shono
Advertisement

অ্যালঝাইমার্স চিকিৎসায় মিউজিক থেরাপি, ঢাকের আওয়াজে ফিরতে পারে হারিয়ে যাওয়া স্মৃতি

দেশে ক্রমশ বাড়ছে অ্যালঝাইমার্স।
Posted: 01:12 PM Sep 22, 2022Updated: 03:04 PM Sep 22, 2022

অভিরূপ দাস: কিচ্ছু মনে নেই। বাড়ির ঠিকানা, স্বামীর মোবাইল নম্বর, বোনের বার্থডে, নিজের স্কুলের নাম-মগজ থেকে সব বিলকুল গায়েব। এমনকি নাম জিজ্ঞেস করলেও মাঝেমধ্যে ফ‌্যালফ‌্যাল করে চেয়ে থাকেন। অ‌্যালঝাইমার্স আক্রান্ত এমন ব‌্যক্তির স্মৃতি ফিরিয়ে আনতে মিউজিক থেরাপিতে ভরসা রাখছেন ডাক্তারবাবুরা। চিকিৎসকদের বক্তব‌্য, এটা ম‌্যাজিকের মতো কাজ করে।

Advertisement

কোচবিহারের বাসিন্দা বছর বাহান্নর গঙ্গা ঘোষকে তাই পুজোয় ঢাকের আওয়াজ শোনার নিদান দিয়েছেন চিকিৎসক। বলেছেন, পুজো আবহে চিরচেনা ঢাকের ঢ‌্যাম কুড়কুড় বাদ্যি কানে ঢুকলে মনে পড়ে যাবে ছোটবেলার পুজোর দিনগুলো। পেশায় প্রাইমারি স্কুলের শিক্ষিকার গঙ্গাদেবীর স্বামী রতন ঘোষ জানিয়েছেন, কিছুই মনে থাকে না স্ত্রীর। এমনকী, বাড়ি আসার চেনা গলিটাও ভুলে যান আখছার। ইউটিউব সার্চ করে খোঁজ পেয়েছেন ইন্সটিউট অফ নিউরো সায়েন্সের (Institute of Neuro Science) । অংশ নিয়েছেন অ‌্যালঝাইমার্স ডে-র ওয়ার্কশপে।

[আরও পড়ুন: DA মামলায় হাই কোর্টে ধাক্কা রাজ্যের, মেটাতেই হবে বকেয়া মহার্ঘ ভাতা, জানিয়ে দিল ডিভিশন বেঞ্চ]

পুজোর ঢাকের আওয়াজে তাঁর স্মৃতি ফিরে আসবে? নিউরোলজিস্ট ডা. সিদ্ধার্থশঙ্কর আনন্দ জানিয়েছেন, বিশেষ কোনও আওয়াজের সঙ্গে বিশেষ স্মৃতি জড়িয়ে। ঢাকের আওয়াজে সেই স্মৃতিটা ফিরে আসবে। দেশে ক্রমশ বাড়ছে অ‌্যালঝাইমার্স। যা ডিমেনশিয়া বা চিরতরে ভুলে যাওয়ার অন‌্যতম কারণ।

সাম্প্রতিক তথ‌্য অনুযায়ী, ভারতবর্ষে ডিমেনশিয়ায় আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা প্রায় ৩৮ লক্ষ। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, ২০৫০ সালের মধ্যে ভারতবর্ষে ডিমেনশিয়ায় আক্রান্ত হবেন প্রায় এক কোটি ১৪ লক্ষেরও বেশি মানুষ। বঙ্গের অবস্থাও তথৈবচ। ফর্টিস হাসপাতালের চিকিৎসক ডা. সঞ্জয় গর্গ জানিয়েছেন, চিকিৎসা শাস্ত্রের উন্নতির কারণেই বেড়েছে মানুষের গড় আয়ু। স্বাভাবিক ভাবেই বাড়ছে ডিমেনশিয়া। বয়স যত বাড়ে, ক্ষয় হতে থাকে স্নায়ুকোষের। কিছু ক্ষেত্রে দেখা দিতে পারে স্নায়ুবৈকল্য ও স্মৃতিভ্রংশের সমস্যা। চিকিৎসা পরিভাষায় এটাই ডিমেনশিয়া। এই ডিমেনশিয়ার অন‌্যতম কারণ অ‌্যালঝাইমার্স।

 

[আরও পড়ুন: বিয়েতে রাজি ছিল না পরিবার, একই গাছে ফাঁস দিয়ে আত্মঘাতী নদিয়ার দুই স্কুল পড়ুয়া]

আর অ‌্যালঝাইমার্সের  নেপথ্যে? চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, মস্তিষ্ক কোষের বাইরে চারপাশে অস্বাভাবিক কিছু প্রোটিন সেলের আধিক্যের কারণেই দেখা যায় অ‌্যালঝাইমার্স। এমনই একটি প্রোটিন অ‌্যামিলয়েড। যা মস্তিষ্ক কোষের বাইরে আস্তরণ তৈরি করে। আরেক শত্রুও প্রোটিন। যা মস্তিষ্ক কোষের মধ্যে জট তৈরি করে। কীভাবে স্মৃতি ফিরিয়ে আনতে পারবে পুজোর ঢাক? ডা. সিদ্ধার্থ শঙ্কর আনন্দ জানিয়েছেন, মিউজিক থেরাপিকে ডিমেনশিয়া চিকিৎসায় যে কাজটা করে তাকে বলা হয় মোৎজার্ট এফেক্ট। যখনই কোনও আওয়াজ শুনি তখন তা টেম্পোরাল লোবে কম্পন সৃষ্টি করে। সেখান থেকে তা টেম্পোরাল অ‌্যাসোসিয়েশন এলাকায় আসে। তৈরি হয় আবেগপ্রবণ মুহূর্ত।

তারপর যে কোনও মিউজিক মস্তিষ্কের প‌্যারাইটাল কর্টেক্স আর ফ্রন্টাল কর্টেক্স এলাকায় আসে। এখানে গানের কথা আর মিউজিককে আলাদা আলাদা করে বুঝতে পারেন রোগী। এভাবেই মনে আসে পুরনো দিনের কথা। ইন্সটিটিউট অফ নিউরো সায়েন্সে বিশ্ব অ‌্যালঝাইমার্স ডে উপলক্ষে অনুষ্ঠানে হাজির ছিলেন ডা. সিদ্ধার্থ শঙ্কর আনন্দ, রাজ্যের ডেপুটি ডিরেক্টর ডা. দেবাশিস হালদার (মেন্টাল হেলথ)। ডা. দেবাশিস হালদার জানিয়েছেন, অ‌্যালঝাইমার্স নিয়ে মানুষকে সজাগ করা অত‌্যন্ত প্রয়োজন। যতো দ্রুত চিকিৎসা শুরু করা যায় ততোই মঙ্গল রোগীর। 

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement