রূপায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়: সদস্য সংগ্রহ কর্মসূচিতে 'নিষ্ক্রিয়' বিজেপি বিধায়করা! তাঁদের ভূমিকায় চরম ক্ষুব্ধ বঙ্গ বিজেপির কেন্দ্রীয় পর্যবেক্ষক সুনীল বনশল। তাঁর ধমকের পরই তড়িঘড়ি বিধায়কদের নিয়ে বৈঠক করলেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। বুধবার বিজেপির রাজ্যদপ্তরে এই বৈঠকে দলের তরফে রাজ্য সাধারণ সম্পাদক (সংগঠন) অমিতাভ চক্রবর্তী থেকে সহকারী সংগঠন সম্পাদক সতীশ ধনদ আজ থেকেই বিধায়কদের সদস্য সংগ্রহের কাজে নামার নির্দেশ দিয়েছেন। তখন বিধায়কদের তরফেও পালটা বলা হয়েছে, কেন্দ্রীয় পর্যবেক্ষক সুনীল বনশলের সঙ্গে তাঁদের বৈঠক বসার ব্যবস্থা করার জন্য।
সূত্রের খবর, বিজেপি পার্টির সঙ্গে পরিষদীয় দলের সমন্বয়ের অভাব যে বহুদিন থেকেই রয়েছে তা বারেবারে সামনে এসেছে। জেলার নেতৃত্বের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট জেলার বিধায়কদের মধ্যে সমন্বয়ের অভাব রয়েছে। আর সেটাও মূলত এই বৈঠকে বিধায়করা তুলেছেন বলে খবর। অন্যদিকে আবার দলের তরফেও অভিযোগ ছিল, বিধায়করা এলাকায় সংগঠনের কাজে সময় দেয় না। পার্টির তরফে যখন বিধায়কদের নির্দেশ, নিষ্ক্রিয়তা ছেড়ে দ্রুত সদস্য সংগ্রহের কাজে নামতে হবে। নিজেদের বিধানসভা এলাকায় দলের সঙ্গে সমন্বয় বাড়াতে হবে। প্রয়োজনে জেলা ও মণ্ডল সভাপতিদের সঙ্গে বৈঠক করতে হবে। পালটা বিধায়করাও দাবি তুলেছেন, তাঁরাও সাংগঠনিক বিষয় নিয়ে কথা বলতে চান কেন্দ্রীয় পর্যবেক্ষক সুনীল বনশলের সঙ্গে। বৈঠক সূত্রে এমনটাই খবর।
সম্প্রতি রাজ্য নেতাদের নিয়ে এক বৈঠকে সংগঠনের কাজ ও সদস্য সংগ্রহে ব্যর্থতার জন্য দলের বিধায়কদের কাঠগড়ায় তুলেছিলেন সুনীল বনশল। একইসঙ্গে সদস্য সংগ্রহের পারফরম্যান্সে সাংসদদের ভূমিকা নিয়েও চরম অসন্তোষ প্রকাশ করে একাধিক সাংসদকে কার্যত ভর্ৎসনা করেছেন তিনি। বিধায়কদের মাঠে নামাতে বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর উপর ভরসা রেখেছিলেন কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব। টিম শুভেন্দু অর্থাৎ শুভেন্দুর নেতৃত্বে বঙ্গ বিজেপির বিধায়কদের নিয়ে আলাদা করে বৈঠকে বসার সিদ্ধান্ত হয়েছিল। সেই মতো এদিন বৈঠক হয়। শঙ্কর ঘোষ, অগ্নিমিত্রা পাল, বঙ্কিম ঘোষ, বিশাল লামা থেকে শুরু করে বিশ্বনাথ কারক—সহ প্রায় সমস্ত বিধায়করাই উপস্থিত ছিলেন। বনশলের সঙ্গে বিধায়কদের বৈঠকের সম্ভাবনা ডিসেম্বরের শেষের দিকে। তার আগে অবশ্য শুভেন্দু বসবেন বনশলের সঙ্গে।
ইতিমধ্যেই সদস্য সংগ্রহের সময় বঙ্গ বিজেপির জন্য বাড়িয়ে ৩১ ডিসেম্বর করা হয়েছে। সার্বিকভাবে বাংলায় বিজেপির সদস্য সংগ্রহের চিত্র সন্তোষজনক নয়। কিন্তু যেটুকু সদস্য সংগ্রহ হচ্ছে তাতে দলের বিভিন্ন জেলার মধ্যে আবার লড়াই শুরু হয়েছে। প্রথম হওয়ার দৌড়ে ছুটছে একাধিক জেলা। সদস্য সংগ্রহের প্রতিদিনের তথ্য কেন্দ্রীয়ভাবে জমা পড়ছে বিশেষ অ্যাপে।
সদস্য সংগ্রহ অভিযান শুরুর কিছু পর থেকেই প্রথম স্থান দখলে কাঁটায় কাঁটায় লড়াই চলছিল দক্ষিণ দিনাজপুর ও নদিয়া দক্ষিণ সাংগঠনিক জেলার মধ্যে। শেষপর্বে এসে বিজেপির রাজ্য সভাপতি তথা কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী সুকান্ত মজুমদার সমাজমাধ্যমে দাবি করেন সদস্য সংগ্রহে তাঁর জেলা পয়লা নম্বরে। অন্যদিকে, আবার সুকান্তের দাবি খারিজ করে দেন নদিয়ার এক বিজেপি নেতা। তাঁর দাবি, নদিয়া দক্ষিণ সাংগঠনিক জেলাই ‘ফার্স্ট বয়’ হওয়ার দৌড়ে এগিয়ে। ওই নেতার দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, গত শনিবার পর্যন্ত তাঁর জেলায় সদস্য সংগ্রহ হয়েছিল ১ লক্ষ ১৩ হাজার। সুকান্তের জেলায় ১০২টি বেশি ছিল। কিন্তু শেষমেশ সদস্য সংগ্রহের হিসেবে আবার এক নম্বরে চলে গিয়েছে রানাঘাট দক্ষিণ সাংগঠনিক জেলা। এইমুহূর্তে সদস্য সংগ্রহে প্রতিযোগিতা চলছে মূলত উত্তর ও দক্ষিণ দিনাজপুর, কাঁথি, নদিয়া উত্তর ও দক্ষিণ সাংগঠনিক জেলায়।