সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: ভারতের সংসদীয় গণতন্ত্র এর আগেও বহু সৌজন্যের ছবি দেখেছে। বিরোধিতা ভুলে শাসক-বিরোধী দুই শিবিরের মধ্যে বেনজির হৃদ্যতা দেখেছে। একে অপরের প্রতি সম্মান দেখেছে। কিন্তু মঙ্গলবার যেটা হল, সেটা বেনজির তো বটেই, সেই সঙ্গে অপ্রত্যাশিতও। মঙ্গলবারই রাজ্যসভার বিরোধী দলনেতা গুলাম নবি আজাদের মেয়াদ শেষ হয়েছে। তাঁকে নতুন করে রাজ্যসভায় পাঠানোর কোনও ইঙ্গিতও কংগ্রেস (Congress) দেয়নি। আজাদের বিদায়ী ভাষণে অপ্রত্যাশিতভাবে আবেগপ্রবণ হতে দেখা গেল খোদ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে (Narendra Modi)। আজাদ সম্পর্কে বলতে গিয়ে চোখ ভিজে এল প্রধানমন্ত্রী। আবেগঘন গলায় রাজ্যসভার পাঁচবারের সাংসদকে বিদায় জানালেন প্রধানমন্ত্রী।
২ বার লোকসভা এবং ৫ বার রাজ্যসভার সাংসদ। সব মিলিয়ে সংসদীয় রাজনীতিতে ৩ দশকেরও বেশি সময়ের অভিজ্ঞতা আজাদের। এ হেন দীর্ঘ সময় সংসদীয় রাজনীতিতে থাকা সত্ত্বেও তাঁর বিরুদ্ধে কখনও রাজনৈতিক শিষ্টাচার ভঙ্গের অভিযোগ ওঠেনি। বরং, বরাবরই বিরোধীদের প্রতি সৌজন্য দেখিয়ে এসেছেন তিনি। তাছাড়া সাংসদ হিসেবে তাঁর নিষ্ঠা এবং কর্মপ্রচেষ্টা ঈর্ষণীয়। তাঁকে রাজ্যসভা থেকে বিদায় জানাতে গিয়ে এই বিশেষ গুণেরই প্রশংসা করলেন প্রধানমন্ত্রী। বললেন,”বিরোধী দলনেতা হিসেবে গুলান নবি আজাদের (Ghulam Nabi Azad) পরিবর্তে যিনি আসবেন, তাঁকেই কঠোর পরিশ্রম করতে হবে। কারণ, তাঁর শুধু নিজের দলের কথা ভাবলে চলবে না। তাঁকে ভাবতে হবে গোটা দেশ এবং এই সংসদের কথাও। গুলাম নবিজি যতটা নিজের দলের কথা ভাবতেন, ততটাই এই দেশের এবং এই সংসদের কথা ভাবতেন। এটা ছোট ব্যাপার নয়, এটা অনেক বড় কথা। এখানে তর্ক-বিতর্ক যাই হোক, দলমত নির্বিশেষে এটা একটা পরিবার।”
[আরও পড়ুন: ‘দুর্নীতি নয়, উন্নয়নের রাজনীতিতে বিশ্বাসী বাংলা’, হলদিয়া থেকে ফিরে ফের টুইটে খোঁচা মোদির]
প্রধানমন্ত্রী বলেন, “ওঁর নম্রতা, নিষ্ঠা, দেশের জন্য কিছু করার কামনা এই দেশের জন্য জরুরি। আমার বিশ্বাস যেখানে যে দায়িত্ব উনি পাবেন, সেটাই নিষ্ঠার সঙ্গে পালন করবেন, দেশ ওঁর থেকে উপকৃত হবে।” বক্তব্যের মাঝেই গলা ভারি হয়ে যায় প্রধানমন্ত্রীর। বিরোধী দলনেতাকে মোদি আশ্বস্ত করেন, “মন থেকে মানবেন না যে আপনি রাজ্যসভার সদস্য নন। আপনার জন্য আমার রাস্তা সবসময় খোলা। আপনাদের অভিজ্ঞতা আমার কাজে লাগবে। ” বস্তুত, সংসদের শেষ ভাষণে সরকার পক্ষের প্রশংসা শোনা গিয়েছিল গুলাম নবির গলাতেও। কাশ্মীরে (Kashmir) সদ্য শেষ হওয়া নির্বাচন সফলভাবে আয়োজনের জন্য সরকারকে ধন্যবাদও জানান তিনি। গতকাল সেই বক্তব্যের জন্য কাশ্মীরের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীকে পালটা ধন্যবাদ জানান প্রধানমন্ত্রীও। তারপরই আজ বিদায়ী ভাষণে প্রধানমন্ত্রীর কান্না! ভারতের সংসদীয় ইতিহাসে বিরল নজির হয়ে থাকবে।