স্টাফ রিপোর্টার: ‘সূর্য নমস্কারের প্রতিবাদ করলে ভারত ছাড়ার জন্য তৈরি থাকুন।’ নিন্দা, ধিক্কার আর সমালোচনায় সওয়ার হয়ে প্রচারের পাদপ্রদীপে এসেছিলেন যোগী আদিত্যনাথ। প্রায় দুদশকের রাজনীতিতে দলের মধ্যে নিজেকে ‘কট্টর হিন্দুবাদী’ হিসাবে প্রমাণ করার পুরস্কার পেয়েছিলেন ২০১৭-য়। মাত্র ৪৪ বছর বয়সে দেশের সবচেয়ে বড় রাজ্য উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী পদের জন্য তাঁকেই বেছে নিয়েছিল বিজেপি।
সাতবছর পর সরযূতীরে প্রমাণ হল, হিন্দুত্ববাদে নরেন্দ্র মোদির যোগ্য উত্তরসূরি তিনিই– যোগী আদিত্যনাথ। এমনকী, দলের দ্বিতীয় কমান্ড-ইন-চিফ অমিত শাহকেও পিছনে ফেললেন তিনি। সোমবার অযোধ্যায় বহু প্রতীক্ষিত রাম জন্মভূমি মন্দির উদ্বোধনের অনুষ্ঠান থেকে বহুদূরে শাহ যখন দিল্লির শ্রীলক্ষ্মীনারায়ণ মন্দিরে আরতি করছেন, তখন তাঁকে সরিয়ে মোদির পাশে নিজের উজ্জ্বল উপস্থিতি প্রমাণ করতে ব্যস্ত যোগী। মুখে যুদ্ধজয়ের হাসি। ইনি সেই যোগী, যিনি তাঁর রাজ্যে সুষ্ঠুভাবে রামমন্দির গড়ার প্রধান কারিগরই নন, পুরো অনুষ্ঠানটিকে সফল করারও কমান্ড-ইন-চিফ।
যাঁরা রাজনীতি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করেন, একবাক্যে স্বীকার করছেন, ভবিষ্যতে মোদির একমাত্র বিকল্প যোগী আদিত্যনাথ। আর এদিন অযোধ্যাতেই তা আরও স্পষ্ট হল। হবে না-ই বা কেন, ২৬ বছরের সংসদীয় রাজনীতিতে নিজেকে যোগ্য সংগঠক হিসাবে তো আগেও প্রমাণ করেছন তিনি। এদিন মন্দিরে রামলালার প্রাণপ্রতিষ্ঠার পর যোগী বলেন, “সম্ভবত বিশ্বের আর কোনও দেশেই সংখ্যাগরিষ্ঠ সম্প্রদায়কে তাদের ঈশ্বরের জন্মভূমিতে মন্দির নির্মাণের জন্য এত সংগ্রাম করতে হয়নি। আজ, সমস্ত সাধু-সন্ন্যাসীর সংগ্রামের পর, সেই শুভমুহূর্ত এসেছে। ভগবান রামের মন্দির সেই জায়গাতেই তৈরি হয়েছে, যেখানে আমরা তা নির্মাণের সংকল্প করেছিলাম।” তিনি আরও বলেন, “এখন অযোধ্যার গলিতে আর গুলি চলবে না। বদলে গলিতে গলিতে মানুষ রামভজন গাইবে। অযোধ্যায় আসতে কাউকে বাধা দেওয়া হবে না। অযোধ্যা-সহ সারা দেশে রামরাজ্য প্রতিষ্ঠা হবে।”
[আরও পড়ুন: মুখে ‘জয় শ্রীরাম’ ধ্বনি, শুটিং ছেড়েই গেরুয়া পতাকা হাতে নাচ রাজপাল যাদবের]
হিন্দুত্ববাদের হাত ধরে উত্থান যে দলের, আজকের পর তাদের কাছে জরুরি ‘আরও কট্টর হিন্দুত্ববাদ’। এ ক্ষেত্রে রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘের গুডবুকে এসে গিয়েছেন যোগী। বিজেপিতে প্রথমে নেতৃত্বে ছিলেন অটলবিহারী বাজপেয়ী ও লালকৃষ্ণ আদবানি। বাজপেয়ী উদারমনা হলেও আদবানিকে সবাই কট্টর হিন্দুত্ববাদী হিসাবেই জানে। এরপর নেতৃত্ব দিয়েছেন আদবানি আর নরেন্দ্র মোদি। দুজনেই কট্টর হিন্দুত্ববাদী বলে পরিচিত। এখন দলের নেতৃত্বে নরেন্দ্র মোদি ও অমিত শাহ। তাঁরা দুজনেই কট্টর হিন্দুত্ববাদী বলে পরিচিত। কিন্তু আরও কট্টর হিন্দুত্ববাদী হিসাবে যদি একজনকে বাছতে হয়, তিনি ‘ফায়ার ব্র্যান্ড’ যোগী। গোরক্ষপুরের প্রধান পুরোহিতের রেকর্ডই সে কথা বলে। ২০১৫ সালে সংখ্যালঘুদের হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছিলেন, “সূর্য নমস্কারের প্রতিবাদ করলে ভারত ছাড়ার জন্য তৈরি থাকুন।” এই যোগীই তার দশ বছর আগে শুদ্ধিকরণের ডাক দিয়েছিলেন। ধর্মান্তরিত খ্রিস্টানদের হিন্দুধর্মে পুনর্ধর্মান্তরকরণ। ২০০৭ সালে মহরমের দিন ‘অহিংস’ ধরনায় বসে পড়েছিলেন গেরুয়াধারী আগাগোড়া সন্ন্যাসী এই রাজনৈতিক নেতা। ক্রমে বিজেপির হিন্দুত্বের মোড়কে উন্নয়ন কর্মসূচির ম্যাসকট হয়ে ওঠেন তিনি। এই যোগীর বিরুদ্ধে দাঙ্গায় প্ররোচনার অভিযোগ রয়েছে। ২০০২ সালে যোগী প্রতিষ্ঠা করেন হিন্দু যুব বাহিনী। একে সামাজিক-সাংস্কৃতিক মঞ্চ হিসাবে তুলে ধরা হলেও, আসলে এর সদস্যরা অস্ত্রপ্রশিক্ষণ প্রাপ্ত, গো-রক্ষা ও ‘লাভ-জিহাদ’ রুখতে কাজ করে। সর্বত্র তাদের অদৃশ্য উপস্থিতি। নিজেকে হিন্দুত্ববাদী বলে তুলে ধরতে চাইলেও, প্রমাণ করার জন্য যোগীর মতো এত ‘কৃতিত্ব’ শাহর নেই।