shono
Advertisement

‌১৪ বছর পর কলকাতা পুলিশ ও NGO’র প্রচেষ্টায় হারানো মেয়েকে খুঁজে পেল পরিবার

২০০৬ সালে হারিয়ে যাওয়া গীতার এক ছেলে এবং এক মেয়ে রয়েছে।
Posted: 10:56 PM Nov 21, 2020Updated: 10:56 PM Nov 21, 2020

অর্ণব আইচ: নিখোঁজ হয়েছিলেন ২০০৬ সালে। শেষপর্যন্ত ২০২০ সালে এসে পরিবারকে ফিরে গীতা সরকার নামে এক মহিলা। সৌজন্য ফুলবাগান (Phoolbagan) থানার পুলিশ এবং এনজিও’‌র প্রচেষ্টা। ‌নিজের পুরনো স্কুলের ছবিই তাঁকে তাঁর পরিবারের কাছে ফিরিয়ে দিল।

Advertisement

‘‌মা, মাগো। বাবা, তোমাদের চিনতে পেরেছি।’‌ কথায় অসংলগ্নতা। মানসিক সমস্যা রয়েছে। তবুও ১৪ বছর পর ভিডিও কলে মা আর বাবাকে দেখে আবেগ চেপে রাখতে পারেননি গীতা সরকার। চিনতে পেরেছেন বোন ও ভগ্নিপতিকেও। এর মধ্যে গীতার ছেলে–মেয়েও বড় হয়ে গিয়েছে। তাঁর মেয়েও সন্তানের মা হয়েছেন। কিন্তু এক যুগের উপর মহিলা কোথায় ছিলেন বা কী অবস্থায় ছিলেন, কিছুই মনে করতে পারছেন না।

জানা গিয়েছে, ২০০৬ সাল থেকে নিখোঁজ হওয়ার পর থেকে গত মার্চ মাসে তাঁকে ফুলবাগান থানার পুলিশ আধিকারিকরা উদ্ধার করেন। এরপর তুলে দেন NGO’র হাতে। খোঁজ শুরু হয় গীতার পরিবারের। ওই এনজিওর কর্মকর্তা ভারতী আইচ ও পূর্ব কলকাতার ফুলবাগান এবং মালদহের বামনগোলা থানার আধিকারিকদের সেই প্রচেষ্টায় অবশেষে ফল মিলল। ১৪ বছর পর হারিয়ে যাওয়া গীতা সরকারকে তুলে দেওয়া হল তাঁর পরিবারের লোকেদের হাতে।

[আরও পড়ুন:‌ ‌ফের জট! মমতার বিকল্প মুখ জোটের অধীর? কংগ্রেসের জল্পনায় জল ঢালল CPM]

পুলিশের সূত্রে খবর, গত মার্চ মাস থেকে গীতা রয়েছেন ওই NGO’র হোমে। তাঁর পায়ে ছিল পুড়ে যাওয়া ক্ষত। পুলিশকে বলেছিলেন হাসপাতাল থেকে পালিয়ে এসেছেন। এ ছাড়াও শুধু নিজের নামটি বলতে পেরেছিলেন। তাঁর মানসিক সমস্যার চিকিৎসাও হয় পাভলভ হাসপাতালে। ভারতী আইচ জানান, গীতা কখনও বেঙ্গালুরু (Bengaluru), কখনও শিলিগুড়ি (Siliguri), কখনও মুর্শিদাবাদ (Murshidabad), এমনকী বাংলাদেশের (Bangladesh) কয়েকটি গ্রামের নামও বলেন। কথায় অসঙ্গতি থাকায় তাঁর ঠিকানা জানা দুষ্কর হয়ে পড়েছিল।

শেষ পর্যন্ত যে জায়গাগুলির নাম তিনি বলেছিলেন, সার্চ ইঞ্জিন থেকে সেই জায়গাগুলির ছবি বের করা হয়। স্কুল, মাঠ, মন্দির ও কিছু দ্রষ্টব্য বস্তু দেখানো হয়। কয়েকটি জায়গা চিনতেও পারেন। হঠাৎই একদিন মালদহের বামনগোলা থানা এলাকার ছাতিয়ার একটি স্কুল দেখে বলেন, তিনি সেখানে পড়তেন। ওই অঞ্চলের আরও কিছু ছবি দেখে গীতা জায়গাটি শনাক্ত করেন। সেইমতো ফুলবাগান থানাকে জানানো হয়। ফুলবাগান থানা মহিলার ছবি ও বিবরণ মালদহের বামনগোলা থানাকে দেয়। বামনগোলা থানার আধিকারিকরা এলাকার পঞ্চায়েত ও বাসিন্দাদের মাধ্যমে মহিলার পরিচয় সম্পর্কে নিশ্চিত হন।

[আরও পড়ুন:‌ ‌পাওনা টাকা চাইতে গিয়ে খাস কলকাতায় বন্ধুর যৌন লালসার শিকার মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী]

এরপর থানার এক সিভিক ভলান্টিয়ারকে ছাতিয়ার বাসিন্দা বলহরি মধুর বাড়িতে পাঠানো হয়। জানা যায়, তাঁর মেয়ে বহুদিন ধরে নিখোঁজ রয়েছেন। নিউটাউনে থাকেন গীতার বোন ও ভগ্নিপতি। তাঁদের ও বিষয়টি জানানো হয়। গীতাকে মোবাইল স্ক্রিনের সামনে বসিয়ে ভিডিও কল করা হয়। অন্য পারে ছিলেন তাঁর মা-বাবা। ১৪ বছরের স্মৃতি মুছে গেলেও তিনি চিনতে পারেন তাঁর মা ও বাবা, বোন এবং ভগ্নিপতিকেও। তাঁরাও মেয়েকে চিনতে পারেন।

১৪ বছর আগে হারিয়ে যাওয়া গীতা সরকার

শনিবার নিউটাউনের বাড়িতে বসে গীতার বোন কল্পনা বালা ও ভগ্নিপতি গণেশ বালা জানান, ২০০৬ সালের ২১ জুন নিখোঁজ হন গীতা। বিয়ের পর থেকেই অমানুষিক অত্যাচার চলত ওই গৃহবধূর উপর। স্বামীর অত্যাচারের ফলে পাঁচ বছরের মেয়ে ও তিন বছরের ছেলেকে নিয়ে বাপের বাড়িতে এসে ওঠেন। কিন্তু বাপের বাড়িতেও নুন আনতে পান্তা ফুরায়। তাই এক কৃষকের বাড়িতে কাজ করে গীতা প্রত্যেকদিন খাওয়া ও ৩০ টাকা করে পেতেন। সেই টাকা আনতে গিয়েই আর বাড়ি ফেরেননি।

তিনি নিজেই কোথাও চলে গিয়েছিলেন, না কি তাঁকে পাচার করা হয়েছিল, সেই স্মৃতি গীতার মনে নেই। স্ত্রী নিখোঁজ হওয়ার পর স্বামী গোলক সরকার অন্য সংসার পাতেন। গীতার এখনও ধারণা, তাঁর মেয়ে ও ছেলে ছোট। তিনি যে নিজে দিদিমা হয়েছেন, তা বিশ্বাস করতে চাইছেন না। আগামী ২৮ তারিখ নভেম্বর গীতাকে মালদহে মা-বাবার কাছে নিয়ে যাওয়া হবে। পরিবারের দাবি, ফিরে আসা স্ত্রীকে ফের গ্রহণ করুন স্বামী। না হলে সারাজীবন গীতার দেখভাল করবেন কে?

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement