shono
Advertisement

‘ন্যূনতম নৈতিকতা থাকবে না?’, মহারাষ্ট্রের টানাপড়েনের মধ্যেও মতাদর্শে অনড় একমাত্র সিপিএম বিধায়ক

২০১৯-এর মহারাষ্ট্র নির্বাচনে দরিদ্রতম প্রার্থী ছিলেন তিনিই বিনোদ নিকোলে।
Posted: 06:20 PM Jun 25, 2022Updated: 06:20 PM Jun 25, 2022

সোমনাথ রায়, নয়াদিল্লি: মহারাষ্ট্র। গত কয়েকদিনে দেশের বাণিজ্য রাজধানীর নাম উঠলেই যে কয়েকটি বিষয় সামনে আসছে তা হল, ‘অপারেশন কমল’ নিয়ে দেবেন্দ্র ফড়ণবিসদের (Devendra Fadnavis) নেমে পড়া। মহারাষ্ট্রের মসনদ দখলের লড়াইয়ে বিধায়কদের একটি বড় অংশের দেশের পশ্চিমপ্রান্ত সুরাট থেকে উত্তর-পূর্ব প্রান্ত গুয়াহাটিতে ঘুরে বেড়ানো। ঘোড়া কেনাবেচার দর কষাকষি চলা। এই ঘটনাগুলিতে সবকিছুই আছে। নেই শুধু মতাদর্শ। নেই জনাদেশকে সম্মান করার কোনওরকমের সদিচ্ছা। যেন বদলা নেওয়ার নেশায় বুঁদ হয়ে রয়েছে বিজেপি।

Advertisement

একপক্ষের বক্তব্য, এই খেলার সূচনা করেছিল শিব সেনাই। ‘১৯-এর শেষদিকে হওয়া নির্বাচনে তারা বিজেপির সঙ্গে জোটবদ্ধ হয়েই নির্বাচনে লড়েছিল। সর্বাধিক আসনে জয়লাভ করেছিল গেরুয়া বাহিনী। তবে সরকারের রাশ কীভাবে রাখা হবে, সেই সমীকরণ নিয়ে জট না খোলায় দ্বিতীয় সর্বোচ্চ আসনে জেতা শিব সেনা (Shiv Sena) জোট বাঁধে এনসিপি ও কংগ্রেসের (Congress) সঙ্গে। তখন থেকেই তক্কে তক্কে ছিল পদ্ম শিবির। বিজেপির গায়ের জ্বালা মেটানোর রাজনীতির ফলে বর্তমানে আরব সাগরের তীরে যা চলেছে, তাতে ‘মতাদর্শ’ নামক বস্তুটি খায় না গায়ে মাখে, সেই প্রশ্ন উঠতেই পারে। এখানেই যেন স্বতন্ত্র বিনোদ নিকোলে। একেবারে অচেনা একটি নাম। তাঁর দল অবশ্য বেশ পরিচিত বঙ্গবাসীর কাছে। বর্তমানে রাজ্যে শূন্য, কিন্তু মহারাষ্ট্র বিধানসভায় রয়েছেন সিপিএমের একজন সদস্য। তিনিই বিনোদ নিকোলে। চাইলে সহজেই ঘোড়া কেনাবেচার দৌড়ে ভরিয়ে নিতে পারতেন পকেট। কিন্তু তিনি যে, ‘চলতি হাওয়ার পন্থী’ নন। অর্থের থেকে তাঁর কাছে আদর্শের দাম বেশি।

[আরও পড়ুন: দেশজুড়ে বেতন পরিকাঠামোয় বড় পরিবর্তন! জুলাই থেকেই লাগু হতে পারে নয়া আইন]

৪৩ বছর বয়সী বিনোদ মহারাষ্ট্রের পালঘর জেলার দাহানু কেন্দ্রের বিধায়ক। স্ত্রী ববিতা, দুই সন্তান ও মা-বাবার সঙ্গে থাকেন গ্রামের একফালি পৈতৃক জমির ছোট্ট বাড়িতে। বড় হয়েছেন দারিদ্র্যকে সঙ্গী করেই। অর্থের অভাবে দ্বাদশ পাশ করে কলেজের গণ্ডি পার করতে পারেননি। অগত্যা ঠেলা লাগিয়ে বিক্রি করা শুরু করলেন বড়া পাও আর চা। তারই ফাঁকে হাতে তুলে নিলেন রক্তপতাকা। প্রথমে ডিওয়াইএফআই (DYFI), পরে সিটু (CITU)। দুই গণসংগঠনে কাজ করার পর ২০০৫ সালে পার্টি হোলটাইমার। মাস গেলে তখন পেতেন মাত্র ৫০০ টাকা। যা বেড়ে হয়েছে পাঁচ হাজার। ২০১৮ সালের মার্চে নাসিক থেকে মুম্বই-কৃষকদের যে জাঠা উঠে এসেছিল খবরের শিরোনামে তাতে গোটা পথটা সক্রিয়ভাবে অংশ নিয়ে হেঁটেছিলেন বিনোদ।

পুরস্কার হিসাবে দল বিধানসভার টিকিট দেয়। যে হলফনামা দাখিল করেছিলেন, তাতে তিনিই ছিলেন ২০১৯-এর মহারাষ্ট্র নির্বাচনে দরিদ্রতম প্রার্থী। নিজের ও স্ত্রীর স্থাবর, অস্থাবর সব মিলিয়ে সম্পদের পরিমাণ ছিল ৫১ হাজার ৮২ টাকা। স্ত্রীর ছ’হাজার টাকা ধরে মাসিক আয় ১১ হাজার টাকা। সেই বিনোদই বিজেপি প্রার্থীকে প্রায় পৌঁনে পাঁচ হাজার ভোটে হারিয়ে পা রাখেন মহারাষ্ট্রের বিধানসভায়।

[আরও পড়ুন: যোগীরাজ্যে শিক্ষিকাকে জুতোপেটা প্রধান শিক্ষকের, ভিডিও ভাইরাল হতেই গ্রেপ্তার অভিযুক্ত]

দলবদল, ঘোড়া কেনাবেচার বাজারেও কিন্তু আদর্শ থেকে নড়েননি বিনোদ। বলছিলেন, “লাল ঝান্ডা হাতে নিয়ে প্রাপ্তি তো শুধু আদর্শই। ওসব আয়ারাম গয়ারাম রাজনীতি করতে পারব না। যে মানুষগুলো আমায় ভোট দিয়েছিল, তাঁদের সঙ্গে বেইমানি করতে পারব না দাদা। আপনার রাজ্যেও আমার মতো বোকা মানুষ খুঁজলে অনেক পেয়ে যাবেন।” যাঁরা দলবদলের খেলায় নেমেছেন, তাঁদের উদ্দেশ্যে বললেন, “ন্যূনতম আদর্শ, নীতি বলেও কি কিছু থাকবে না? এখনও আমাদের রাজ্য করোনার (Coronavirus) থাবা থেকে বেরিয়ে আসতে পারেনি। বাচ্চাগুলো স্কুলে যেতে পারছে না। বিজেপি ক্ষমতা দখলের নেশায় অন্ধ হয়ে গেছে। আর তাতে সায় দিয়ে যাচ্ছে এরাও। জানি না বাপু, ওদের মতো হতে পারব না।”

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement