সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: সিরিয়ায় গদিচ্যুত প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদ। বিদ্রোহীদের কাছে হার মানতে বাধ্য হয়েছে তাঁর অনুগত বাহিনী। এখন পশ্চিম এশিয়ার দেশটির ক্ষমতা আল কায়দার শাখা সংগঠন তাহরির আল শামের হাতে। মধ্যপ্রাচ্যের এই ডামাডোলের মধ্যে সিরিয়ার সার্বভৌমত্ব ও অখণ্ডতা রক্ষার বার্তা দিল ভারত।
গত ১৩ দিনে একের পর এক শহর দখল করার পর রবিবার সিরিয়ার রাজধানী দামাস্কাস কবজা করে নেয় তাহরির আল শামের বিদ্রোহীরা। শান্তিপূর্ণভাবে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে চেয়ে ইস্তফা দিয়ে দেশ ছাড়েন আসাদ। এখন তিনি রাশিয়ার আশ্রয়ে রয়েছেন। সিরিয়ায় নানা রাস্তায় এখন বিজয়োল্লাসে মেতেছে বন্দুকধারীরা। এই সমগ্র পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে আজ সোমবার বিদেশমন্ত্রকের মুখপাত্র বিবৃতি দিয়ে জানান, 'সিরিয়ার সমস্ত ঘটনাবলির উপর আমরা নজর রাখছি। আমরা উল্লেখ করতে চাই, সিরিয়ার ঐক্য, সার্বভৌমত্ব ও আঞ্চলিক অখণ্ডতা রক্ষা করার জন্য সকলকে কাজ করতে। পাশাপাশি সিরিয়ায় শান্তি স্থাপন, নাগরিকদের সুরক্ষা ও স্বার্থ রক্ষার জন্য রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠিত সরকার চাই আমরা। সেখানে বহু ভারতীয়ও রয়েছেন। দামাস্কাসের ভারতীয় দূতাবাস তাঁদের সুরক্ষা ও নিরাপত্তার জন্য সব সময় যোগাযোগ রেখে চলেছে।'
এদিকে, রবিবার ভোরে দামাস্কাস দখলের পরে বিজয় ভাষণ দেন তাহরির আল শামের প্রধান আবু মহম্মদ আল-জোলানি। মসজিদে আল্লাহু আকবর ধ্বনি দিতে দিতে তিনি ঘোষণা করেন, "কোনও গোষ্ঠী নয়, জিতে গিয়েছে গোটা সিরিয়াই। সিরিয়াআজ শুদ্ধ হল।" ‘স্বাধীনতা’র আনন্দে সিরিয়ার কারাগার থেকে মুক্তি দেওয়া হয় রাজনৈতিক বন্দিদের। অন্যদিকে, সিরিয়ায় আসাদের পতনের পরেই সক্রিয় হয়ে উঠেছে আমেরিকা। রবিবার রাতে সিরিয়ার অন্দরে ৭৫টি ইসলামিক স্টেট ঘাঁটি লক্ষ্য করে হামলা চালায় মার্কিন ফৌজ। দামাস্কাসে আক্রমণ শানিয়েছে ইজরায়েলও।
উল্লেখ্য, ২০০০ সালে সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট হন আসাদ। কিন্তু জলঘোলা হতে শুরু করে ২০১১ সালে। আরব বসন্তের হাওয়ায় উত্তাল হয়ে ওঠে মরুপ্রদেশটি। আকাশ বাতাস কেঁপে ওঠে একনায়ক হঠাও, গণতন্ত্র ফেরাও স্লোগানে। শুরু হয়ে যায় গৃহযুদ্ধ। আসাদকে গদিচ্যুত করতে ময়দানে ঝাঁপিয়ে পড়ে বিদ্রোহীদের যৌথমঞ্চ ‘সিরিয়ান ডেমোক্র্যাটিক ফোর্সেস’ (এসডিএফ)। কুর্দ বাহিনী পিপলস প্রোটেকশন ইউনিটের (ওয়াইপিজি) নেতৃত্বে আরম্ভ হয় এক অসম যুদ্ধ। সেই থেকেই ক্ষতবিক্ষত হতে শুরু করে সিরিয়া। ইরান ও রাশিয়ার মদতে বিদ্রোহীদের কোণঠাসা করে দেওয়া হয়। তবে সময়ের সঙ্গে মার্কিন ও পশ্চিমের দেশগুলোর মদতে সিরিয়ার সেনাবাহিনীকে জবরদস্ত পালটা মার দিতে শুরু করে বিদ্রোহীরা। প্রায় ১৩ বছরের এই গৃহযুদ্ধে অবসান ঘটল আসাদ যুগের।