shono
Advertisement

ভাঙার পরেও গড়া, সিঙ্গাপুরের বুকের মাঝেই নেতাজি

নেতাজি একা নন, গোটা আইএনএ-র প্রতি এক অদ্ভুত আবেগ সিঙ্গাপুরের।
Posted: 08:54 AM Jan 27, 2023Updated: 09:39 AM Jan 27, 2023

কুণাল ঘোষ, সিঙ্গাপুর: বৃষ্টিভেজা সিঙ্গাপুরে ২৬ জানুয়ারি নেতাজির আইএনএ স্মারকের সামনে দাঁড়ানোর অনুভূতিটাই আলাদা। সিঙ্গাপুর শহরেই, মূল ভিড়ের একটু বাইরে, সবুজ গালিচার উপর স্মারক। ইতিহাসের বার্তা? নাকি ইতিহাস মুছতে না দেওয়ার চ্যালেঞ্জের? এক্ষেত্রে বোধহয় দ্বিতীয়টির জোর বেশি।

Advertisement

সিঙ্গাপুরে সেই ১৯৪২ সালেই তৈরি আইএনএ। যুদ্ধবন্দি ভারতীয় এবং অসামরিক দেশপ্রেমী, সকলকে নিয়েই বাহিনী। প্রথমে নেতৃত্বে রাসবিহারী বসু, এক তুলনামূলক উপেক্ষিত নায়ক। ১৯৪৩ থেকে নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু। সিঙ্গাপুরকে ঘিরে কত তৎপরতা, কত ঘটনা। জাপানি সেনার সঙ্গে হাত মিলিয়ে ইংরেজদের হারিয়ে ভারতবর্ষকে স্বাধীন করার এক ঐতিহাসিক সামরিক অভিযান। আইএনএ সংক্রান্ত ঘটনাবলিতে ঘুরেফিরে গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় সিঙ্গাপুর।

[আরও পড়ুন: হাতেখড়ি বিতর্কের মাঝেই দিল্লি যাচ্ছেন বাংলার রাজ্যপাল, জগদীপ ধনকড়ের সঙ্গে বৈঠকের সম্ভাবনা]

১৯৪৫। জাপানের পতন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের শেষ। গভীর হতাশার মধ্যেই ইন্ডিয়ান ন্যাশনাল আর্মি ভেঙে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেতাজির (Netaji Subhas Chandra Bose)। ব্রিটিশ সেনা ঢুকবে। এতজনকে নতুন করে বিপদে না ফেলে ভবিষ্যতের স্বপ্ন দেখার জন্য বাস্তবমুখী সিদ্ধান্ত। কিন্তু তখনই পরিকল্পনা- নেতাজি সিঙ্গাপুর ছাড়বেন। বাহিনী থাকবে না। থাকবে স্মারক। নাম না জানা কত জনের আত্মবলিদান আর বুক চিতিয়ে লড়াইয়ের স্মৃতি নিয়ে। ৮ জুলাই শিলান্যাস করেন নেতাজি স্বয়ং। এরপর জওয়ানরা দ্রুত তৈরি করেন স্মারক।

এই স্মারক সহ্য করতে পারেনি ব্রিটিশরা। তাদের দম্ভ চুরমার হয়ে যাচ্ছিল স্মারকের উপস্থিতিতেই। তারা ভেঙে দেয় সেটি। লর্ড মাউন্টব্যাটেনের দলবল শেষ করে দেয় নেতাজির শিলান্যাস করা স্মারক। সিঙ্গাপুরবাসী কিন্তু নেতাজিকে আপন করে রেখেছেন। ১৯৯৫ সালে নতুন করে নির্মিত হয়েছে এই স্মারক। আজ তা এখানকার এসপ্ল্যানেডের অন্যতম আকর্ষণ।

[আরও পড়ুন: ‘বেশি ট্যাঁফো কোরো না, টেংরি খুলে দিতে আমরাও জানি’, বনগাঁয় হুঁশিয়ারি মীনাক্ষীর]

সিঙ্গাপুরে (Singapore) এখন ঠান্ডার বালাই নেই। গত চারদিন বৃষ্টি চলছে শুনলাম। কাল রাতে চাঙ্গি বিমানবন্দর থেকে শহরে ঢোকার সময়ও বৃষ্টি পেয়েছি। আজও মেঘ এবং বৃষ্টি। তার মধ্যে সবুজমোড়া এসপ্ল্যানেড পার্ক অপূর্ব। অন্য একটি আমন্ত্রণে সিঙ্গাপুর আসা। কিন্তু ২৬ জানুয়ারির প্রথম কাজই তো নেতাজির স্মারকে প্রণাম।

১৯৪৫ সালে আসল যে স্তম্ভটি বানানো হয়েছিল, তার গঠন আলাদা। ছবিটি নতুন স্মারকস্তম্ভের মধ্যেই আছে। সংহতি, বিশ্বাস, আত্মবলিদানের মন্ত্র রয়েছে এখানেও। ২৩ জানুয়ারি এখানকার কিছু বাসিন্দা ফুল দিয়ে সাজিয়েছিলেন। আজও অনেকে প্রণাম করে যাচ্ছেন। ধন্যবাদ সিঙ্গাপুর সরকার ও হেরিটেজ বোর্ডকে, নেতাজির লড়াইয়ের স্মৃতিকে সসম্মানে আগলে রাখার জন্য।

শুধু এটিই নয়, সিঙ্গাপুর নানাভাবে শ্রদ্ধা জানায় নেতাজিকে। পাডাং এলাকাতেও তার ছাপ। ‘দিল্লি চলো’ ডাক উঠেছিল এখান থেকেই। নেতাজির সেই কণ্ঠ মনে রেখে সিঙ্গাপুর বিশ্বাস করে তাদের স্বাধীনতার পিছনেও অন্যতম নায়ক নেতাজি। আজ স্মারকের সামনে একাধিক প্রবাসী ভারতীয়র সঙ্গে দেখা হল। এক কেরল-বাসিন্দা আমাকে নিয়ে গেলেন স্মারকের কাছে। অনেকের কথাতেই স্পষ্ট, আইএনএ-র সেনাদের উত্তরপুরুষরা আজও আছেন সিঙ্গাপুরে, বাড়ির বৈঠকখানাতে বসেও আজকের প্রজন্মের কাছে বাবা, ঠাকুরদার লড়াইয়ের কাহিনি বলেন তাঁরা। হ্যাঁ, ভাল করে শুনুন, শুধু নেতাজি একা নন, তাঁর প্রতি তো অসীম শ্রদ্ধা বটেই, কিন্তু গোটা আইএনএ-র প্রতি এক অদ্ভুত আবেগ সিঙ্গাপুরের। কারণ, সেই চরিত্রগুলি এখানে রক্তমাংসে ছিলেন। অনেকের পরিচয় জানা, অনেকের কম জানা, অধিকাংশের না জানা। তাই এত বছর পরও সিঙ্গাপুরের স্মারকের সামনে দেখা যায় ইতিহাসকে প্রণাম করতে আসা পুণ্যার্থীদের।

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement