সুব্রত বিশ্বাস: এবার ‘ঠগ বাছতে গাঁ উজাড়ের’ সিদ্ধান্ত রেলের। সরাসরি আর্থিক লেনদেনে জড়িত রেলের কমার্শিয়াল বিভাগের কর্মীদের একচেটিয়াভাবে সরানোর সিদ্ধান্ত নিল রেল। আরটিআই (রাইট টু ইনফরমেশন) বিদ্ধ হতে হতে বিধ্বস্ত রেল অবশেষে এই সিদ্ধান্তে আসতে বাধ্য হয়েছে বলে বোর্ড কর্তাদের একাংশের মত। কমার্শিয়াল বিভাগে টিসি, টিটিই, সিটিআই, টিটিআই, বুকিং সুপারভাইজার, বুকিং ক্লার্ক, পার্সল ক্লার্ক, রিজার্ভেশন ক্লার্ক, এনকোয়ারি কাম রিজার্ভেশন ক্লার্ক, প্যাসেঞ্জার ইনফরমেশন সেন্টার, এনকোয়ারি ক্লার্করা এই বদলি নীতির আওতায় আসছেন।
[নিরাপত্তায় গুরুত্ব, দূরপাল্লার ট্রেনে বাড়ছে মহিলা সংরক্ষিত আসন]
এই সব কর্মীদের নব্বই শতাংশই দীর্ঘমেয়াদি অলিখিত চুক্তিতে একই জায়গায় থেকে গিয়েছেন। ফলে দুর্নীতির শিকড় গভীর থেকে গভীরতর পর্যায়ে পৌঁছেছে বলে অভিযোগ উঠেছে বারবার। চার বছর বাদে বদলির আইন থাকলেও তা মানা হয় না। ফলে কর্মীদের ‘মৌরসিপাট্টা’য় পরিণত হয়েছে এক একটি জায়াগা। এজন্য সংশ্লিষ্ট বিভাগের ভারপ্রাপ্ত আধিকারিকদেরই দায়ী করেছেন রেল কর্তাদের অনেকেই। তবে নতুন এই নির্দেশনামাতে কর্তাদের বিশেষ পাত্তাই দেয়নি বোর্ড। সরাসরি জানিয়েছে, চার বছরের বেশি সময় ধরে যে সকল কর্মী রয়েছেন তাঁদের চলতি মাসের ১৫ তারিখের মধ্যে অন্যত্র বদলি করে রিপোর্ট দাখিল করতে বলা হয়েছে।
[কোর্টের নির্দেশে চাকরি ফিরে পেলেন এইচআইভি আক্রান্ত মহিলা]
দক্ষিণ-পূর্ব রেলের প্রাক্তন সিসিএম কৌশিক মুখোপাধ্যায় স্পষ্ট করে বলেন, এই আইন পুরনো। তবে আইন মেনে বদলি করার ক্ষমতা অফিসারদের নেই বললেই হয়। তিনি ১৯৯৬-৯৭ সালে হাওড়ার সিনিয়র ডিসিএম থাকাকালীন হাওড়া পার্সলে ২০-২৫ বছর ধরে থাকা ৫০ জনকে বদলি করে ছিলেন। এর পরেই পার্সলে কাজ বন্ধ হয়ে যায়। বন্ধ হয়ে যায় লোডিং-আনলোডিং। মাছ, তরকারির মতো পচনশীল সামগ্রী পচে দুর্গন্ধ ছড়াতে থাকে। এরপর ডিআরএম কৌশিকবাবুকে রীতিমতো ধমকে তাঁর অর্ডারের উপর স্থগিতাদেশ দেন বলে তিনি এদিন জানান। পার্সেল নিয়ে ভিজিল্যান্সের অসংখ্য অভিযোগ রয়েছে। তবু আধিকারিকরা নীরব থেকেছেন। পণ্য চলাচল বন্ধের আশঙ্কাতেই। পাশাপাশি রেলের কমার্শিয়াল বিভাগের আধিকারিকদের একাংশ দুর্নীতির সঙ্গে সরাসরি যুক্ত। রেলের আইনে রয়েছে এক জায়গার থেকে বদলি হয়ে যাওয়া কর্মীকে সেখানে আর আনা যাবে না (সিপিও অর্ডার নম্বর ৪৯ বাই ৮৬)। অথচ বদলি হয়ে যাওয়া কর্মীদের কিছুদিনের মধ্যেই সেখানে ফিরিয়ে আনা হয়। এজন্য কোনও আইনের তোয়াক্কা করেন না আধিকারিকরা। বোর্ডের এই নির্দেশকে খুব বড় করে দেখছে না কর্মী সংগঠন।
[ইসরোর মুকুটে নয়া পালক, সফলভাবে আকাশে উড়ল ‘বিগ বার্ড’]
পূর্ব রেলের ইআরএমইউ-এর সাধারণ সম্পাদক বিনোদ শর্মা বলেন, দিল্লিতে যাচ্ছি আলোচনা করতে। তারপর দেখা যাবে কী পদক্ষেপ করা হবে। অভিযোগ, রেলকর্মীরা মেজর পেনাল্টি চার্জশিটকেও পাত্তা দেয় না। একমাত্র তাঁদের ভয়, বদলি। তা রুখতে সব প্রচেষ্টা চালাবেন কর্মীরা।
The post আর্থিক দুর্নীতি ঠেকাতে টিসি, টিটিইদের বদলির সিদ্ধান্ত রেলের appeared first on Sangbad Pratidin.