স্টাফ রিপোর্টার: মাটি, গাছ, অরণ্য, ঝরনা, টিলা। পাশাপাশি স্থানীয় আদিবাসী, লোকশিল্পী সমেত আস্ত একটা জঙ্গুলে জনপদ। সেটাই উঠে আসছে খাস কলকাতার নামী পুজোয়। এযেন ইট-কাঠ-পাথরের শহরের সঙ্গে সবুজ গন্ধমাখা অরণ্যের এক অনন্য মেলবন্ধন। এমনই ব্যতিক্রমী প্রয়াস এবার ডানা মেলছে সুকিয়া স্ট্রিটের ওই রামমোহন সম্মিলনীর দুর্গাপুজোয় (Durga Puja)। যার উদ্বোধন হতে চলেছে থিম বর্ণিত সেই অঞ্চলেই, যা কিনা মণ্ডপ থেকে ১৮১ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। জাহের থান ঘেঁষা ঝাড়গ্রামের রবীন্দ্রকানন। এবং উদ্বোধন হয়ে যাচ্ছে পুজোর প্রায় তিনমাস আগেই, আগামী ১৬ জুলাই। এই প্রথম কোনও পুজোর থিম প্রকাশ পাচ্ছে থিমের মূল উৎসে!
অবশ্যই নজরকাড়া ঘটনা। এমন চমক আগে কোনও পুজো উদ্যোক্তার মাথায় আসেনি। সেই অভূতপূর্ব ঘটনা এবার তুলে আনছে রামমোহন সম্মিলনী। উত্তর কলকাতার (North Kolkata) এপিসি রোড ধরে খানিকটা এগিয়ে ডানদিকে ঘুরলেই তাদের মণ্ডপে উঠে আসবে ঝাড়গ্রাম, বাঁশপাহাড়ি, ভুলাভেদা, বেলপাহাড়ি, শিলদা, জামবনি ঘেরা জঙ্গলমহল। আগামিকাল, শনিবারের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকবেন এ পুজোর মুখ্য উপদেষ্টা মন্ত্রী বিরবাহা হাঁসদা। তিনিই কার্যত ‘ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসাডর’। রামমোহন সম্মিলনীর সদস্য, প্রাক্তন সাংসদ, সাংবাদিক কুণাল ঘোষও থাকবেন। অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকবেন জঙ্গলমহলের বিশিষ্ট নাগরিকরা।
[আরও পড়ুন: শরীরে একাধিক ক্ষত, ডুয়ার্সের চা বাগানে উদ্ধার মৃত চিতাবাঘ, পাশে পড়ে ছাগলের দেহ]
রামমোহন সম্মিলনীর সদস্য অনির্বাণ সেনগুপ্ত জানিয়েছেন, শাল, পিয়াল, মহুয়া, জারুলের উপত্যকা, দুন্দুভির দ্রিম দ্রিম শব্দ, পিন পড়লে আওয়াজ পাওয়া যায় এমন নিস্তব্ধতা অনুভব করা যাবে উত্তর কলকাতার বুকে। পিচ রাস্তায় কান পাতলেই শোনা যাবে, ‘ধামসা বানায় দে, একটা মাদল কিনে দে…।’ জঙ্গলমহলের শিল্পীরাও হাজির থাকবেন মণ্ডপ তল্লাটে।
সুকিয়া স্ট্রিটের রামমোহন সম্মিলনী দশভুজার আহ্বান এবার ৭৮ বছরে। পুজোয় তাদের থিম ‘জঙ্গলকন্যার জগৎ।’ শিল্পী তাপসী সাহা চক্রবর্তী দশ আঙুলে তিল তিল করে তৈরি করেছেন জঙ্গলকন্যাকে। যে কন্যা তাঁর বুকে ধরে আছে মুণ্ডা, লোধা, শবর, কুরমি, খেড়িয়া, বাগদিদের। এ পুজোর মস্তিষ্ক যেহেতু জঙ্গলমহল, তাই থিমের উদ্বোধন সেখানেই। জঙ্গলমহলে যেমন নিকোনো উঠোনের মাটির বাড়ি দেখা যায়, মণ্ডপ হবে তেমনই মাটির তৈরি। শিল্পীর হাতে মন্ত্রী নিজের হাতে তুলে দেবেন জঙ্গলমহলের মাটি। নিয়ে আসা হবে চারাগাছ। জঙ্গলমহলের বিটপীর ঘ্রাণ পাওয়া যাবে সুকিয়া স্ট্রিটের অলিতে গলিতে। জঙ্গুলে জনপদ, সেখানকার আদিবাসীরা যখন থাকবেন কী করে দূরে থাকেন মারাং বুরু? সাঁওতালদের প্রধান দেবতা। আদিবাসীরা বলছেন, খোদ মারাং বুরুর আশীর্বাদে এবার সুকিয়া স্ট্রিটের পুজো ‘বেড়ে গাবদাঘাটা’ হবে।