সুর চড়িয়েছে তাদের মধ্যে প্রায় ৫০টিরও বেশি ইসলামিক দেশের সঙ্গে ভারতের সরাসরি কৌশলগত অংশীদারিত্ব এবং অর্থনৈতিক সম্পর্ক রয়েছে। নূপূরের মন্তব্যে সেই সম্পর্কে চিড় ধরেছে।

[আরও পড়ুন: মুর্শিদাবাদ পালানোর ছক বানচাল, নার্স স্ত্রীর হাত কেটে নেওয়ার ঘটনায় অবশেষে গ্রেপ্তার স্বামী]

১৯৯১ সালের উপসাগরীয় যুদ্ধের সময় ভারতে যে ধরনের পরিস্থিত তৈরি হয়েছিল, সাম্প্রতিক ঘটনায় তার পুনরাবৃত্তির সম্ভাবনা খারিজ করে দেওয়া যায় না। ইরাক থেকে তেল আমদানি বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। আবার মধ্যপ্রাচ্যে বসবাসকারী বিশাল ভারতীয় জনসংখ্যার সিংহভাগ দেশে ফিরে এসেছিল। ফলে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভও অনেক কমে গিয়েছিল। সবমিলিয়ে সেইসময় গভীর অর্থনৈতিক সংকটে পড়েছিল ভারত। বর্তমানে প্রায় ১ কোটি ভারতীয় মধ্যপ্রাচ্যে কাজ করেন। উপসাগরীয় এবং ইসলামিক দেশগুলি থেকে ভারতীয়দের ফেরত পাঠানো শুরু হলে সেই একই ধরনের অর্থনৈতিক সংকটে পড়বে দেশ। তেল ও গ্যাসের মতো জ্বালানির জন্য ভারত মধ্যপ্রাচ্যের উপর নির্ভরশীল। এবার আরব দেশগুলি কাশ্মীর ইস্যুতে পাকিস্তানের পাশে দাঁড়াবে, এমন আশঙ্কাও খারিজ করে দেওয়া যায় না।

অভিযুক্ত বিজেপির দু’জনের বিরুদ্ধে কেন কেন্দ্র কোনও ব্যবস্থা নিল না এই প্রশ্ন ছুঁড়ে তাঁদের গ্রেফতারির দাবি তুলল তৃণমূল কংগ্রেস। তৃণমূলের সর্বভারতীয় মুখপাত্র সুখেন্দুশেখর রায় বলেন, “বিজেপির দুই প্রতিনিধির বিরুদ্ধে প্রশাসনিক পদক্ষেপ কী নেওয়া হয়েছে? সরকার কী ব্যবস্থা নিয়েছে? ভারতীয় দণ্ডবিধির ১৫৩এ ধারায় বলতে পারি বর্বর মন্তব্য করা হয়েছে হজরত মহম্মদকে নিয়ে। একটি ধর্মীয় সম্প্রদায়ের অসংখ্য মানুষের আবেগকে আঘাত করা হয়েছে। এতে গোটা বিশ্বের কাছে কী বার্তা গেল? মাথা হেঁট হয়ে গেল দেশের।”

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement