অর্ণব আইচ: পরিকল্পনা করেই বালি খাদানের সরকারি টাকা তছরুপ করেছেন জিডি মাইনিংয়ের কর্ণধার অরুণ শরাফ ও তাঁর সংস্থা! যত ধরনের জালিয়াতি সম্ভব, তার সবটাই করা হয়েছে বলে দাবি কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার। বৃহস্পতিবার রাতে বালি পাচার কাণ্ডে প্রথম অভিযুক্ত হিসেবে অরুণ শরাফকে গ্রেপ্তার করেছে ইডি। তাঁকে দফায় দফায় জেরার পর এমনই বেশ কিছু চাঞ্চল্যকর তথ্য এসেছে ইডির হাতে। কেন্দ্রীয় তদন্তকারীরা জানাচ্ছেন, ওয়েস্টবেঙ্গল স্যান্ড (মাইনিং, ট্রান্সপোর্ট, স্টোরেজ ও সেল) বা WBMDTCL-এর সমস্ত নিয়মাবলিকে কার্যত বুড়ো আঙুল দেখিয়ে বালি খনন এবং তা বিক্রি করে বিপুল মুনাফা লুটেছেন অরুণ শরাফ। শুক্রবার তাঁকে ইডির বিশেষ আদালতে পেশ করে ১৩ দিনের হেফাজতের আবেদন জানান আইনজীবী। অন্যদিকে, অরুণবাবুর আইনজীবী তাঁর জামিনের আবেদনই করেননি।
জানা গিয়েছে, বালি খনন থেকে বিক্রি - সব কিছুর জন্য প্রয়োজন WBMDTCL সরকারি পোর্টাল থেকে তৈরি হওয়া অভ্যন্তরীণ পারমিট এবং রোড চালান। কিন্তু অরুণ শরাফ ও তাঁর সংস্থা জিডি মাইনিং প্রাইভেট লিমিটেড সরকারি পারমিট ও রোডের ই-চালান ছাড়াই লক্ষ লক্ষ ঘনফুট বালি খনন ও বিক্রি করেছে। সংস্থার হিসেবরক্ষকের বয়ানে উঠে এসেছে চাঞ্চল্যকর তথ্য। ইডি আধিকারিকদের দাবি, হিসেবরক্ষক ইডিকে জানিয়েছেন, অরুণ শরাফের সংস্থা যেখানে বালি খনন করে, সেখানকার কোনও স্টক রেজিস্ট্রার ছিল না, শুধুমাত্র এক্সেল শিটে রেকর্ড রাখা হত। সরকারের প্রাপ্য রয়ালিটি না দিয়ে এবং সরকারি পোর্টাল থেকে দেওয়া চালান ছাড়াই বেআইনিভাবে কাজ হয়েছে।
ইডির দাবি, ২০২৪-এর ডিসেম্বর থেকে ২০২৫ সালের মার্চ পর্যন্ত প্রায় ১৯ লক্ষ ঘনফুট বালি অবৈধভাবে বিক্রি করেছে অরুণ শরাফের সংস্থা। তাতে অন্তত ৭৯ কোটি সরকারি টাকা আত্মসাৎ করেছেন অরুণ শরাফ। এই সংস্থার ব্যাঙ্কের হিসেবেও গরমিল রয়েছে অভিযোগ ইডির। জানা যাচ্ছে, ২০২৪-২৫ অর্থবর্ষে সংস্থার ব্যাঙ্কে জমা পড়েছিল ১৩০ কোটি টাকা। কিন্তু বালি বিক্রি করে ১০৩ কোটি টাকা জমা করা হয়েছে ব্যাঙ্কে।
শুক্রবার অরুণ শরাফকে ১৩ দিনের হেফাজতে চেয়ে আবেদন করা হয়েছে ইডির তরফে। বিচারক জানতে চান তদন্তকারী অফিসার, কেস ডায়েরি আছে কিনা। এরপর অরুণ শরাফের আইনজীবী জানান, ''আমরা কোনও জামিনের আবেদন করছি না।'' ইডির তরফে আদালতে সওয়াল করা হয়, বালি খনন ও বিক্রি করার ক্ষেত্রে সরকারি ই-চালান দরকার। কিন্তু এঁরা সেই চালান নেননি, নিজেরা জাল চালান তৈরি করে বিক্রি করেছেন। সরকারকে ফাঁকি দিয়ে সরকারি টাকা আত্মসাৎ করা হয়েছে সম্পূর্ণ পরিকল্পনা করে। রেকর্ড না রেখে বালি বিক্রি করা হয়েছে, যাতে পুরো টাকা আত্মসাৎ করা যায় - এই ছিল লক্ষ্য। দুই অর্থবর্ষ মিলিয়ে মোট ৬০ কোটি টাকার হিসেব স্পষ্ট করতে পারেনি জিডি মাইনিং, অভিযোগ ইডির। তদন্তকারীদের আশা, অরুণ শরাফ জালে আসায় দ্রুতই বালি পাচার কাণ্ডের কিনারা হবে।
