shono
Advertisement
SLST

রাজ্যের ভূমিকা সদর্থক, বাধা দিচ্ছেন বিকাশ! SLST নিয়োগ জটিলতায় ক্ষুব্ধ চাকরিপ্রার্থীরা

২৫ জন মামলাকারীর জন্য ১৬০০ শূন্যপদে নিয়োগ আটকে, শুনানিতে অভিযোগে সরব অ্যাডভোকেট জেনারেল।
Published By: Sucheta SenguptaPosted: 10:53 PM Feb 07, 2025Updated: 10:59 PM Feb 07, 2025

গোবিন্দ রায়: চাকরি দিতে রাজ্যের ভূমিকা সদর্থক। কিন্তু শুধুমাত্র আইনজীবী বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্যর বাধায় কর্মশিক্ষা-শারীরশিক্ষা বিভাগে নিয়োগ জট কাটল না কলকাতা হাই কোর্টে। এমনই অভিযোগে সরব চাকরিপ্রার্থীদের একাংশ। ২০১৬ সালের SLST-র মাধ‌্যমে কর্মশিক্ষা ও শারীরশিক্ষার চাকরিপ্রার্থীদের নিয়োগের প্যানেল প্রস্তুত হয়েছিল। অধিকাংশ চাকরিপ্রার্থী নিয়োগপত্রও পেয়ে গিয়েছিলেন। কিন্তু মাত্র কয়েকজন অযোগ্য প্রার্থীর করা নতুন মামলায় আটকে রয়েছে গোটা নিয়োগ প্রক্রিয়া।

Advertisement

কর্মশিক্ষা-শারীরশিক্ষায় শিক্ষক নিয়োগের জন্য রাজ্য সরকার শূন্যপদ তৈরি করেছিল। পর্ষদও হলফনামা দিয়ে জানিয়েছে যে, এই প্যানেল বৈধ। কিন্তু নিয়োগ পাওয়া যোগ্য চাকরিপ্রার্থীদের দাবি, বারবার বাধা হয়ে দাঁড়াচ্ছেন বামনেতা তথা আইনজীবী বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য ও তাঁর জুনিয়রা। শুক্রবারও বিচারপতি বিশ্বজিৎ বসুর এজলাসে এই সংক্রান্ত মামলার শুনানিতে তাঁদের দাবি ছিল, "মামলা সুপ্রিম কোর্টে বিচারাধীন। শীর্ষ আদালতে না শেষ হওয়া পর্যন্ত হাই কোর্টের এই মামলার শুনানি স্থগিতাদেশ দেওয়া হোক।" আরও দাবি করা হয়, "দুই আদালতে দুই রকম অবস্থান নিচ্ছে রাজ্য। শীর্ষ আদালতকে সম্পূর্ণ অন্ধকারে রেখে একরকম বলা হচ্ছে। আর হাই কোর্টে আরেক রকম। দুর্নীতিকে প্রশ্রয় দিতে অতিরিক্ত শূন্যপদ তৈরি করা হয়।"

যদিও রাজ্যের তরফে এই নিয়োগ জট কাটাতে এদিন সদর্থক ভূমিকা নেন রাজ্যের অ্যাডভোকেট জেনারেল কিশোর দত্ত। তাঁর বক্তব্য, "এনিয়ে হাই কোর্টে জোড়া হলফনামা জমা দেওয়া রয়েছে। শীর্ষ আদালতের সঙ্গে এই মামলার কোনও সম্পর্ক নেই। একটা মেমো নম্বর ছাড়া এর সঙ্গে কোনও যোগ নেই।" এদিন আদালতে রাজ্য সরকারের ভূমিকায় খুশি যোগ্য চাকরিপ্রার্থীরা। তাঁদের বক্তব্য, "সরকারকে ধন্যবাদ। এজি-কে ধন্যবাদ। তাঁরা যথেষ্ট করেছেন। সুপ্রিম কোর্টে ১০ তারিখ এই মামলা আছে। এখন রায়ের অপেক্ষা।" তাঁরা আরও বলেন, "অযোগ্য প্রার্থীদের হয় মামলা করে বারবার বিকাশ রঞ্জন ভট্টাচার্য এই নিয়োগে বাধা হয়ে দাঁড়াচ্ছে। সুপ্রিম কোর্টের মামলার সঙ্গে এই মামলার একটা মেমো নম্বর ছাড়া এর সঙ্গে কোনো যোগ নেই। এর কোনও তদন্ত চলছে না।"

নিয়োগপত্র পেয়েও আইনি জটে কাজে যোগ না দিতে পারা এই সমস্ত চাকরিপ্রার্থীদের তরফে আইনজীবী অয়ন চক্রবর্তী, বিশ্বরূপ ভট্টাচার্য, আশিস কুমার চৌধুরিদের বক্তব্য, "শুধুমাত্র ২৫ জনের জন্য গোটা প্রক্রিয়া কেন আটকে থাকবে? যাঁদের চাকরি আটকে রয়েছে, তাঁরা প্রত্যেকেই যোগ্য।" আরও দাবি, এই কর্মশিক্ষা-শারীরশিক্ষায় নিয়োগ প্রক্রিয়ার সঙ্গে শীর্ষ আদালতে নবম-দশম ও একাদশ-দ্বাদশে নিয়োগ প্রক্রিয়ার ওই মামলার কোনও যোগ নেই। শুধুমাত্র একটা মেমো নম্বর কমন থাকার কারণে এই জটিলতা। এছাড়াও এই নিয়োগ প্রক্রিয়ায় এ পর্যন্ত কোনও দুর্নীতি কেউ আদালতে তুলে ধরতে পারেনি বলেও দাবি করা হয়। এক চাকরিপ্রার্থী জানান, "কোথায় পোস্টিং হবে, সেটা জানা থাকা সত্ত্বেও নিয়োগ প্রক্রিয়া আটকে আছে।" তার প্রেক্ষিতে আদালতের প্রাথমিক পর্যবেক্ষণে বিচারপতি বসু বলেন, “সবাই শিক্ষক হিসেবে কাজ করার জন্য নিয়োগপত্র চাইছেন। কিন্তু শিক্ষাক্ষেত্রের উন্নয়নের জন্য কেউ স্বতঃপ্রণোদিত ভাবে এগিয়ে আসেননি।”

২০২০ সালের শিক্ষানীতি এখনও বাস্তবায়িত হলো না কেন? এদিন তা নিয়ে প্রশ্ন তুলে বিচারপতি বসু বলেন, “কোথায় নিয়োগ হবে? জায়গা কোথায়? এমনও স্কুল আছে, যেখানে ২ জন ছাত্রের জন্য ৪ জন শিক্ষক নিযুক্ত আছেন। প্রায় প্রতিটি জায়গায় অতিরিক্ত শিক্ষক।” এমনকি বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্য নিয়োগ আটকে কেন আটকে রয়েছে তা নিয়ে প্রশ্ন তুলে বিচারপতি বলেন, “সরকারি স্কুলের কি আর আগের মতো অবস্থা আছে? আগে স্কুল পড়ুয়ায় ভর্তি থাকত। বহু বিখ্যাত মানুষ সেখানে পড়াশোনা করেছেন। কিন্তু এখন? এখন ছাত্রদের কথা কে ভাবেন? রাজ্য কি প্রতি বছর চাকরি দিতে ইচ্ছুক? হিন্দু, হেয়ার স্কুলের কী অবস্থা? রাজ্যের শিক্ষা ব্যবস্থার ব্যর্থতা নয় কি?”

এদিন সুপার নিউমেরারি নিয়ে তদন্ত প্রসঙ্গে বিকাশ রঞ্জন ভট্টাচার্যর দাবি, "শীর্ষ আদালতে সিবিআই তদন্তে স্থগিতাদেশ দেওয়া হয়নি। এই পোস্ট করা হয়েছিল বেয়াইনি চাকরিপ্রাপকদের চাকরি বজায় রাখতে।" তার পরিপ্রেক্ষিতে বিচারপতি, এই মামলায় সিবিআই তদন্ত নিয়ে জানতে চান। অ্যাডভোকেট জেনারেল জানান, "মামলা করা হয়েছে কেন, শারীরশিক্ষা-কর্ম শিক্ষা তৈরি হয়েছে। শীর্ষ আদালতে ২৫ জন মামলা করেছেন। তাদের চাকরির পদ ফাঁকা রাখবে সরকার। ২৫ জন মামলাকারীর জন্য ১৬০০ শূন্যপদে নিয়োগ আটকে রয়েছে। পদ শূন্য রেখে বাকিদের নিয়োগ করার অনুমতি দিক আদালত। স্কুলগুলির সমস্যা হচ্ছে।"

কিন্তু এই মামলায় আদৌ সিবিআই তদন্ত করছে কিনা, তা স্পষ্ট করতে পারেনি আদালতে উপস্থিত সিবিআইয়ের আইনজীবী ধীরাজ ত্রিবেদী। তাঁর উদ্দেশে বিচারপতি বিশ্বজিৎ বসু বলেন, "সিবিআই কি 'সিরিয়াস' যে তদন্তে স্থগিতাদেশ দেওয়া হয়নি? আপনার পরামর্শ এই মামলায় শূন্যপদে আদৌ কি নিয়োগ দেবে সেটা বোঝা যাবে।" আগামী ২৮ ফেব্রুয়ারি দুপুর ২ টোয় এই মামলার পরবর্তী শুনানির দিন ধার্য করেছে আদালত।

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

হাইলাইটস

Highlights Heading
  • SLST নিয়োগ নিয়ে রাজ্যের সদর্থক ভূমিকায় খুশি চাকরিপ্রার্থীরা।
  • তাঁদের অভিযোগ, বিকাশরঞ্জনের বাধায় বারবার নিয়োগে জটিলতা তৈরি হচ্ছে।
Advertisement