shono
Advertisement

ISF’র মতো সাম্প্রদায়িক দলের সঙ্গে জোট করেই ভরাডুবি? প্রশ্ন কংগ্রেসের অন্দরেই

রাজ্য রাজনীতির ইতিহাসে এই প্রথম কংগ্রেসহীন বাংলার বিধানসভা।
Posted: 08:09 PM May 11, 2021Updated: 08:43 PM May 11, 2021

সোমনাথ রায়, নয়াদিল্লি: ভোটে ভরাডুবির পর এবার কি জোট রাজনীতি থেকে শিক্ষা নিচ্ছে কংগ্রেস? কংগ্রেসের কার্যকরী সমিতির বৈঠকের পর এই প্রশ্নই ঘুরছে দিল্লির রাজনীতির অলিন্দে। বৈঠকে বর্ষীয়ান কংগ্রেস নেতা গুলাম নবি আজাদের এক প্রস্তাবকে কেন্দ্র করে এই প্রশ্ন উঠছে।

Advertisement

চার রাজ্যে ভরাডুবির পর গুলামের প্রস্তাব, “এরপর থেকে কোন দলের সঙ্গে কোথায় জোট করা হবে, সেই সিদ্ধান্ত প্রদেশ নেতৃত্বের উপর ছাড়া ঠিক হবে না। কার্যকরী সমিতির থেকে কোনও সদস্যকে দায়িত্ব দেওয়া উচিত। কংগ্রেস প্রাদেশিক বা আঞ্চলিক নয়। জাতীয় দল। তাই জাতীয় স্তরে দলের নীতি ও ভাবমূর্তির পক্ষে কোনটি ঠিক, তা নির্ণয় করে জোটসঙ্গী নির্ধারণ করা উচিত দায়িত্বপ্রাপ্ত সদস্যদের।” রাজনৈতিক মহলের মতে, বাংলা ও অসমে ভরাডুবির পর সাম্প্রদায়িক দলগুলির থেকে দূরত্ব রাখতে চাইছে কংগ্রেস। তাই গুলাম নবির এই প্রস্তাব ভবিষ্যতে কার্যকর হলে রাজনৈতিক মহলের মতে জোটের ক্ষেত্রে আর প্রদেশ নেতৃত্বের কোনও ভূমিকা থাকছে না।

[আরও পড়ুন: দ্বিতীয় ডোজেই জোর দেওয়ার নির্দেশ কেন্দ্রের, বিশ বাঁও জলে ১৮ ঊর্ধ্বদের টিকাকরণ!]

রাজ্য রাজনীতির ইতিহাসে এই প্রথম কংগ্রেসহীন বাংলার বিধানসভা। আর এর জন্য আইএসএফের সঙ্গে জোটকেই এদিনের বৈঠকে কাঠগড়ায় তোলা হয়। প্রদেশ সভাপতি অধীররঞ্জন চৌধুরীর উপস্থিতিতে কংগ্রেস সভানেত্রী সোনিয়া গান্ধীর কাছে প্রাথমিক রিপোর্ট দেন বাংলায় কংগ্রেসের পর্যবেক্ষক জিতিন প্রসাদ, তাতেই নাকি উঠে এসেছে এই তত্ত্ব। কংগ্রেসের এক সূত্রের বক্তব্য, বাংলা ও অসমে ভরাডুবির জন্য এদিন আইএসএফ এবং এআইইউডিএফ-এর মতো দুই সাম্প্রদায়িক দলের সঙ্গে জোট করাকে দায়ী করা হয়। বৈঠকে বাংলার পর্যবেক্ষক জিতিন প্রসাদের দাবি, বাংলায় আইএসএফের সঙ্গে জোটে তাঁর সায় ছিল না। কিন্তু বামেদের চাপে এই জোট গিলতে হয়েছিল প্রদেশ নেতৃত্বকে। একই সঙ্গে তিনি জানান, ভবিষ্যতে রাজ্যস্তরে কোনও জোট করার আগে ভালভাবে ভাবনাচিন্তা করা উচিত। কয়েকটি আসন জেতার থেকেও দরকার জাতীয় স্তরে দলের ভাবমূর্তি ঠিক করার মতো বৃহত্তর বিষয়ে জোর দেওয়া। উল্লেখ্য, সংযুক্ত মোর্চায় আইএসএফ-কে অংশীদার করায় শুরু থেকেই আপত্তি ছিল প্রদেশ সভাপতি অধীররঞ্জন চৌধুরীর। ২৮ ফেব্রুয়ারির ব্রিগেড সমাবেশেও এর ছাপ পাওয়া গিয়েছিল। বরং বামেদের এই প্রস্তাবের পক্ষে ছিলেন তৎকালীন বিরোধী দলনেতা আবদুল মান্নান। যদিও মুসলমান অধ্যুষিত দক্ষিণবঙ্গের বিভিন্ন এলাকা থেকে আসন মিলতে পারে, এই আশায় শেষ পর্যন্ত আইএসএফ-এর সঙ্গে জোট মেনে নেয় প্রদেশ কংগ্রেস।

[আরও পড়ুন: ভুটানের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ফোনালাপ মোদির, করোনা কালে পাশে থাকার বার্তা বন্ধু দেশের]

দলীয় অনুশাসন মেনে অবশ্য এই বিষয়ে সংবাদমাধ্যমে মুখ খুলতে চাননি জিতিন প্রসাদ বা অধীররঞ্জন চৌধুরি কেউই। জিতিন বলেন, “আমি আমার পর্যবেক্ষণ দলকে জানিয়েছি। তা প্রকাশ্যে বলতে পারব না। এরপর যা ঠিক করার দল করবে। দলনেত্রী তো জানিয়েই দিয়েছেন তিনি ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং কমিটি তৈরি করে হারের কারণ খুঁজবেন। আমার কাছে তাঁরা কিছু জানতে চাইলে জানাব।” প্রায় একই সুর প্রদেশ সভাপতি অধীররঞ্জন চৌধুরীর বক্তব্যে। তিনি বললেন, “শুধু বাংলা কেন, দলের বর্তমান পরিস্থিতিতে প্রত্যেকেই মর্মাহত। এই অবস্থা থেকে কী ভাবে ঘুরে দাঁড়ানো যায়, সেই চেষ্টাই চলছে। সোনিয়াজি তো যা বলার বলে দিয়েছেনই। সেভাবেই দল চলবে।”

কংগ্রেসের প্রধান মুখপাত্র তথা কার্যকরী সমিতির অন্যতম সদস্য রণদীপ সিং সুরজেওয়ালা জানান, “কংগ্রেসশূন্য বিধানসভা বাংলার জন্যও ঠিক নয়। স্বাধীনতার আগে থেকেই বাংলা-সহ দেশজুড়ে কংগ্রেসের সম্পর্ক। সরকার হোক বা বিরোধীপক্ষ। বিধানসভায় বাংলার ভালমন্দ নিয়ে কংগ্রেস নিজেদের অবস্থানে অটুট থেকে লড়াই চালাত। সেটা হয়তো করা যাবে না, কিন্তু বাংলার সঙ্গে কংগ্রেসের নাড়ির টান কীভাবে কেটে গেল, তা দ্রুত খুঁজে বার করে সব ঠিকঠাক করতে হবে।মনে রাখতে হবে আমরা নির্বাচন হেরেছি, হিম্মত হারাইনি।” শোনা যাচ্ছে, এদিন বৈঠকে জিতিন প্রসাদের বক্তব্যের পর তাঁর সমর্থনে সরব হন গুলাম নবি আজাদ। এদিনের আজাদের বক্তব্যে চলে আসছে আরও একটি প্রশ্ন। তাহলে কি শুধুই আইএসএফ নয়, তাঁর আপত্তি বামেদের সঙ্গে জোট নিয়েও? কারণ কেরলে কংগ্রেসের লড়াই তো এই বাম জোটের বিরুদ্ধে।

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement