সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: 'সংবিধান বাঁচাও'। এই মন্ত্রে ২০২৪ লোকসভায় বাজিমাত করেছিল কংগ্রেস। সংরক্ষণ উঠে যাবে এই আশঙ্কায় মারাঠাভূমের দলিত, আদিবাসীরা মুখ ফিরিয়ে ছিলেন বিজেপির থেকে। নীচুতলায় দলিত-মুসলিম, কুর্নি, আদিবাসী সমীকরণে লোকসভায় পাওয়া সাফল্যকে বিধানসভাতেও ধরে রাখার স্বপ্ন দেখছিল কংগ্রেস। কিন্তু হাত শিবিরের সেই স্বপ্ন স্বপ্নই রয়ে গেল। নেপথ্যে যোগী আদিত্যনাথের এক স্লোগান এবং আরএসএসের সক্রিয়তা।
২০২৪ লোকসভা নির্বাচনে জাতগণনার দাবি তুলে মহারাষ্ট্রে বিজেপির ‘হিন্দুত্ব’ ভোটব্যাঙ্কে ভাঙন ধরাতে পেরেছিল কংগ্রেস। অনেকটাই ফিকে হয়ে গিয়েছিল সংঘ তথা বিজেপির হিন্দু ঐক্যের ডাক। বিধানসভা ভোটের আগে ফের সেই হিন্দু ঐক্য পুনরুদ্ধার করতে মরিয়া হয়ে মাঠে নামে বিজেপি। সেই লক্ষ্যে উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথের ‘বাটেঙ্গে তো কাটেঙ্গে ‘ স্লোগানকে হাতিয়ার করে গেরুয়া শিবির। মহারাষ্ট্রে সক্রিয় হন যোগী। দলিত আদিবাসী এলাকায় বেশি করে তাঁকে দিয়ে জনসভা করানো হয়। সঙ্গে ব্যবহার করা হয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির 'এক হ্যায় তো সেফ হ্যায় স্লোগানও'।
উদ্দেশ্য ছিল জাতিস্বত্ত্বার ধুয়ো তুলে আদিবাসী-দলিতদের মধ্যে তথাকথিত যে 'বিভাজন' কংগ্রেস তৈরি করতে পেরেছিল, সেই বিভাজন মিটিয়ে সকল হিন্দুসমাজকে একত্রিত করা। সেটা করতে যোগীর স্লোগানকে পাথেয় করে আসরে নেমে পড়ে আরএসএস। দলিতদের দলে টানতে মহারাষ্ট্রজুড়ে অন্তত ৬০ হাজার ছোটখাট সভা-সমিতি-জনসংযোগের কর্মসূচি নেয় সংঘ। মূলত, দলিত এবং ওবিসি ভোটারদের টার্গেট করে এই কর্মসূচিগুলি নেওয়া হয়। জোর দেওয়া হয় হিন্দু ঐক্যে। নীরবে সংঘ যে কাজ করে গিয়েছে সেটারই ফল পেল বিজেপি।
অবশ্য আরও একটা ফ্যাক্টর বিজেপির পক্ষে গিয়েছে। সেটা হল দলিত-মুসলিম ভোটের বিভাজন এবং বিরোধী শিবিরের আসন সমঝোতা মসৃণ না হওয়া। এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত পরিসংখ্যান বলছে, মহারাষ্ট্রের বিরোধী শিবিরের তিন দলের কেউই ১২-১৩ শতাংশের বেশি ভোট পাচ্ছে না। সেখানে স্রেফ নির্দলরাই প্রায় ১৪ শতাংশ ভোট পেয়েছে। বলাবাহুল্য, এই ১৪ শতাংশ ভোটই বিজেপি বিরোধী। কিন্তু আসন সমঝোতা মসৃণভাবে না হওয়ায় শরিকদের ভোট সঠিকভাবে ট্রান্সফার হয়নি। যার জেরে বহু কেন্দ্রে আঘাড়ির প্রার্থীদের বিরুদ্ধে বহু 'বিদ্রোহী' নির্দল হিসাবে বা ছোট দলের প্রতীকে দাঁড়িয়ে যান। স্থানীয় স্তরে প্রভাব থাকার জোরে সেই নির্দলরা ভালো ভোট টেনেছেন। যার জেরে আঘাড়ির যে সরকারি প্রার্থী, তাঁদেরও পরাজয়ের মুখ দেখতে হয়েছে।