সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: সরকার পতন হয়েছে সিরিয়ায়। টানা ১৪ বছর ধরে চলা গৃহযুদ্ধের পর দেশ ছেড়ে রাশিয়ায় আশ্রয় নিয়েছেন প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদ। রাজধানী দিল্লি থেকে দামাস্কাসের দূরত্ব অন্তত ৪ হাজার কিলোমিটার হলেও সিরিয়ার রাজনৈতিক অস্থিরতা চিন্তা বাড়াচ্ছে ভারতের। কূটনৈতিক দিক থেকে তো বটেই , আশঙ্কা করা হচ্ছে কাশ্মীরে নতুন করে মাথাচাড়া দিতে পারে জেহাদের বিষবৃক্ষ।
নয়াদিল্লির সঙ্গে সিরিয়া মৈত্রীর সম্পর্ক দীর্ঘদিনের। আসাদ আমলে তা নয়া মাত্রা পায়। তাঁর আমলেই সিরিয়ার উন্নয়নে একাধিক ক্ষেত্রে বিপুল বিনিয়োগ করে ভারত। টাকার অঙ্কে যা প্রায় ২৪০ মিলিয়ন ডলার। বিনিয়োগের তালিকায় ছিল বিদ্যুৎ উৎপাদন, আইটি ইনফ্রাস্টাকচার, স্টিল প্লান্ট এবং অবশ্যই তেল উত্তোলন। বিনিয়োগের পাশাপাশি সিরিয়ায় বিপুল পরিমানে চাল, ওষুধ ও বস্ত্র রপ্তানি করত ভারত। সর্বোপরি আন্তর্জাতিক মঞ্চে একাধিক ইস্যুতে একে অপরের পাশে দাঁড়িয়েছে দুই দেশ। যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল কাশ্মীর ইস্যু। আসাদের পতন ও সিরিয়া বিদ্রোহীদের দখলে চলে যাওয়ায় অজস্র প্রশ্নের মুখে দাঁড়িয়ে ভারতের সঙ্গে এই দেশের কূটনৈতিক সম্পর্ক।
তুরস্ক, মালয়েশিয়ার মতো মুসলিম দেশ ভারত ইস্যুতে সুবিধামতো নীতি বদল করলেও সিরিয়া কখনও সে পথে হাঁটনি। ২০১৯ সালে জম্মু ও কাশ্মীর থেকে ৩৭০ ধারা প্রত্যাহারের পর তুরস্ক পাকিস্তানের পক্ষ নিয়ে ভারতের বিরুদ্ধে সরব হয়। এমনকি রাষ্ট্রসংঘেও ভারত বিরোধিতায় সরব হয়। তবে সিরিয়া স্পষ্ট ভাবে জানিয়েছিল এটা ভারতের আভ্যন্তরীণ বিষয়। হায়াত তেহরির আল সাম নামে সিরিয়ার যে বিদ্রোহী সংগঠন আসাদকে উৎখাত করেছে তারা তুরস্কের সমর্থক। এবং তুরস্কের সাহায্যেই দামাস্কাসের দখল নিয়েছে তারা। তবে কাশ্মীর ইস্যুতে পাকিস্তানের সমর্থক তুরস্কের প্রভাব সিরিয়াতে বাড়বে। ফলে পাকিস্তানের পাশাপাশি সিরিয়ার রুক্ষ মাটি থেকেও কাশ্মীর ইস্যুতে ষড়যন্ত্রের জাল বোনা আশ্চর্য নয়।
সিরিয়ায় বিদ্রোহীদের ক্ষমতা দখলের সঙ্গে সঙ্গে মাথাচাড়া দিয়ে উঠছে, আইএসআইএস, আল কায়েদা-সহ একাধিক সন্ত্রাসবাদী সংগঠন। ২০১৪ সালে ইরান ও রাশিয়ার সঙ্গে মিলে আইএসআইএস-এর মতো সন্ত্রাসবাদী সংগঠনকে নিকেশ করেছিলেন আসাদ। এবার নতুন করে তারা মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে শুরু করেছে সিরিয়াতে। কূটনৈতিক মহলের অনুমান, পাকিস্তানের মতো সন্ত্রাসবাদের চারণভূমি হয়ে উঠতে পারে সিরিয়া। এখানে আইএসআইএসের দাপট বাড়লে তার প্রভাব পড়বে কাশ্মীরের মাটিতে। কারণ অতীতে যে সংগঠনকে সমূলে বিনাশ করা হয়েছিল উপত্যকার মাটিতে। তা নতুন করে জেগে উঠতে পারে।