shono
Advertisement
Daspur

এক হাতেই জীবন সংগ্রাম, সংসারের ভার কাঁধে নিয়ে হাসিমুখে এগিয়ে চলেছেন দাসপুরের দুর্গা

এক হাতেই ৩০ বছর ধরে সংসারের হাল টানছেন।
Published By: Suchinta Pal ChowdhuryPosted: 03:59 PM Dec 11, 2024Updated: 03:59 PM Dec 11, 2024

শ্রীকান্ত পাত্র, ঘাটাল: দাসপুরের জগন্নাথপুর গ্রামের দুর্গা এক হাতেই সংসার সামলান। ভোর উঠে সংসারের কাজ সেরে নিজের গড়া দোকানে এসে বসেন। খরিদ্দার সামলে, হিসেব নিকেশ সেরে, মহাজনের সঙ্গে কিস্তির হিসেব মিটিয়ে ফের মন দেন দোকানে। হ্যাঁ, এই দুর্গার উপরই পাঁচ জনের সংসারের ভার। নয় নয় করে এক হাতেই ৩০ বছর ধরে সংসারের হাল টানছেন দুর্গা। ৫০ ছুঁই ছুঁই স্নাতক পাশ এই দুর্গার এই সমাজ, এই সংসারের কাছে নিজের জন‌্য কোনও প্রত‌্যাশা নেই। তাঁর একমাত্র প্রত‌্যাশা সংসারের হাল টেনে নিয়ে যাওয়া।  

Advertisement

জানা গিয়েছে, জন্মের সময় আর পাঁচটা শিশুর মতোই সুস্থ সবল ছিলেন কল্পনা রানা। এলাকায় দুর্গা নামেই পরিচিত। বয়স যখন বছর ছয় সাতেক হবে তখন পথ দুর্ঘটনার কবলে পড়েছিলেন দুর্গা। ডান হাত মারাত্মক জখম হয়ে যায়। পাড়ার এক হাতুড়ে চিকিৎসার ভুলে সেই হাতে পচন ধরে। পরে তা কেটে বাদ দিতে হয়। তাঁর কথায়, “স্কুল থেকে বাড়ি ফেরার পথে রাস্তায় একটি গরুর গুঁতোয় পড়ে গিয়ে আমার ডান হাত ভেঙে গিয়েছিল। এক হাতুড়ে ডাক্তারের ভুল চিকিৎসার ফলে ওই হাতে পচন ধরে যায়। পরে তা কেটে ফেলে দিতে হয়। তা নাহলে পুরো শরীরেই পচন ধরে যেত বলে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা জানান। মেদিনীপুর মেডিক‌্যাল কলেজ হাসপাতালে গিয়ে কনুইয়ের নীচ থেকে কেটে বাদ দিয়ে দেওয়া হয়।”

সেই থেকেই কল্পনা হয়ে যান এক হাতের দুর্গা। বাম হাতেই নিজের কাজকর্ম করতে শুরু করেন। এক হাতে লেখাপড়ার কাজও চালিয়ে যেতে শুরু করেন। পাঁশকুড়া কলেজ থেকে বিএ পাসও করেন। তিনিই সংসারের বড় মেয়ে। কিন্তু সংসারে নুন আনতে পান্তা ফুরোয়। তাই মন দেন কাজে। শুরু করেন টিউশনি আর পাড়ার মোড়ে একটি ছোট্ট মুদি দোকান শুরু করেন। স্বসহায়ক দলের সদস‌্য হয়ে সমবায় থেকে ঋণ পেয়ে যান দুর্গা। এই দোকানই হয়ে ওঠে তাঁর কর্মক্ষেত্র। লড়াইয়ের জায়গা।

প্রায় ৩০ বছর ধরে নিজের সঙ্গে লড়াই করছেন দুর্গা। বছর দুই আগে বাবা প্রয়াত হয়েছেন। ফলে তাঁর কাঁধেই এখন মা, ভাই, ভাই বউ, এক ভাইঝির ভার। সংসারে জমি জায়গা বলতে কিছু নেই বললেই হয়। ভাইও বেকার। ভাইয়ের বউ বাড়িতেই জরির কাজ করেন। বিয়ে, নিজের সংসার নিয়ে প্রশ্ন করতেই দুর্গা বললেন, “ও সব নিয়ে ভাবার সময় পেলাম কই? আমি যে সংসারের বড়। তাই আমার কাঁধেই ভার পড়েছিল সাংসারের। মা, বেকার ভাই, ভাইয়ের সংসার দেখতে হয়। এসব নিয়েই চলছে।” এভাবেই পুরো সংসারের দায়িত্ব কাঁধে নিয়ে হাসিমুখে এগিয়ে চলেছেন দাসপুরের দুর্গা।

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

হাইলাইটস

Highlights Heading
  • দাসপুরের জগন্নাথপুর গ্রামের দুর্গা এক হাতেই সংসার সামলান।
  • জন্মের সময় আর পাঁচটা শিশুর মতোই সুস্থ সবল ছিলেন কল্পনা রানা। এলাকায় দুর্গা নামেই পরিচিত।
  • সেই থেকেই কল্পনা হয়ে যান এক হাতের দুর্গা। বাম হাতেই নিজের কাজকর্ম করতে শুরু করেন।
Advertisement