অর্ণব আইচ: প্যাকেটের গুঁড়ো মশলায় দেদার মেশানো হচ্ছে শিল্প রং বা ‘ইন্ডাস্ট্রিয়াল কালার’। গুঁড়ো মশলার কারখানা থেকেই পুলিশ উদ্ধার করেছে এমন রং, যার প্যাকেটের লেবেলে স্পষ্টই উল্লেখ করা রয়েছে যে, এই রং বিষাক্ত, শিল্পের ব্যবহারের জন্য ও খাওয়ার যোগ্য নয়। অথচ কলকাতার বাজারে এই ধরনেরই ‘বিষাক্ত’ হলুদ বা লঙ্কাগুঁড়ো ছড়িয়ে পড়ছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
ইতিমধ্যে কলকাতা পুলিশের এনফোর্সমেন্ট শাখার হাতে রং মেশানো ভেজাল মশলা উদ্ধার হয়েছে। আবার অনেক সময়ই গুঁড়ো হলুদে ভেজাল হিসাবে মেশানো হচ্ছে চালের গুঁড়ো। কাঠ অথবা ধানের তুষের গুঁড়োও সূক্ষ্ম করে মেশানো হচ্ছে লঙ্কাগুঁড়োয়। এই ক্ষেত্রে হলুদ বা শুকনো লঙ্কা বাটনা অথবা মিক্সিতে বেটে খাওয়ার পরামর্শ দিচ্ছেন বিশেষজ্ঞরাই। পুলিশ জানিয়েছে, গত বছর অভিযোগ পেয়ে একাধিকবার কলকাতা পুলিশের এনফোর্সমেন্ট শাখা মধ্য কলকাতা ও উত্তর কলকাতার কয়েকটি জায়গা থেকে উদ্ধার করে সন্দেহজনক হলুদ ও লঙ্কাগুঁড়ো। গত ডিসেম্বরে মধ্য কলকাতার পোস্তা এলাকা থেকে গোয়েন্দারা হলুদগুঁড়ো, লঙ্কাগুঁড়ো, ধনেগুঁড়ো, মৌরি উদ্ধার করেন। মাস দুয়েক আগে ইবির গোয়েন্দাদের হাতে রিপোর্ট এসে পৌঁছয়। জানানো হয় যে, ওই মশলা খাবারের জন্য একেবারেই নিরাপদ নয়। তারই ভিত্তিতে পুলিশ ওই সংস্থার মালিককে গ্রেপ্তার করে।
[আরও পড়ুন: পাড়ায়-পাড়ায় বেসরকারি চিকিৎসাকেন্দ্র খোলা এখন আরও সহজ, বিধানসভায় পাশ বিল]
হুগলির ডানকুনিতে একটি মশলার কারখানা থেকে উদ্ধার হয় প্রচুর ভেজাল মশলা। এর পরের দফায় কয়েক মাস আগে ইবি পোস্তার কে কে টেগোর স্ট্রিটে তল্লাশি চালায়। ১৬ কিলোর উপর হলুদ গুঁড়ো, সাড়ে ২৮ কিলো লঙ্কা গুঁড়ো উদ্ধার হয়। ওই মশলা পাঠানো হয় পরীক্ষাগারে। সম্প্রতি ওই মশলার রিপোর্ট আসে ইবি-র গোয়েন্দাদের হাতে।
রিপোর্টে উল্লেখ করা আছে যে, এই মশলায় কমলা ও লাল রং মেশানো আছে। এই মশলা মানুষের পেটে গেলে ক্ষতি হওয়ার সম্ভবনা রয়েছে। তাই এই মশলা খাবার অযোগ্য ও নিরাপদ নয়। এই রিপোর্টের ভিত্তিতে পোস্তার ওই মশলার গোডাউনের মালিককে হাওড়া থেকে ইবি গ্রেপ্তার করেছে। ওই মশলার কারখানায় পুলিশ তল্লাশি চালাচ্ছে।
বিভিন্ন মশলার কারখানায় তল্লাশি চালিয়ে গোয়েন্দারা উদ্ধার করেন বেশ কিছু রঙের প্যাকেট। ওই রং যে সম্পূর্ণ শিল্পের জন্য তৈরি ও খাবার অযোগ্য এবং বিষাক্ত, তা রঙের প্যাকেটেই উল্লেখ করা রয়েছে। সেখানে হলুদ বা কমলা ও লাল রং দেদার ব্যবহার করা হচ্ছে ভেজাল মশলা তৈরির জন্য।
এমনকী, ওই রং মেশানো মশলার প্যাকেট হাতে নিয়ে গোয়েন্দারা দেখেছেন যে, তাঁদের হাতে লেগে যাচ্ছে ওই রং। সহজে তা উঠছে না। ওই ভেজাল মশলাই প্যাকেটজাত করা হচ্ছে। ওই ভেজাল মশলার প্যাকেট পৌঁছে যাচ্ছে কলকাতা ও বিভিন্ন জেলার দোকানে। যাচ্ছে ভিনরাজ্যেও। ওই ভেজাল মশলায় রং থাকার কারণে তরকারিও বেশি হলুদ ও লাল হচ্ছে।