সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: মহারাষ্ট্রে বিজেপির মন্ত্রীরা আর স্বাধীন নন! এবার তাঁদের কাজকর্মে নজরদারি চালাতে আপ্তসহায়ক হিসাবে নিয়োগ করা হবে আরএসএস কর্মীদের। চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছেন বিজেপি এবং সংঘের শীর্ষ নেতারা। আরএসএস মনে করছে, সরকার বা মন্ত্রীরা যাতে কোনওভাবেই আদর্শচ্যুত না হন, সেটা নিশ্চিত করতে সরকারি কাজে নজরদারি প্রয়োজন। সংঘ পরিবারের এই নয়া সিদ্ধান্তের সঙ্গে অবশ্য অনেক ইতিহাসবিদ নাৎসি জার্মানির মিল পাচ্ছেন।
মহারাষ্ট্র সরকারের তরফে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, বিজেপির অধীনে যে যে মন্ত্রক রয়েছে সেই সব মন্ত্রকের মন্ত্রীদের আপ্ত সহায়ক হিসাবে নিয়োগ করা হবে সংঘকর্মীদের। এদের মূল কাজ হবে দল এবং সরকারের মধ্যে সমন্বয়সাধন। এখানেই শেষ নয়, সরকার এবং দলের মধ্যে চিফ কোঅর্ডিনেটর হিসাবে আরএসএসের শীর্ষনেতা সুধীর দেলগাঁওকরকে নিয়োগ করা হয়েছে। সংঘ সূত্র বলছে, আরএসএস কর্মীদের দিয়ে এভাবে সরকারের কাজে নজরদারি চালানোটা নতুন কিছু নয়। তবে প্রাতিষ্ঠানিকভাবে এভাবে সংঘকর্মীদের সরকারি পদে নিয়োগ করাটা প্রথম।
হিটলারের আমলে জার্মানিতেও সরকারের সব দপ্তরের কর্মী, হিটলার ঘনিষ্ঠ, সরকার ও সেনার শীর্ষ আধিকারিকদের উপর এভাবেই নজরদারি চালানো হত। নজরদারির কাজটা করত হিটলারের তৈরি 'শুৎজশাফেল' বা এসএস। এসএস সংগঠনটি গোড়া নাৎসিবন্দি। যাদের মূল লক্ষ্য ছিল আর্য সভ্যতার পুনরুদ্ধার এবং নাৎসিবাদের প্রবর্তন, হাজার বছরের সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠা। মূলত সরকার এবং সেনার শীর্ষ আধিকারিকদের আপ্তসহায়ক, দেহরক্ষী হিসাবে নিয়োগ করা হত এসএস কর্মীদের। মহারাষ্ট্রে আরএসএস নতুন যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে, সেই সিদ্ধান্তের সঙ্গে নাজি জার্মানির ওই প্রথার মিল খুঁজে পাচ্ছেন ইতিহাসবিদরা। দুই ক্ষেত্রে মিলও অনেক। নাৎসিরা যেমন হাজার বছরের সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠা করতে চাইত, তেমনি আরএসএসও এক ভারত-অখণ্ড ভারতের কথা বলে। নাৎসিদের উদ্দেশ্যও ছিল ইউরোপজুড়ে নিজেদের আদর্শ প্রতিষ্ঠা করা। তেমনি সংঘও চাইছে গোটা উপমহাদেশে হিন্দুত্বের আদর্শের প্রবর্তন। দুই ক্ষেত্রেই আদর্শ এবং শৃঙ্খলার সঙ্গে কোনওরকম আপস করা হয় না।
ওয়াকিবহাল মহল মনে করছে, হিটলারের জার্মানির মতোই মহারাষ্ট্রে সুকৌশলে আরএসএস সরকারি আধিকারিক এবং মন্ত্রীদের উপর নজরদারি চালানোর চেষ্টা করছে। ঘুরিয়ে স্বয়ংসেবকদের সরকারে প্রতিষ্ঠিত করার চেষ্টা করা হচ্ছে। আসলে বিজেপিতে এখন অনেকেই আছেন যারা সংঘের মূল আদর্শের সঙ্গে সম্পৃক্ত নন। অন্য দল থেকে আসা। এই 'বেনোজল'দের আদর্শচ্যুত হওয়ার প্রবণতাও বেশি। মহারাষ্ট্রে গত পাঁচ বছরের রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের জেরে এই বেনোজলের সংখ্যাটা অনেক বেশি। সেকারণেই তাঁদের উপর নজরদারি চালানোর গুরুত্বও বেশি করে অনুভব করছে আরএসএস।