shono
Advertisement

বাবাকে নৃশংসভাবে খুনের পর বিয়ের পিঁড়িতে মেয়ে! ৬ মাস পর গ্রেপ্তার নববিবাহিতা যুবতী

৬ মাস পর প্রকাশ্যে এল গোটা ঘটনা।
Posted: 09:24 PM May 08, 2021Updated: 09:24 PM May 08, 2021

অর্ণব আইচ: মদ্যপান করে বাড়িতে এসে গালিগালাজ করতেন বাবা। বাবার কীর্তি নিয়ে যখন প্রতিবেশীরা আলোচনা করে মুখ টিপে হাসতেন, তখন কেঁদে ভাসাত মেয়ে। বাবার এই কীর্তির জন্য একবার বিয়েও ভেঙে গিয়েছিল মেয়ের। শেষপর্যন্ত শোধ তোলে মেয়ে। কেউ বাড়িতে না থাকার সুযোগে বাবাকে গলা টিপে খুন করে সে। বাবার মৃত্যুশোক ভুলে এপ্রিল মাসে বিয়েও করেছিল মেয়ে। কিন্তু বিবাহিত জীবন আর সুখের হল না। ৬ মাস পর হাতে আসা ময়নাতদন্তের রিপোর্টেই ঘুরল রহস্যের মোড়। সন্দেহের বশে টানা তিনদিন ধরে মেয়েকে জেরার পর শেষমেশ গ্রেপ্তার করলেন লালবাজারের গোয়েন্দারা। বিয়ের তিন সপ্তাহের মধ্যে পূর্ব কলকাতার আনন্দপুর (Anandapur PS) থানা ও লালবাজারের (Lalbazar) গোয়েন্দা বিভাগের হোমিসাইড শাখার যৌথ তদন্তে পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হল মেয়ে মৌমিতা মাঝি। শ্বশুরবাড়ি জানল, তাঁদের বাড়ির বউ আসলে বাবাকে খুনের অভিযুক্ত।

Advertisement

কিছুদিন আগেই উত্তর বন্দর এলাকার চাঁদপাল ঘাটে বাবাকে পুড়িয়ে খুন করার অভিযোগ উঠেছিল মেয়ের বিরুদ্ধে। ফের কলকাতায় সামনে এল অনেকটা একই রকমের ঘটনা। পুলিশ জানিয়েছে, এই ঘটনার সূত্রপাত গত বছরের ২ নভেম্বর। আনন্দপুর থানা এলাকার চৌবাগা মাঝিপাড়ার বাসিন্দা বাপি মাঝি ছিলেন সবজি বিক্রেতা। তাঁর স্ত্রী সুষমা ছেলেকে নিয়ে কাছেই একটি ছোট খাবার দোকান চালান। মেয়ে মৌমিতা উচ্চ মাধ্যমিক পাস করে আর পড়াশোনা করতে পারেনি। বাপি মাঝি প্রত্যেকদিন মদ খেয়ে বাড়ি ফিরে গোলমাল করতেন। চলত অশ্রাব্য গালিগালাজ, পরিবারের লোকেদের মারধরও। স্ত্রী ও মেয়ের বারণ কানে নিতেন না বাপি। পাড়ার লোকেরা বাপির আচরণ নিয়ে হাসাহাসিও করতেন। তা পছন্দ করত না মৌমিতা। বছর দু’য়েক আগে একবার ২১ বছরের মৌমিতার বিয়ের দেখাশোনা হয়। কিন্তু বাবা শুনে বিয়েও ভেঙে দেন পাত্রের বাড়ির লোকেরা।

[আরও পডুন: রাজ্যপালের তলবে হাজির হলেও সঙ্গে নেই রিপোর্ট, মুখ্যসচিব, ডিজির উপর ‘বিরক্ত’ ধনকড়]

গত ২ নভেম্বর বিকেলে সবজি বিক্রি করে বাড়ি ফেরেন বাপি। তখন বাড়িতে ছিলেন পরিবারের অন্যরা। তাঁদের বাপি জানান, অনেকক্ষণ কিছু খাননি বলে তাঁর বুকে ব্যথা করছে। তিনি ঘুমিয়েও পড়েন। সুষমা ছেলেকে নিয়ে দোকানে যান। সন্ধ্যা সাড়ে সাতটা নাগাদ মেয়ে মৌমিতা মায়ের দোকানে যায়। এক ঘণ্টা পর বাড়ি ফেরে। পৌনে ন’টা নাগাদ সুষমা ছেলেকে নিয়ে বাড়ি ফিরে দেখেন, সামনের ঘরে মেঝেয় পড়ে রয়েছেন স্বামী বাপি। ভিতরের ঘরে মৌমিতা। স্বামী ঘুমোচ্ছেন মনে করে তাঁকে ডাকতে যান। তখনই বুঝতে পারেন, তাঁর মৃত্যু হয়েছে। তিনি চেঁচিয়ে ওঠেন। প্রতিবেশীরা ছুটে আসেন। আনন্দপুর থানায় খবর যায়। পুলিশ দেহটি কলকাতা ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে তাঁকে মৃত বলে ঘোষণা করা হয়। ময়নাতদন্তের পর বাপির শেষকৃত্য হয়।

এর কয়েকমাসের মধ্যে আনন্দপুরের ভিআইপি নগরের বাসিন্দা এক যুবকের সঙ্গে মৌমিতার বিয়ের কথা হয়। গত ১৬ এপ্রিল মৌমিতার বিয়ে হয়। কিন্তু গত ২৪ এপ্রিল ঘটনার মোড় ঘোরে। আনন্দপুর থানার হাতে আসে ময়নাতদন্তের রিপোর্ট। তাতে জানানো হয় যে, গলা টিপে হত্যা করা হয়েছে ওই ব্যক্তিকে। প্রাথমিকভাবে তদন্তের পর লালবাজারের গোয়েন্দাদের ধারণা হয়, বাড়ির লোক বা পরিচিতরা ছাড়া এই খুন অন্য কারও কাজ নয়। শ্বশুরবাড়ি থেকে ডেকে মৌমিতাকে জেরা করা শুরু হয়। জেরার মুখে মৌমিতা বলে, সে বাবাকে শুয়ে থাকতে দেখে সন্ধেবেলা মায়ের দোকানে চলে যায়। তখনই সম্ভবত বাইরের কেউ এসে খুন করে। কয়েকজন প্রতিবেশীদের জিজ্ঞাসাবাদ করে পুলিশ জানতে পারে যে, ঘটনার দিন সন্ধেবেলা ঘরের তালা বন্ধ করে মৌমিতা মায়ের দোকানে যায়। তার কাছে যে বাড়ির চাবি ছিল, তা স্বীকার করেন তাঁরা মা ও ভাই।

[আরও পডুন: আংশিক লকডাউনে কমেছে যাত্রী, ভাড়া বাড়ানোর দাবিতে মুখ্যমন্ত্রীকে চিঠি বাস মালিকদের]

তখন মৌমিতাকে বারবার গোয়েন্দারা জিজ্ঞাসা করতে থাকেন যে, বাবা ঘরে থাকা অবস্থায় কেন সে তালা দিয়ে বাইরে গিয়েছিল? যদি তালা দেওয়া থাকবে, তবে বাইরে থেকে এসে কেউ খুন করলই বা কখন? বাবা যদি ঘরের ভিতর ঘুমিয়েও থাকেন, তবে এর আগেও কি সে বাবাকে তালা দিয়ে বাইরে গিয়েছে? পর পর ছোড়া এই প্রশ্নবানে বিদ্ধ হয়ে একসময় ভেঙে পড়ে মৌমিতা। সে স্বীকার করে, মদ্যপ বাবার আচরণেই ক্ষুব্ধ হয়ে সে বাবাকে খুন করার ছক কষে। ২ নভেম্বর বাড়িতে কেউ না থাকা ও একইসঙ্গে বাবা অসুস্থ হয়ে ঘুমিয়ে পড়ায় এই কাজ সহজ হয়ে যায়। মৌমিতা পুলিশের কাছে স্বীকার করে যে, সন্ধে সাতটার কিছু পরই সে ঘুমন্ত বাবাকে গলা টিপে খুন করে। তাই ধস্তাধ্বস্তিরও কোনও চিহ্ন ছিল না। এরপর সাড়ে সাতটা নাগাদ বেরিয়ে মায়ের কাছে গিয়ে বসে। যেহেতু জানত যে, বাবা মৃত, তাই বাইরে থেকে কেউ যাতে ঘরে না আসেন, তাই তালা দিয়েই বের হয়। তার ধারণা ছিল, অসুস্থ মনে করে চিকিৎসকরা ডেথ সার্টিফিকেট দেবেন। সে ময়নাতদন্তের ব্যাপারটি ভেবে দেখেননি। আবার খুনের তদন্ত হলেও যে তাকে সন্দেহ করা হবে, তাও ভাবতে পারেনি মৌমিতা।
গ্রেপ্তার হওয়ার পর কান্নায় ভেঙে পড়ে মৌমিতা। এই ঘটনায় ভেঙে পড়েছেন তাঁর নববিবাহিত স্বামীও। ওই যুবক কখনও ভাবতে পারেননি যে, বিয়ের তিন সপ্তাহ পর জানতে পারবেন যে তাঁর স্ত্রী আসলে প্রয়াত শ্বশুরের ‘খুনি’। মৌমিতাকে জেরা করে আরও কিছু তথ্য জানার চেষ্টা হচ্ছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement