সুকুমার সরকার, ঢাকা: সৌহার্দের প্রতীক হিসেবে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা (Sheikh Hasina) ভারতের রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দ, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী, পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়-সহ একাধিক প্রশাসনিক প্রধানকে পাঠিয়েছেন সেখানকার বিখ্যাত হাড়িভাঙা আম। আর তারপর দেখে খাদ্যরসিক মহলে এই আম নিয়ে জোর চর্চা শুরু হয়েছে। অনেকেই এই আমের সন্ধান পেতে চাইছেন। কেমন খেতে হাড়িভাঙা আম? ভোজনরসিক বাঙালির মাত্রই একবার শুধু চেখে দেখার সাধ জন্মেছে। কিন্তু জানেন কি এর ইতিবৃত্ত? কেন এত ‘স্পেশ্যাল’ এই আম?
ইতিহাস বলছে, ৭৫ বছর আগে খোড়াগাছ তেকানিপাড়ার নফেলউদ্দিন পাইকার মিঠাপুকুরের বালুয়া মাছুমপুরের তাজ সিং জমিদারের বাড়িতে এই আমের চারা রোপন করেছিলেন। আর আজ তা মহীরূহে পরিণত হয়েছে। এই আম আঁশহীন, সুমিষ্ট, সুস্বাদু। দারিদ্রপ্রবণ রংপুরের (Rangpur) মানুষের প্রধান অর্থকরী ফল হিসেবে সুনাম ছাড়িয়েছে দেশময়। রংপুরে হাড়িভাঙা আম বিক্রির আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু হয় ২১ জুন থেকে। এদিকে, করোনা পরিস্থিতির মধ্যে ঢাকা-সহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় আম পণ্য পরিবহণের জন্য বাস-ট্রাকেরও ব্যবস্থা করা হয়েছে। সেইসঙ্গে করোনা ভাইরাস (Coronavirus) প্রতিরোধে আম ব্যবসায়ীদের বিশেষ স্বাস্থ্যসেবার সুবিধা-সহ তাঁদের নিরাপত্তার জন্য পুলিশের টহল জোরদার করা হয়েছে। রংপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উদ্যান বিশেষজ্ঞ মেসবাহুল ইসলাম বলেন, এলাকায় প্রায় ১৭ লক্ষ হাড়িভাঙা আমগাছ রয়েছে। এ বছর জেলায় ২৫০০ হেক্টর জমিতে প্রায় ৩৭ হাজার মেট্রিক টন হাড়িভাঙা আমের উৎপাদন আশা করা হচ্ছে।
[আরও পড়ুন: চিকেন, মটন বাদ দিন, চেখে দেখুন কাঁঠাল বিরিয়ানি! রইল রেসিপি]
জেলার মিঠাপুকুর উপজেলার খোড়াগাছ ও রানিপুকুর ইউনিয়ন, পদাগঞ্জ এলাকা-সহ আরও কিছু এলাকায় আমের বাগান রয়েছে। খোড়াগাছ এলাকার আমচাষি আবদুল আলিমের তিন বিঘা জমির উপর আমবাগান। এছাড়া মিঠাপুকুর উপজেলার বকসিপাড়া এলাকার আমচাষি মনসুর আলি এক বিঘা জমিতে আম চাষ করেছেন। তিনি জানিয়েছেন, ‘‘এবার আমের ফলন ভাল। গাছের আম প্রকারভেদে ১৬০০ টাকা থেকে ১৮০০ টাকা পর্যন্ত মণ দরে বিক্রি হচ্ছে।” কৃষি অধিদপ্তরের হিসেবে প্রতি হেক্টরে ৩০০ মণ আম উৎপাদন হয়ে থাকে। বর্তমানে প্রতি মণ আম ১৬০০ টাকা থেকে ১৮০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। হেক্টরপ্রতি আম বিক্রি থেকে চাষিদের আয় হচ্ছে প্রায় চার লক্ষ টাকার উপরে। এতে উৎপাদন খরচ বাদ দিলে চাষিদের হেক্টরপ্রতি লাভ থাকছে প্রায় সাড়ে তিন লক্ষ টাকা।
[আরও পড়ুন: ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য সুখবর! বাজারে এল ‘সুগার ফ্রি’ আম]
গত মাসের ১৫ জুন সে দেশের বাজারে উঠছে রংপুরের বিখ্যাত হাড়িভাঙা আম। আম পাড়ার ব্যাপারে কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগকে সঙ্গে নিয়ে জেলা প্রশাসন দিনক্ষণ নির্ধারণ করে দেয়, যাতে লোকে আসল আমটি পেতে পারেন। মিঠাপুকুর উপজেলার খোড়াগাছ ইউনিয়নের বিস্তৃত এলাকায় যে দিকে চোখ যায়, গাছে গাছে ঝুলে আছে হাড়িভাঙা আম। আঁশহীন, সুস্বাদু ও সুমিষ্ট এই আমের সংরক্ষণ সুবিধা বাড়াতে গবেষণার কথা জানান রংপুর কৃষি বিভাগের উপ-পরিচালক ড: মো:সরওয়ারুল হক। কৃষি নির্ভর দেশের উত্তরবঙ্গ রংপুরের দারিদ্র্য বিমোচন ও কর্মসংস্থানে হাড়িভাঙা আমের গুরুত্ব দিন দিন বাড়ছে।