দেবব্রত মণ্ডল,জয়নগর: শীতের শুরু ডিসেম্বরে। ঠান্ডার আমেজ পড়তেই জয়নগরে শুরু হয়ে গিয়েছে মোয়ার বাজার। কিন্তু এই মোয়ার বাজারে দেখা দিয়েছে খইয়ের আকাল। উন্নতমানের কনকচূড় ধানের খই না পাওয়ার জন্য ভাল মোয়া তৈরি করতে গিয়ে সমস্যায় পড়ছেন মোয়া কারবারিরা। মূলত প্রবল বৃষ্টির কারণে এবার মার খেয়েছে ধানচাষ। অতিবর্ষণের জন্য জয়নগর মথুরাপুর মন্দিরবাজার এই সমস্ত এলাকায় এবার তেমনভাবে কনকচূড় ধান চাষ হয়নি। যে ধান ছ’শো টাকা করে বস্তা কিনতে হত তা এখন গিয়ে ঠেকেছে হাজার টাকাতে। ধানের অতিরিক্ত দামবৃদ্ধি প্রভাব ফেলেছে মোয়াশিল্পে। অতিরিক্ত দাম দিয়েও কনকচূড় ধানের খই মেলা দুষ্কর হয়ে পড়েছে এখন মোয়া তৈরির কারিগরদের কাছে।
শীত শুরু হতেই রাজ্যসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে জয়নগরের মোয়া ছড়িয়ে পড়তে শুরু করেছে। তবে ইদানীং দেশের গণ্ডি ছাড়িয়ে বিদেশেও এই মোয়া যেতে শুরু করেছে। অনলাইনে বাড়িতে বসেই মোয়া পাওয়া যাচ্ছে। সৌদি আরব, লন্ডন আমেরিকাতেও মিলছে জয়নগরের তৈরি। ইতিমধ্যেই জিআই স্বীকৃতি মিলেছে এই মোয়ার। জয়নগরের বিখ্যাত মোয়া তৈরি হয় জয়নগর লাগোয়া বহড়ুতে। একদিকে নলেন গুড়ের স্বাদ আর অন্যদিকে কনকচূড় ধানের খই, এই দু’য়ের মিশ্রণেই তৈরি হয় জয়নগরের মোয়া। তার সঙ্গে থাকে পেস্তা কাজু ঘি,সহ নানাবিধ উপকরণ। নলেন গুড় আসলে খেজুর গুড়।
[আরও পড়ুন: এবার শীতে ট্রাই করুন চিংড়ি পিঠে, কলার পাটিসাপটা, রইল রেসিপি]
শীতের শুরুতেই গ্রামের শিউলিরা বিভিন্ন খেজুরগাছ পরিষ্কার করে প্রথম খেজুর রস সংগ্রহ করেন। তারপর আগুনে ফুটিয়ে নলেন গুড় তৈরি করেন। এই নলেন গুড় আর সুগন্ধ কনকচূড় ধানের খইসহ অন্যন্য উপাদান দিয়ে তৈরি হয় জয়নগরের সুস্বাদু মোয়া। শীতের সময় পিঠে, পুলি, পায়েস, পাটালি, সন্দেশ, রসগোল্লা, সহ নানা খাবারেও নলেন গুড়ের চাহিদা রয়েছে। তাই এই হাড়হিম শীতেও ভোর হতেই জেলার শিউলিরা বেরিয়ে পড়েন খেজুরগাছের রসের সন্ধানে। জয়নগরের বহড়ু এলাকার মোয়া ব্যবসায়ী রঞ্জিতকুমার ঘোষ জানান, মোয়া তৈরি শুরু হয়ে গিয়েছে। তবে ঠান্ডার পরিমাণ বাড়লে গুড়ও ভাল হবে। তখন মোয়ার স্বাদও ভাল হবে। ইতিমধ্যেই জয়নগর ও বহড়ু কলুরমোড়ে পর পর দোকানে মোয়া বিক্রি শুরু হয়ে গেছে। বাজারে বিভিন্ন জিনিসপত্রের দাম আকাশছোঁয়া হওয়ায় এবারে মোয়ার দামও বাড়িয়েছেন ব্যবসায়ীরা। একটু সাইজের মোয়ার দাম আট টাকা থেকে শুরু হয়েছে। আর ২০ টাকা দামেও পাওয়া যাচ্ছে। গতবার করোনার কারণে মোয়ার ব্যবসা সেভাবে হয়নি। এবার মোয়ার বাজার ভাল হবে এই আশায় বুক বেঁধেছেন মোয়া ব্যবসায়ীরা। তবে এর মধ্যে সমস্যা দেখা দিয়েছে কনকচূড় ধানের খই। খইয়ের জোগান ঠিক না থাকার জন্য চাহিদামতো সরবরাহ করতে পারা যাচ্ছে না।