অর্ণব আইচ: এ যেন কেঁচো খুঁড়তে কেউটে! মানব পাচার কাণ্ডের তদন্তে নেমে রাজ্যের একাধিক পানশালা, রেস্তরাঁ থেকে কোটি টাকা উদ্ধার করল এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট। টাকার বান্ডিলের পাশাপাশি দামি গাড়িও বাজেয়াপ্ত করেছেন ইডির তদন্তকারীরা। সেসব দেখে কার্যত চক্ষুচড়ক গাছ তদন্তকারীদের! চিহ্নিত করা হয়েছে পাচারচক্রের মূল তিন মাথাকেও। ২০১৫ সালের এক মানব পাচার মামলার সূত্র ধরে শুক্রবার সকাল থেকে দক্ষিণ দমদমের এক ইঞ্জিনিয়ারের বাড়িতে তল্লাশি শুরু করেছিল কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা। ইডি সূত্রে খবর, এছাড়া রাজ্যের বিভিন্ন রেস্তরাঁ, পানশালাতও তল্লাশি চলে। দীর্ঘ সময় পর উদ্ধার হয়েছে এক কোটি টাকারও বেশি। বেআইনি লেনদেন হয়েছে, এমন বেশ কয়েকটি ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টও ইডির নজরে এসেছে বলে খবর।
ইডি সূত্রে খবর, মানব পাচারের তদন্তে নেমে প্রাথমিকভাবে জানা গিয়েছিল যে রাজ্যের বেশ কিছু পানশালা, রেস্তরাঁর আড়ালে এই অসাধু চক্র সক্রিয়। এসবকে আশ্রয় করে মানব পাচারের কাজ হয়। নির্দিষ্ট তথ্যের ভিত্তিতে সেসব পানশালা, রেস্তরাঁ চিহ্নিত করা হয়। এরপর শুক্রবার থেকে অ্যাকশনে নামে ইডি। শনিবার সেসব জায়গায় থেকে এক কোটি টাকারও বেশি নগদ অর্থ উদ্ধার হয়। বান্ডিল বান্ডিল টাকা গুনতে আনা হয় মেশিনও। এছাড়া কিছু ইলেকট্রনিক যন্ত্রাংশ এবং দুটি দামি গাড়ি বাজেয়াপ্ত করেছেন ইডি তদন্তকারীরা।
এই চক্রের মূল মাথা জগজিৎ সিং, আজমল সিদ্দিকি, বিষ্ণু মুন্দ্রা - তিনজনকে চিহ্নিত করা হয়েছে। তদন্তকারীরা জানতে পেরেছেন, এরা তিনজনই কোনও না কোনও পানশালা কিংবা রেস্তরাঁর মালিক। তারই আড়ালে মানব পাচারের কাজে সক্রিয় ভূমিকা ছিল এদের। শুধু তাই নয়, এটি একটি বড়সড় চক্র বলেও জানতে পেরেছে ইডি। কীভাবে কাজ করত এরা? জানা যাচ্ছে, পানশানা-রেস্তরাঁয় আসা মহিলাদের সঙ্গে আলাপ জমাত তিনজন। তাঁদের পরিস্থিতি বুঝেশুনে নিয়ে পাতা হতো ফাঁদ। চাকরি দেওয়ার নাম করে আসলে তাঁদের দেহব্যবসায় নামানো হতো। সেখান থেকে পাচারচক্রে জড়িয়ে পড়তেন ওই মহিলারা।
কিন্তু এত অর্থের জোগান কোথা থেকে? সেই রহস্যেরও সমাধান করেছেন ইডি তদন্তকারীরা। মূলত বড় বড় বহুজাতিক বেসরকারি সংস্থার হাত ধরে এত টাকা পেয়েছে জগজিৎ সিং, আজমল সিদ্দিকি, বিষ্ণু মুন্দ্রারা। কাদের সঙ্গে আর্থিক লেনদেন হতো, সেসব ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের হদিশও পেয়েছেন তদন্তকারীরা।
