ইচ্ছে হলেই কি ব্লাড প্রেশারের ওষুধ বন্ধ করা যায়? জবাব দিলেন শহরের বিশিষ্ট চিকিৎসক

04:56 PM Aug 09, 2022 |
Advertisement

বয়স ৪০ ছুঁতে না ছুঁতেই হাই ব্লাড প্রেশারে কাবু কম-বেশি সবাই। লো প্রেশার হলেই বা কী করবেন? জানাচ্ছেন SSKM হাসপাতালের মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ডা. নীলাদ্রি সরকার। তাঁর কথা শুনে এই প্রতিবেদন লিখেছেন পৌষালী দে কুণ্ডু।

Advertisement

সিস্টোলিক প্রেশার ১৪০ ও ডায়াস্টোলিক প্রেশার ৯০-এর বেশি থাকার অর্থ হাই ব্লাড প্রেশার। সিস্টোলিক ব্লাড প্রেশার ১৮০-১৫৯ ও ডায়াস্টোলিক ৯০-৯৯ থাকলে তা স্টেজ ওয়ান হাই ব্লাড প্রেশারের আওতায় পড়ে। সিস্টোলিক ১৬০-এর বেশি ও ডায়াস্টোলিক ১০০-র বেশিকে স্টেজ টু-র আওতায় ফেলা হয়। সব সময় উচ্চ রক্তচাপের লক্ষণ দেখা যায় না। এর জেরে আচমকা ব্রেন স্ট্রোক হয়ে প‌্যারালাইসিস, হার্ট অ‌্যাটাক, কিডনির জটিল অসুখ, চোখে সমস‌্যা, পায়ে গ‌্যাংগ্রিন হতে পারে।

উপসর্গ – 
হাই প্রেশার হলে মাথাব‌্যথা, মাথা ঘোরা, ঝিমঝিম করতে পারে। রক্তচাপ স্বাভাবিকের চেয়ে কমে গেলেও মাথা ঘুরে পড়ে যাওয়া, মাথা ঝিমঝিম করতে পারে।

Advertising
Advertising

ডিজিটাল মেশিন ভরসার যোগ‌্য?
বাড়িতে ডিজিটাল মেশিন, স্মার্ট ওয়াচ থাকলে রক্তচাপ মনিটরিং করতে সুবিধা হয়। তবে প্রেশার খুব বেশি ওঠানামা করলে ডাক্তারের কাছে মাপাই ভাল। অনেক সময় এই ধরনের মেশিন গন্ডগোল করতে পারে। তখন সেটা ক‌্যালিব্রেট করে ডাক্তারকে দেখিয়ে নেবেন। সাধারণ প্রেশার মেশিনেও মাঝে মাঝে চেক করতে হবে। প্রেশার মাপার আগে একটু বিশ্রাম নিতে হবে। চা-কফি কিছু খাওয়া চলবে না। ব্লাড প্রেশার মাপার যন্ত্রও রোগীর হার্ট একই লেভেলে থাকতে হবে। 

প্রেশারের ওষুধ বন্ধ করা যায়?
এই সিদ্ধান্ত ডাক্তারই নেবেন। রোগী নিজে কখনও বন্ধ করতে পারেন না। তাহলে বিপদ অবশ‌্যাম্ভবী। দেখা গিয়েছে, ১৪০/৯০ mmHg প্রেশারের রোগী কয়েকদিন ওষুধ না খাওয়ায় প্রায় ১০ মিলিমিটার মার্কারি করে রক্তচাপ বেড়ে গিয়ে মারাত্মক অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। টার্গেট রাখতে হবে, সব সময় প্রেশার ১৩০/৮০-র নিচে রাখা।

হাই প্রেশারের রোগী মা হতে চাইলে কী করবেন?
এমন রোগীর ক্ষেত্রে ডাক্তারবাবু এমন ধরনের প্রেশারের ওষুধ দেন যা প্রেগন‌্যান্সির ন’মাস খাওয়া যায়। এই ধরনের ওষুধ অন্তঃসত্ত্বার রক্তচাপ কন্ট্রোলে রাখে। এই বিষয়ে আগাম সচেতন না হলে গর্ভাবস্থায় ঝুঁকি বাড়ে। প্রিঅ‌্যাকলেম্পশিয়া বা অ‌্যাকলেম্পশিয়া সমস‌্যা দেখা দিতে পারে। এতে মা ও গর্ভস্থ শিশু উভয়ের ক্ষতি হতে পারে।

[আরও পড়ুন: যখন তখন পেট জ্বালা? বড় কোনও রোগের লক্ষণ নয় তো! জেনে নিন চিকিৎসকের মত]

লো ব্লাড প্রেশারে কী করণীয়?
সিস্টোলিক ব্লাড প্রেশার ১০০-র নিচে নেমে গেলে তাকে লো ব্লাড প্রেশার বলে। এক্ষেত্রে ক্ষতি
মারাত্মক কিছু হয় না। হঠাৎ রক্তচাপ কমে গেলে নুন-চিনির জল পান করা ভাল।

কতদিন অন্তর প্রেশার চেক করা উচিত?
যদি কারও প্রেশার স্বাভাবিকের চেয়ে অনেক বেশি থাকে তাহলে ডাক্তারের পরামর্শ মতো সাত-দশ দিন অন্তর প্রেশার মাপা উচিত। আবার কারও হয়তো আট-দশ বছর ধরে হাই ব্লাড প্রেশার আছে। ওষুধ খেয়ে মোটামুটি নিয়ন্ত্রণেও আছে। তাঁকে হয়তো ডাক্তার বলবেন তিন বা ছ’মাস অন্তর চেক-আপ করতে। এটা রোগীর শরীরের অবস্থার উপর নির্ভর করে।

প্রেশার কন্ট্রোলে রাখার ডায়েট ও লাইফস্টাইল মানুন
ব‌্যালান্সড জীবনযাপন ও ডায়েট জরুরি। সময়মতো খান, ঘুমান। আধ ঘণ্টা হাঁটা ও যোগ-প্রাণায়াম করতে হবে। জাঙ্ক ফুড, কোল্ড ড্রিঙ্কস এড়িয়ে চলুন। পজিটিভ চিন্তা করুন। মদ‌্যপান ও ধূমপান বর্জন করতে হবে। এভাবে ডিসিপ্লিন মেনে জীবনযাপন করলে পরিবারে অনিয়ন্ত্রিত ব্লাড প্রেশারের ইতিহাস থাকলেও সহজে কাবু করতে পারবে না হাইপারটেনশন।
খাবারের তালিকায় এমন পদ রাখুন যাতে কার্বোহাইড্রেট (৫৫ শতাংশ), প্রোটিন (২০ শতাংশ), ফ‌্যাটের (২০ শতাংশ) ব‌্যালান্স রাখে। ভিটামিন-মিনারেল সমৃদ্ধ শাক-সবজি-ফল খান। হাই প্রেশারের রোগীর অতিরিক্ত নুন বা পাতে নুন খাওয়া চলবে না।

রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে নুন-চিনি-ময়দা এড়িয়ে চলুন। চিনির পরিবর্তে গুড়, ময়দার বদলে আটা খাওয়া ভাল। একজন হাই প্রেশারের রোগীর সারা দিনের রান্নায় ৫-৬ গ্রাম নুন খাওয়া চলবে। তার বেশি নয়। চেষ্টা করবেন সব সময় পরিমাণে অল্প করে খেতে। বেশি রাত করে খাওয়া চলবে না। কোষ্ঠকাঠিন‌্য হাই প্রেশার ডেকে আনে। তাই বেশি করে জল ও ফাইবার জাতীয় খাবার খান।

[আরও পড়ুন: দেশজুড়ে বাড়ছে মাঙ্কিপক্সের আতঙ্ক, কী করবেন, কী নয়? নয়া গাইডলাইন দিল কেন্দ্র]

Advertisement
Next