স্টাফ রিপোর্টার: গরিব, মধ্যবিত্ত ঘরের ছেলেমেয়েদের উচ্চশিক্ষার পথ প্রশস্ত করতে গত এক যুগে ৪৬টি বিশ্ববিদ্যালয় গড়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তার সঙ্গে সঙ্গেই রাজ্যের শিক্ষার প্রসারে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ও সামনে আসছে। মঙ্গলবার রাজ্য বিধানসভায় জোড়া বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় বিল পাস করিয়ে এভাবেই সরকারের অবস্থান স্পষ্ট করলেন শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু।
'দ্য রবীন্দ্রনাথ টেগোর ইউনির্ভাসিটি বিল ২০২৪' আর 'রামকৃষ্ণ পরমহংস ইউনিভার্সিটি বিল ২০২৪' এই দুটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় বিল এদিন বিধানসভায় পাস করান শিক্ষামন্ত্রী। বিজেপির মুখ্য সচেতক শঙ্কর ঘোষ এদিন একাই সকলকে বিস্মিত করে ৬৪টি সংশোধনী জমা দিয়েছেন। যার মধ্যে দুটি গৃহীত হয়েছে। এ যাবৎকালে এই সংখ্যক সংশোধনী এক প্রকার রেকর্ড। প্রথম বিশ্ববিদ্যালয় হবে ধনেখালিতে, দ্বিতীয়টি হবে আগরপাড়ায়।
এই জোড়া বিল পাস করাতে গিয়ে রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে বেসরকারিকরণের অভিযোগ তোলেন নওশাদ সিদ্দিকি-সহ বিজেপির একাধিক বিধায়ক। যা খারিজ করে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, "সরকার পোষিত বিশ্ববিদ্যালয় এখনও আমাদের রাজ্যে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বেশি। গোটা দেশে সবচেয়ে বেশি সরকার পোষিত বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে পশ্চিমবঙ্গে। ফলে বেসরকারীকরণের অভিযোগ ভ্রান্ত।" পরিসংখ্যান দিয়ে এর পরই শিক্ষামন্ত্রী বলেন, "উত্তরপ্রদেশে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা বেশি, মধ্যপ্রদেশ এবং গুজরাটেও বেশি। আমাদের রাজ্যে কিন্তু বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা বেশি নয়। গরিব, নিম্নবিত্ত মানুষ যাতে পড়াশোনা করতে পারেন তার জন্য সরকার পোষিত বিশ্ববিদ্যালয়ই এখানে বেশি। এটা প্রথম থেকেই মুখ্যমন্ত্রী ভেবেছেন। গরিব আর নিম্ন মধ্যবিত্ত ঘরের ছেলেমেয়েরা যাতে পড়াশোনার সুযোগ পায়, তারা যাতে উচ্চশিক্ষা লাভ করতে পারে সেজন্য মুখ্যমন্ত্রী প্রথম দিন থেকেই সতর্ক।"
বাম আমলের পরিসংখ্যান দিয়ে ব্রাত্য জানান, বাংলায় বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা তখন ছিল ১১টি। কিন্তু এই সরকার আসার পর মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের আমলে সেই বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ৪৬। মঙ্গলবার দুটি বিশ্ববিদ্যালয় এবং আজ, বুধবার আরও একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় বিল আসছে। তাতে সব মিলিয়ে রাজ্যে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা দাঁড়াবে ১৫-এ। এই প্রসঙ্গেই বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠার সময়ের কথা তোলেন শিক্ষামন্ত্রী। বলেন, "১৯১৮ সালে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর প্রথম বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় তৈরি করেন, যার নাম বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়। আমাদের মুখ্যমন্ত্রী সরকারি শিক্ষা ব্যবস্থার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে মধ্যবিত্ত থেকে সাধারণ শিক্ষার্থীদের কথা বিবেচনা করেও এই বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় তৈরি করছেন।" এর মধ্যে একাধিক বিশ্ববিদ্যালয়ে স্থায়ী উপাচার্য নিয়োগের বিষয় যেভাবে রাজভবনে আটকে রয়েছে তা নিয়েও উষ্মা প্রকাশ করেছেন শিক্ষামন্ত্রী।
রামকৃষ্ণ পরমহংসদেব বিশ্ববিদ্যালয়টি পরিচালনার দায়িত্বে থাকবে 'রামকৃষ্ণ বিবেকানন্দ মিশন'। আর রবীন্দ্রনাথ টেগোর বিশ্ববিদ্যালয়টির দায়িত্বে রয়েছে কালিপদ সাহা মেমোরিয়াল ট্রাস্ট। আগামী বছর জুলাই মাসে দুটি বিশ্ববিদ্যালয়ই চালু হয়ে যেতে পারে। দুটিরই পরিদর্শক হবেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
রামকৃষ্ণের নামে বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বীকৃতির জন্য ১৯৯৯ সাল থেকে রামকৃষ্ণ বিবেকানন্দ মিশন বারংবার শিক্ষা দপ্তরে আবেদন করেছিল। বাম সরকারের বিরুদ্ধে এদিন সেই আবেদনে কর্ণপাত না করার অভিযোগ তুলেছেন ব্রাত্য। পরে ২০১৮ সালে আবার আবেদন করা হয়। তখন দপ্তর বিষয়টি গ্রহণ করে। কোভিডের জন্য তখন কাজ এগোয়নি। শেষে গতবছর উচ্চ শিক্ষা দপ্তর প্রতিনিধি পাঠিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রস্তাবিত জায়গাটি দেখে আসে। মন্ত্রিসভার বৈঠকে তার ছাড়পত্র দেন মুখ্যমন্ত্রী। মঙ্গলবার সেই জোড়া বিলই পাস হল বিধানসভায়। এই উপলক্ষে বিধানসভায় এসেছিলেন রামকৃষ্ণ বিবেকানন্দ মিশনের সন্ন্যাসীরা। এই বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়কে আইনি স্বীকৃতি দেওয়ার জন্য মুখ্যমন্ত্রী ও রাজ্য সরকারকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন তাঁরা।
অন্যদিকে, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের নামে প্রস্তাবিত বিলে 'টেগোর' নাম বদলে 'ঠাকুর' করার দাবি তোলেন বিজেপি বিধায়ক শঙ্কর ঘোষ। তাঁর যুক্তি, কিছুদিন আগেই বাংলা ভাষাকে ধ্রুপদী ভাষার স্বীকৃতি দিয়েছে কেন্দ্রীয় সরকার। তাই ‘দ্য রবীন্দ্রনাথ টেগোর ইউনির্ভাসিটি বিল ২০২৪’-এ টেগোরের বদলে ‘দ্য রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ইউনিভার্সিটি বিল ২০২৪’ করা হোক। সঙ্গে বলেন, 'টেগোর' শব্দের মধ্যে একটা উপনিবেশিক বিষয় রয়েছে। জবাবি ভাষণে শিক্ষামন্ত্রী বিষয়টির সঙ্গে সহমত হন। জানান, বিষয়টি বিবেচনার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে বলবেন তিনি।