স্টাফ রিপোর্টার: ভোটের আগেই কলকাতায় অস্ত্র উদ্ধারের উপর গুরুত্ব দিয়েছিল পুলিশ। গত তিনমাসে কলকাতার (Kolkata) বিভিন্ন জায়গায় তল্লাশিতে উদ্ধার হয়েছে ৭৫টি আগ্নেয়াস্ত্র। জানা গিয়েছে, ভোটের (West Bengal Assembly Elections) আগে বিহার থেকে অস্ত্র পাচার করে কলকাতায় বিক্রি হচ্ছে, এমন খবর পুলিশের কাছে ছিল। সেই মতো লালবাজারের (Lalbazar) গোয়েন্দা বিভাগ ও বিভিন্ন থানার আধিকারিকরা খোঁজখবর শুরু করেন। ধরা পড়তে শুরু করে আগ্নেয়াস্ত্র। জানুয়ারি মাসের প্রথম থেকে শুরু করে মার্চ মাস পর্যন্ত ৭৫টি রিভলভার ও পিস্তল উদ্ধার হয়েছে। আটক হয়েছে ২৬০টি বিভিন্ন ধরনের বুলেট। উদ্ধার হয়েছে ১১০টি বোমা।
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, তদন্ত করে দেখা গিয়েছে যে ভোটের আগে ‘মুঙ্গের মেড’ নাইন এমএম বা সেভেন এমএম পিস্তলের চাহিদাই সব থেকে বেশি। তাই কলকাতার এজেন্টরা বিহার থেকে নিয়ে আসে এই পিস্তলগুলি। রিভলভারের থেকে ছোট মাপের বলে এগুলি লুকিয়ে রাখা বা বহন করা সহজ। গোপন সূত্রে খবর পেয়ে বেশ কয়েকজন অস্ত্রের এজেন্ট ও পাচারকারীকে পুলিশ গ্রেপ্তারও করে। এক মহিলা অস্ত্র পাচারকারীকেও গোয়েন্দা পুলিশ গ্রেপ্তার করে। জানা গিয়েছে, জামাকাপড়ের মধ্যে করে অস্ত্র পাচার করত সে। একেকবার বিহারে গিয়ে মুঙ্গেরি পিস্তল পাচার করার জন্য দশ হাজার টাকা করে নিত ওই মহিলা। কলকাতা ছাড়াও আশপাশের জেলায়ও পাচার করার ছক কষা হয়েছিল।
[আরও পড়ুন: ভোটের দিন সকালেই নন্দীগ্রামে ‘আত্মঘাতী’ বিজেপি কর্মী, এলাকায় চাঞ্চল্য]
অস্ত্রের সঙ্গে সঙ্গে রয়েছে বুলেটের চাহিদাও। অনেক সময়ই পিস্তলের সঙ্গে এক ম্যাগাজিন বুলেট দিয়ে তার দাম তুলে নেওয়া হয়। কারণ, ক্রেতারা চোরাপথে অস্ত্র কেনার সময় পাচারকারীদের কাছে বুলেট চায়। কারণ, গুলি ছাড়া যে পিস্তলের দামও নেই। অস্ত্র পাচারকারীদের কাছে বুলেট নিয়ে আসার ভরসা সেই বিহার বা ঝাড়খণ্ড। কারণ, ওই রাজ্যগুলির বেশ কিছু অস্ত্রের দোকান থেকে যে চোরাপথে ও ব্ল্যাকে বুলেট বিক্রি হয়, সেই হদিশ পেয়েছেন লালবাজারের গোয়েন্দারা। সেই মতো ফাঁদ পেতে সম্প্রতি ১০৮টি বুলেট গোয়েন্দারা উদ্ধার করেন। আবার এর আগেও কয়েক দফায় এক সঙ্গে বেশ কিছু বুলেট পুলিশ উদ্ধার করেছে। লালবাজারের এক কর্তা জানান, এখনও প্রতিনিয়ত প্রত্যেকটি থানার পুলিশ ও গোয়েন্দা বিভাগ তল্লাশি চালিয়ে ভোটের আগে আরও আগ্নেয়াস্ত্র ও বুলেট উদ্ধার করার চেষ্টা চালাচ্ছে।
গত তিন মাসের মধ্যে সেনা গোয়েন্দাদের কাছ থেকে গোপন সূত্রে খবর পেয়ে পুলিশ দু’দফায় ৩২টি কৌটো বোমা উদ্ধার করেছে। এ ছাড়াও আরও দু’দফায় কড়েয়া ও বেনিয়াপুকুর এলাকায় তল্লাশি চালিয়ে গোয়েন্দারা উদ্ধার করেছেন ৪৮টি তাজা বোমা। কলকাতার বিভিন্ন জায়গায় তল্লাশি চালিয়ে পুলিশ আরও ৩০টি বোমা উদ্ধার করে। জানুয়ারি থেকে এখনও পর্যন্ত ১১০টি বোমা উদ্ধার হয়েছে। এই অস্ত্র ও বোমা উদ্ধারের রিপোর্ট পুলিশের পক্ষ থেকে নির্বাচন কমিশনকে জানানো হয়েছে। এ ছাড়াও ভোটের আগে হিসাব বহির্ভূত টাকা উদ্ধারের উপর নজর দিয়েছে পুলিশ। ডিসেম্বর থেকে চার কোটি টাকার উপর হিসাব বহির্ভূত হাওলার টাকা উদ্ধার হয়েছে। তিন মাসে উদ্ধার হয়েছে তিন কোটি হিসাব বহির্ভূত টাকা।