shono
Advertisement

কোন চা রোগ প্রতিরোধে বেশি উপকারী? শীতের মরশুমে গলায় দেবে আরাম, জেনে রাখুন

ভিন্ন ভিন্ন চায়ের সঙ্গে আরও অন্তরঙ্গ হয়ে উঠুক প্রিয় মুহূর্তগুলো।
Posted: 02:31 PM Dec 13, 2022Updated: 02:31 PM Dec 13, 2022

যে কোনও মুহূর্তকে চা-সঙ্গ আরও অন্তরঙ্গ করে তোলে। শীতকালে চা পানের তৃপ্তি আরও বেশি। শরীর গরম রাখার পাশাপাশি অন্যান্য অস্বস্তি কাটাতে এই পানীয় অপরিহার্য। বিশেষ কিছু ধরনের চা রয়েছে যেগুলি এই মরশুমের জন্য আদর্শ। কোন চা কীভাবে পান করবেন, কেনই বা পান করবেন আর কোথায় পাবেন এত রকম চায়ের ভ্যারাইটি, সেই তথ্য তুলে ধরলেন উত্তর কলকাতার ‘জিয়াভারেলি টি-ক্যাফে’-র কর্ণধার জয়দীপ গঙ্গোপাধ্যায়।

Advertisement

সারাদিনের আলোচনায়, গল্পে অথবা একাকীত্বে সবতেই চা-চা-ই-চাই। চায়ের টেবিলে কত কথার ঝড় ওঠে, কত বিতর্ক থেমে যায়, কত সমস্যা সমাধানের পথে বাঁক নেয়। সারাদিন চনমনে থাকতে চায়ের (Tea) বিকল্প কিছু আছে না কি! শীতের উষ্ণতা পেতে এককাপ গরম চায়ের তুলনা নেই। চা শুধু অবসরের সঙ্গী, আড্ডার কেন্দ্রবিন্দুই নয় চায়ের স্বাস্থ্যগুণও কিন্তু অপরিসীম। শীতের শুরুতেই জেনে রাখা ভাল কোন কোন চা এই সময়ের সবচেয়ে ভাল সঙ্গ হতে পারে।

একই চা, তবে আলাদা অনেক কিছুতে…
দু’টি পাতা একটি কুঁড়ি, এই নিয়মেই চায়ের পাতা তুলে আমাদের অন্যতম পানীয়টি তৈরি হলেও এরও কিন্তু নানা প্রকার রয়েছে। সেটা শুধু তৈরিতেই আলাদা নয়, চায়ের পাতার ধরনেও আলাদা। সেই ভিত্তিতেই চায়ের স্বাদ ও গুণ নির্ভর করে। ফার্স্ট ফ্লাশ, সেকেন্ড ফ্লাশ ও মনসুন ফ্লাশ, ওটাম ফ্লাশ ইত্যাদি নানা প্রকার। এছাড়া বিভিন্ন বিদেশি চায়ের পাতাও রয়েছে। সময় ও স্থান ভেদে চায়ের পাতার স্বাদ, গন্ধ, বর্ণ আলাদা হয়।

সাধারণত তিন ধরনের চা রয়েছে,
সিটিসি চা – যেটা পাতা চা-কে শুকনো করে মেশিনের দ্বারা গুঁড়ো করে তৈরি করা হয়।
পাতা চা- এই চা মূলত হাত বা রোলিং টেবিলে তৈরি। চা গাছ থেকে তুলে সেটাকে রোলিং করে ফার্মানটেশন বা অক্সিডাইজেশনের পর শুকিয়ে তারপর রপ্তানি করা হয়। পাতা গোটা থাকে, এটিকে অর্থোডক্স বা পাতা চা বলে। গোটা পাতা থাকে বলে এই চায়ের গুণ আরও বেশি।
গ্রিন টি – এটাও পাতা চা, কিন্তু এই চা পাতা সবুজই থাকে। এক্ষেত্রে গাছ থেকে পাতা তোলার পর সেটা আর রোলিং করা হয়। কিন্তু ফার্মেন্টিং করা হয় না সেই জন্য পাতার রং সবুজই থেকে যায়। আর সেই চায়ের স্বাস্থ্যগুণ প্রচুর।
আরও একটা কথা মাথায় রাখতে হবে, চা কিন্তু দুধ দিয়ে, চিনি দিয়ে খেলে তার গুণ অনেক নষ্ট হয়। সবচেয়ে উপকার পাতা চা লিকার বানিয়ে পান করলে।

[আরও পড়ুন: অনিদ্রা থেকে শীঘ্রপতন, বহু রোগের ওষুধ গাঁজার উপর বিধিনিষেধ শিথিলের দাবি চিকিৎসকদের]

স্বাস্থ্যগুণ সমৃদ্ধ যেগুলি
ফাস্ট ফ্লাশ চা – দার্জিলিং বা যেকোনও জায়গার চা উৎপাদনের প্রথম মরশুমে যে চায়ের পাতা গজায়, সেই পাতা হল ফার্স্ট ফ্লাশ চা। অর্থাৎ চায়ের ফলনের সঠিক সময় (ফেব্রুুয়ারির শেষ থেকে মার্চ মাসে উৎপাদন শুরু হয়) যেটা সেই সময়ের চা। এই চা সবচেয়ে সুস্বাদু ও স্বাস্থ্যপ্রদ।

বাঙালির সবচেয়ে বড় সমস্যা হল অ্যাসিডিটি বা গ্যাস-অম্বল। সেই সমস্যা নিরাময়ে দার্জিলিং ফার্স্ট ফ্লাশ টি দারুণ কাজ দেয়। শরীরের মেটাবলিজম বা হজম ক্ষমতা বাড়ায়। এই চা শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে। বয়সের ছাপ পড়ে না, কোষের ড্যামেজ প্রতিহত করে। ক্যানসার প্রতিহত করে, ডায়াবেটিস, রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করে ও হাড় শক্ত রাখতে
সাহায্য করে।

গ্রিন টি – এই চা নিয়মিত পান করলে শুধু যে হার্ট ভাল থাকবে তাই নয়, তার সঙ্গে এর আরও অনেক উপকারিতা রয়েছে। ওবেসিটি কাটাতে এই চা দারুণ কাজ করে। তাই এই চায়ের অন্য নাম স্লিমিং টি। এই চা ফ্লাভোনয়েড, ক্যাথেচিন ও এপিগ্যালোক্যাথেচিন সমৃদ্ধ হওয়ায় তা শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়, ক্যানসার প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে। আর এতে উপস্থিত পলিফেনলস নামক উপাদান শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়।

ফিউশন চায়ে টেনশন যায়
আজকাল ফার্স্ট ফ্লাশ, সেকেন্ড ফ্লাশ ইত্যাদি চা নানা রকমের স্বাদে মিলছে। তার সঙ্গে নানা প্রকার ফ্লেভার মিশিয়ে তাকে আরও সুস্বাদু করা হচ্ছে। এতে চা পানের ইচ্ছেটাও যেমন বাড়ে, তেমনই চা-এর চিরাচরিত স্বাদেরও বদল আসে। তাই গরম গরম চায়ের বদলে আজকাল ঠান্ডা চা বা আইস টি-ও অনেকেই পছন্দ করছেন। শীতকালে এই বিশেষ চা গরম পান করলে বেশ উপকার মেলে।

কাশ্মীর কাওয়া টি – হিমাচলপ্রদেশের পালমপুরের গ্রিন টি-এর সঙ্গে কিছু দেশীয় মশলা মিশিয়ে তৈরি করা হয় কাশ্মীর কাওয়া। এই বিশেষ চায়ের স্বাস্থ্যগুণ অনেক। এই শীতকালে এই চা পান করলে অনেক উপকার। সাধারণত শীতকালে ঠান্ডায় অনেক কোষ-কলা ঝিমিয়ে পড়ে, কনকনে ঠান্ডাতেও শরীর গরম রাখতে এই চা ভীষণ ভাল কাজ দেয়। এছাড়া মানসিক চাপ ও স্ট্রেস কমাতেও উপকারী। এই চায়ে অ্যান্টিএজিং উপাদান অনেক বেশি মাত্রায় রয়েছে। তাই পান করলে ত্বকের জৌলুস বাড়ে, বয়সের ছাপ পড়ে না।

ক্যামোমাইল টি – ক্যামোমাইল এক ধরনের চা, কিন্তু চা গাছের পাতা নয়, ক্যামোমাইল ফুল এটি। সেই ফুলের শুকনো অংশ দিয়ে এই চা হয়। তারও স্বাস্থ্যগুণ অনেক। বিশেষত খুব চিন্তায় বা টেনশনে মধ্যে থাকলে, কোনও সিদ্ধান্ত নিতে অসুবিধা হলে সেক্ষেত্রে ক্যামোমাইল চা পান খুব কাজ দেয়। প্রয়োজনে অফিসের কাজের চাপে দুপুরে লাঞ্চের পর এককাপ ক্যামোমাইল চা পান করলে চাপ সামলানো কিংবা মেজাজ ঠিক রাখা অনেকটাই সহজ হতে পারে। এছাড়াও মাসিকের ব্যথা নিরাময়ে কার্যকর।

হার্বাল ইমিউনিটি টি – শীতকালে সর্দি – কাশির সমস্যা লেগেই থাকে। ঠান্ডা লেগে বুকে সর্দি বসে গেলে, গলা খুশখুশ করলে এই চা পান করলে নিমিষে উপশম মেলে।
আসলে এই চায়ে চা পাতার সঙ্গে বিভিন্ন উপকারী হার্বস (লবঙ্গ, তেজপাতা, এলাচ ইত্যাদি) মেশানো হয়। যা কিনা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়, ভাইরাল ইনফেকশন প্রতিরোধ করে। জ্বর, সর্দি, কাশি প্রতিরোধে ও প্রতিকারে কার্যকর।

আলফানসো মনসুন ফ্লাশ টি – দার্জিলিং মনসুন বা বর্ষাকালে যে চা উৎপাদন হয় সেই চায়ের ন্যাচারাল সুগন্ধ অনেকটা কম। এই চায়ের সঙ্গে আলফানসো আমের পাল্প বা শাঁসের শুকনো অংশ মিশিয়ে চা তৈরি করা হয়। তারপর সেটা হট টি বা কোল্ড টি বানিয়ে পান করলে তার স্বাদ অপূর্ব। সারাবছরই গ্রীষ্মকালীন একটা মেজাজ অনুভব করতে, আমের স্বাদ পেতে এই চা অপূর্ব। ভিটামিন, মিনারেল সমৃদ্ধ, ওজনও কমায়।

[আরও পড়ুন: আয়ুর্বেদের ব্রহ্মাস্ত্র অশ্বগন্ধা, রপ্তানির বাজারে কেন বাংলার এই ভেষজর চাহিদা তুঙ্গে?]

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement