সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: দিল্লিতে বোমা বিস্ফোরণের পর পেরিয়ে গিয়েছে বেশ কিছুদিন। সোমবারের বিস্ফোরণে মৃত্যু হয় ৩২ বছরের মহসিনের। শেষকৃত্যের স্থান নিয়ে মা এবং স্ত্রীর টানাপড়েনে দেহ আটকে থাকল পাঁচ ঘণ্টা। অবশেষে পুলিশের হস্তক্ষেপে মিটল সমস্যা।
জানা গিয়েছে, সোমবারের বিস্ফোরণে মৃত্যু হয় ৩২ বছরের মহসিনের। তাঁর বাড়ি মিরাটে। কর্মসূত্রে পরিবার নিয়ে তিনি থাকতেন দিল্লির জামা মসজিদের কাছে। তাঁর সঙ্গে বিয়ে হয় সুলতানা নামের এক মহিলার। সুলাতানার বাড়িও মিরাটে। কিন্তু তাঁর পরিবার থাকে দিল্লিতে জামা মসজিদের কাছে, যেখানে থাকতেন মহসিন।
দিল্লিতে ই-রিক্সা চালাতেন মহসিন। ঘটনার দিন সকালে রিকশা নিয়ে বেরিয়ে যাওয়ার পরে সুলতানার সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় তাঁর। সন্ধ্যেবেলা বিস্ফোরণের পরে সুলতানার ভাই এবং দেওর ফোন করে তাঁকে বিস্ফোরণে খবর দেন। প্রায় মাঝ রাতে পুলিশ জানায় মৃতদের মধ্যে রয়েছে মহসিনের নাম। তাঁর ড্রাইভিং লাইসেন্স দেখে শনাক্ত করা হয় তাঁকে। শহরের একটি হাসপাতালে বেওয়ারিশ অবস্থায় পড়ে ছিল তাঁর দেহ।
কেউ মহসিনের মৃতদেহের খোঁজ না নেওয়ায় পরেরদিন সকালে মিরাটের ইসলামনগর এলাকায় তাঁর বাড়িতে দেহ পাঠিয়ে দেয় পুলিশ। পুলিশ ধরেই নেয় মিরাটেই হবে তাঁর শেষ কৃত্য। যদিও, পরিবারের সকলের যে তেমন ইচ্ছা নয় তা বোঝা যায় এরপরেই। পরিবারের ইচ্ছা অনুযায়ী শুরু হয়ে যায় মহসিনের শেষকৃত্যের প্রক্রিয়া। বাড়ি থেকে শেষযাত্রা শুরু হওয়ার ঠিক পরেই দিল্লি থেকে সেখানে পৌঁছান সুলাতানা। দেহ আটকে মহসিনের মায়ের সামনে সটান নিজের আঁচল পেতে দিয়ে বলেন, 'ওকে বাড়ি নিয়ে যেতে দিন'।
নিহতের পরিবারের ইচ্ছা ছিল যেখানে মহসিন বড় হয়েছেন সেখানেই হবে তাঁর শেষকৃত্য। সুলতানার দাবি, নিজের পরিবারকে ভাল রাখার জন্য, বাচ্চাদের সুন্দর ভবিষ্যতের জন্য দিল্লিতে কাজ করতেন মহসিন। সেই শহরেরই নিজের ভালো ভবিষ্যতের স্বপ্ন দেখতেন তিনি। তাই দিল্লিতেই তাঁর শেষকৃত্য হওয়া উচিত। এই টানাপড়েনে পেরিয়ে যায় প্রায় পাঁচ ঘণ্টা। পুলিশের হস্তক্ষেপে অবশেষে সমাধান হয় সমস্যার। সুলাতানার দাবি মেনে নেন মহসিনের মা সনজিদা। মহসিনের দেহ দিল্লিতে ফেরানোর ব্যবস্থা করে পুলিশ। সুলাতানা, সনজিদা এবং সুলাতানাদ ভাই সলমান রওনা হন দিল্লির উদ্দেশে। রাজধানীতে তাঁর শেষকৃত্যের ব্যবস্থা করে পুলিশ।
দু'বছর আগে পরিবার নিয়ে দিল্লিতে আসেন মহসিন। জামা মসজিদ এলাকায় থাকতেন তিনি। স্থানীয় মানুষের দাবি, অত্যন্ত কর্মঠ এবং ভরসাযোগ্য মানুষ ছিলেন মহসিন।
গত সোমবার সন্ধ্যায় ভয়াবহ বিস্ফোরণে কেঁপে ওঠে লালকেল্লা। এখনও পর্যন্ত ১২ জনের মৃত্যু হয়েছে। আহত বহু। এই ঘটনাকে ইতিমধ্যে জঙ্গি হামলার তকমা দিয়েছে কেন্দ্র। বুধবার ভুটান থেকে ফিরে কেন্দ্রীয় ক্যাবিনেটের সঙ্গে বৈঠকে বসেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। সেই বৈঠকেই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়, দিল্লি বিস্ফোরণকে জঙ্গি হামলার তকমা দেওয়া হবে। বৈঠকের পরে ক্যাবিনেট যে বিবৃতি পেশ করেছে সেখানে স্পষ্ট বলা হয়, লালকেল্লার সামনে গাড়িতে বিস্ফোরণ ঘটিয়েছে দেশদ্রোহীরা। জঘন্য জঙ্গি হামলার তীব্র নিন্দার পাশাপাশি সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি চালিয়ে যাবে ভারত।
