সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: আদিবাসীদের জমি দখল করছে মুসলিম অনুপ্রবেশকারীরা। লাভ জেহাদে আদিবাসী মহিলাদের ফাঁসিয়ে ধর্মবদল হচ্ছে। ক্ষমতায় এলে ঝাড়খণ্ডে এনআরসি। সাঁওতাল পরগনাগুলিতে মুসলিম-আদিবাসী বিভাজনের সবরকম চেষ্টা করেছিল বিজেপি। কিন্তু কাজের কাজ হল না। ঝাড়খণ্ডের আদিবাসী মন এখনও মজে হেমন্তেই।
বিজেপি হিমন্ত বিশ্ব শর্মার নেতৃত্বে এবারের ঝাড়খণ্ড নির্বাচনে শুরু থেকেই উগ্র হিন্দুত্বের লাইনে প্রচার করে গিয়েছে। এতদিনের 'হিন্দু আদিবাসী' বনাম 'খ্রিস্টান আদিবাসীর' প্রচার থেকে সরে এসে এবার মুসলমানদের 'দিগু' অর্থাৎ 'বহিরাগত' হিসাবে তুলে ধরার চেষ্টা করে বিজেপি। কিন্তু সেই চেষ্টা ব্যর্থ হল। আসলে ঝাড়খণ্ডের সাঁওতাল পরগনাগুলিতে সেভাবে প্রভাব নেই হিন্দুত্ববাদী নেতাদের। তাছাড়া আদিবাসীদের একটা বড় অংশ হিন্দু ধর্মে বিশ্বাস করে না, বদলে তাঁদের বিশ্বাস 'সারনা' ধর্মে। যে ধর্মের স্বীকৃতি দিতে অস্বীকার করেছে কেন্দ্রের বিজেপি সরকার। তাছাড়া বছরের পর বছর মুসলিমদের সঙ্গে সহাবস্থানে তাঁরা অভ্যস্ত। ফলে আদিবাসী-মুসলিম বিভাজনের চেষ্টা সেভাবে কাজে আসেনি। উলটে ২০১৬ সালে বিজেপির আনা ভূমি সংস্কার আইনের ক্ষত এখনও রয়ে গিয়েছে আদিবাসী মনে।
২০১৬ সালে রঘুবর দাস মুখ্যমন্ত্রী থাকাকালীন ঝাড়খণ্ডে ভূমি সংস্কার আইন এনেছিল। সেই আইনে বলা ছিল, রাজ্যের বনাঞ্চলের রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব দেওয়া হবে ব্যক্তিগত মালিকানাধীন সংস্থাকে। সেই আইন শেষ পর্যন্ত বাস্তবের আলো না দেখলেও আদিবাসীদের মনে ক্ষত তৈরি করেছিল। জল-জঙ্গল-জমির অধিকার হারানোর ভয় সেসময় রীতিমতো জাঁকিয়ে বসে আদিবাসীদের মনে। সেই ক্ষত এখনও অস্ফুটে রয়ে গিয়েছে। ফলে বিজেপির মুসলিমবিরোধী প্রচার বিশেষ কাজে আসেনি।
তাছাড়া ভোটের আগে যেভাবে আদিবাসীদের অধুনা 'সবচেয়ে বড় মুখ' হেমন্ত সোরেনকে গ্রেপ্তার করা হল, সেটাও মেনে নিতে পারেননি আদিবাসীরা। ভোটের আগে হেমন্ত জামিন পেয়ে যান এবং তাঁর জামিন মামলায় ইডিকে রীতিমতো ভর্ৎসনা করে আদালত। যাতে আদিবাসী মনে বিশ্বাস তৈরি হয়, হেমন্তের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রই হয়েছে। তাতেই সহানুভূতি পেয়ে যান ঝাড়খণ্ডের মুখ্যমন্ত্রী। তাছাড়া আদিবাসী মহলে হেমন্ত সোরেনের বিভিন্ন জনকল্যাণমুখী প্রকল্প ব্যাপক প্রভাব ফেলেছে। শুধু আদিবাসী মহল্লায় বলা ভুল হবে, গোটা ঝাড়খণ্ডেই ব্যাপক প্রভাব পড়েছে। তারই ফলশ্রুতি ঝাড়খণ্ডের এই ফল।