স্টাফ রিপোর্টার: বিভিন্ন দেশ থেকে তাঁর মসজিদ ট্রাস্টের অ্যাকাউন্টে বিপুল পরিমাণ বিদেশি মুদ্রা ঢুকতে শুরু করায় আইন লঙ্ঘনের অভিযোগে মঙ্গলবার বিতর্কিত বিধায়ক হুমায়ুন কবীরকে তলব করল স্টেট ব্যাঙ্ক। টানা তিন দিন ধরে হুমায়ুনের দানবাক্সে পড়া টাকা মেশিনে গোনা চলছে। এদিন জমা পড়া টাকার পরিমাণ সাড়ে তিন কোটি ছাড়িয়েছে। এদিনও প্রচুর বিদেশি মুদ্রা তাঁর অ্যাকাউন্টে ঢুকেছে। একইসঙ্গে জনৈক হায়দরাবাদবাসী শিল্পপতি নাকি তাঁকে আটজন দেহরক্ষী পাঠিয়েছেন, এমনই দাবি হুমায়ুনের।
বিদেশি মুদ্রা প্রাপ্তির সত্যতা স্বীকার করে মঙ্গলবার কলকাতায় হুমায়ুন বলেন, ‘‘কাতার, সৌদি আরব, বাংলাদেশে থেকেও মসজিদ নির্মাণে প্রচুর বিদেশি অর্থ আসছে, যা স্টেট ব্যাঙ্কের চলতি অনুমোদিত আইন ও লিমিট অতিক্রম করে গিয়েছে। ব্যাঙ্ক খবর পাঠিয়েছিল, প্রয়োজনীয় চিঠিও পাঠিয়ে দেওয়া হচ্ছে।’’
অন্যদিকে হুমায়ুনের তহবিলে বিদেশি অর্থ আসা নিয়ে বিজেপি ও তৃণমূল কংগ্রেসের মধ্যে জোর তরজা শুরু হয়েছে। কেন্দ্রীয় মন্ত্রী সুকান্ত মজুমদার ও বিজেপির রাজ্য সভাপতি শমীক ভট্টাচার্য এই বিদেশি অর্থ আসা নিয়ে ‘কদর্য’ মন্তব্য করেছেন বলে অভিযোগ। দুজনেই তদন্ত চেয়েছেন। পাল্টা তৃণমূল কংগ্রেসের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক কুণাল ঘোষের কটাক্ষ,"বিদেশি অর্থ আসা নিয়ে যদি কোনও নির্দিষ্ট অনিয়মের তথ্য ও প্রমাণ বিজেপির দুই সাংসদ সুকান্ত-শমীকদের হাতে থাকে, তবে তারা কেন্দ্রীয় তদন্তকারী এজেন্সিগুলিকে জমা দিন। এজেন্সি তদন্ত করে দেখবে। তা না করে কেন অকারণে হুমায়ুনের বিরুদ্ধে কাদা ছুঁড়ছেন, অপমানজনক মন্তব্য করছেন?’’ এরপরই কুণালের দাবি, ‘‘হুমায়ুন কবীরের মসজিদ তৈরি করা নিয়ে আমাদের কোনও বক্তব্য নেই। ব্যক্তি হিসাবে যে কেউ মন্দির-মসজিদ-গির্জা নির্মাণ করতেই পারেন। তবে আমরা হুমায়ুনের রাজনৈতিক দ্বিচারিতার বিরোধী। ২০১৯ সালে উনি যখন ১৯৯২ সালে ‘বাবরি ভেঙ্গে রামমন্দির করা’ বিজেপির হয়ে লোকসভায় প্রার্থী হয়েছিলেন, তখন কেন বাবরি মসজিদের কথা মনে পড়েনি? এখন ২০২৬ সালে বিধানসভা ভোটের মুখে কেন হঠাৎ সেই বাবরির কথা মনে পড়ল? এই দ্বিচারিতা নিয়েই প্রশ্ন তৃণমূলের।’’
তৃণমূল মুখপাত্রের আরও দাবি, ‘‘এবার কী তা হলে বিজেপি নেতারা এটাও স্বীকার করবেন যে বিজেপির স্বার্থসিদ্ধি করতেই ২০১৯ সালে আপনাদের হয়ে ভোটে প্রার্থী হওয়া হুমায়ুন গেরুয়া শিবিরের সুবিধা করে দিতেই এমন নানা কর্মসূচি নিচ্ছেন?" তৃণমূল মুখপাত্রের আরও দাবি, ‘‘হুমায়ুনকে কিন্তু মসজিদ গড়ার জন্য সাসপেন্ড করা হয়নি। উনি সাংগঠনিক রদবদল নিয়ে আপত্তিকর মন্তব্য করায় শৃঙ্খলারক্ষা কমিটির সিদ্ধান্ত মেনেই সাসপেন্ড করেছে তৃণমূল।’’
হুমায়ুনের দাবি, ২২ ডিসেম্বর বহরমপুর টেক্সটাইল মোড়ে তাঁর নতুন দল আত্মপ্রকাশ করবে। তাঁর জোর সওয়াল, “২৬-এর বিধানসভা ভোটে আমার দল বড় ফ্যাক্টর হবে। তৃণমূল বা বিজেপি-কেউ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাবে না। সরকার গড়তে হলে আমাকেই দরকার হবে। মুখ্যমন্ত্রী যেই হন, আমাকে নিয়েই সরকার করতে হবে।”
