রমেন দাস: আর জি করে তরুণী চিকিৎসকের ধর্ষণ-খুনের ঘটনার ক্ষত এখনও দগদগে। সেই দুর্বহ শোকের মাঝেই বেজে উঠছে আগমনী গান। দেবীপক্ষের সূচনা আর কিছু সময়ের অপেক্ষা। অশুভনাশিনী মা দুর্গা অবতীর্ণ হবেন ধরাধামে, সমস্ত অসুরের বিনাশে। আর তা দ্রুত হোক, সেই দাবিতে আন্দোলন চলছেই। এবার তারই অংশ হিসেবে অভিনব এক গণ কনভেনশনের আয়োজন করলেন ওয়েস্ট বেঙ্গল জুনিয়র ডক্টরস ফোরাম। এসএসকেএমের অডিটোরিয়ামে এই কনভেনশনের মূল বিষয়, সমাজের সর্বস্তরের মানুষের মতামত গ্রহণ এবং সেইমতো আন্দোলনকে চালিত করা। সেই কাজটাই সুচারুভাবে করে চলেছেন জুনিয়র চিকিৎসকরা। শুক্রবারের এই গণ কনভেনশনে যোগ দিয়েছেন বিভিন্ন পেশার বহু মানুষ। রয়েছেন রিকশাচালক, ডেলিভারি বয়রাও। তাঁরাও বিচারের দাবি, নিরাপত্তার দাবিতে নিজেদের বক্তব্য তুলে ধরছেন। প্রশ্ন তুলছেন তদন্ত প্রক্রিয়া নিয়ে। নিশানা করছেন কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা সিবিআইকে।
‘আগুন এখনও নেভেনি’, এই বার্তা দিয়ে শুক্রবার বিকেলে এসএসকেএমের অডিটোরিয়ামে গণ কনভেনশন শুরু করলেন জুনিয়র ডাক্তারেরা। গত ৯ আগস্ট থেকে আর জি করের ঘটনা প্রবাহ দেখানো হয় একটি ভিডিওয়। যাতে সকলের কাছে ছবিটা আরও একবার স্পষ্ট হয়ে যায়। প্রায় ৪৬ জন বক্তা এই কনভেনশনে বক্তব্য রাখেন। এসএসকেএমের ডিরেক্টর মণিময় বন্দ্যোপাধ্যায়ের কথায়, ‘‘জুনিয়র ডাক্তাররা আমাদের স্তম্ভ। এমন ন্যক্কারজনক ঘটনা যে কোনও হাসপাতালে ঘটতে পারে, তা কল্পনাও করা যায় না। এর সঙ্গে যাঁরা সরাসরি বা পরোক্ষভাবে যুক্ত, তাঁদের সকলকে চিহ্নিত করা হোক।'' একে একে সিনিয়র চিকিৎসকদের বক্তব্যে উঠে আসতে থাকে হুমকি সংস্কৃতির মতো বিষয়।
চিকিৎসক দীপ্তেন্দ্র সরকার বলেন, ‘‘আর জি কর নিয়ে আমাদের সন্দেহ মিথ্যা ছিল না। যাঁদের সন্দেহ করা হয়েছিল, সিবিআই তাঁদেরই ডেকেছে। কিন্তু ৫০ দিন পরেও সমাজের অন্ধকার কেটেছে বলে আমি মনে করি না। সিবিআইয়ের দেওয়া খামের তথ্য দেখে প্রধান বিচারপতিও বিচলিত হয়ে পড়েছিলেন। খামে কী রয়েছে তা নিয়ে যদি জানানো হত, তা পশ্চিমবঙ্গের ১০ কোটি মানুষের বিচলিত হওয়ার কারণ হয়তো কিছুটা কমত।’’ হাসপাতালগুলির হুমকি সংস্কৃতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন চিকিৎসক তীর্থঙ্কর গুহঠাকুরতা।
জুনিয়র চিকিৎসকদের প্রতিনিধি দেবাশিস হালদারের আক্ষেপ, ৫০ দিন পেরিয়ে গেল, এখনও বিচার এল না। এই অবস্থায় উৎসবের মানসিকতা নেই। অনিকেত মাহাতো বলছেন, ‘‘ন্যায় বিচার কেউ পাচ্ছেন না। তাই তাঁরা আমাদের আন্দোলনের সঙ্গে সম্পৃক্ত হচ্ছেন। এই সলতে যেন নিভে না যায়। এই অঙ্কুরকে বিনষ্ট হতে দেবেন না, বিচার ছাড়া আমাদের আর কোনও চাওয়া নেই।’’ আর এখানেই সমাজের সর্বস্তরের মানুষের মতামত সংগ্রহের কাজ করছেন জুনিয়র ডাক্তাররা। এনিয়ে এসএসকেএমের পিজিটি বিপ্রেশ চক্রবর্তী বলেন, ''সমাজের শ্রমজীবী মানুষরা এতদিন আমাদের আন্দোলনে আমাদের পাশে ছিলেন। তাই তাঁদের মতামত নেওয়াটাই স্বাভাবিক। তা আমাদের এগিয়ে যেতে সাহায্য় করবে। রিকশাচালক, ডেলিভারি বয়রা আজ এখানে নিজেরাই এসেছেন। আমরা তাঁদের কথা বলতে অনুরোধ করেছি।''