সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: বিশ্বে লৌহযুগের সূচনা হয়েছিল ভারত থেকে! সম্প্রতি তামিলনাড়ুর তুতিকোরিন জেলায় খননকার্য চালিয়ে এমন একাধিক ঐতিহাসিক নিদর্শন প্রকাশ্যে এসেছে যাতে জোরালো হচ্ছে এই দাবি। পুরাতত্ত্ববিদদের দাবি, ওই অঞ্চল থেকে এমন কিছু লৌহসামগ্রী উদ্ধার হয়েছে যার বয়স খ্রিস্টপূর্বাব্দ ৩,৩৭৫ থেকে ৩,২৫৯ বছর। অর্থাৎ বর্তমান সময় থেকে ৫ হাজার ৩০০ বছর আগে লোহা ব্যবহার করত এই অঞ্চলের মানুষ। তাই যদি হয়, তবে বলার অপেক্ষা রাখে না বিশ্বে লৌহযুগের সূচনা হয়েছিল ভারত থেকে। বদলে যাবে অতীত ইতিহাস।
এতদিন ধরে ইতিহাসবিদদের বেশিরভাগই বিশ্বাস করতেন প্রায় ২,৩০০ বছর আগে তুরস্কের হিটাইটরা লোহার আবিষ্কার করেন। পরে বাণিজ্যিকভাবে তা ভারতে প্রবেশ করে। এই হিটাইট রাজত্বে ওই অঞ্চলে প্রচুর পরিমাণে হেমাটাইট লোউহ আকরিক পাওয়া যেত। সেই থেকেই ইতাহাসবিদদের মধ্যে এই ধারনা তৈরি হয়। তবে সে ধারনা এবার ভাঙতে চলেছে বলে মনে করছে পুরাতত্ত্ববিদরা। পূর্বে ভারতের ১২০০ বা ২০০০ সাল পিছনে গেলে লোহার ব্যবহারের ইতিহাস পাওয়া গিয়েছে। কিন্তু ৫ হাজার ৩০০ বছর পিছনে লোহার ব্যবহারের ইতিহাস এই প্রথম।
সম্প্রতি তুতিকোরিন জেলার খননকার্য চালিয়ে উদ্ধার হয়েছে একটি শবাধার ও বেশকিছু লোহার সামগ্রী। এই ঐতিহাসিক সামগ্রীর বয়স জানতে অ্যাক্সিলারেটর মাস স্পেকটোমেট্রি (এএমএস) এবং অপটিক্যালি স্টিমুলেটেড লুমিনেসেন্স (ওএসএল) পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়। যা কার্বন ডেটিংয়ের চেয়েও নির্ভুল বয়স নির্ধারণ করে। সেই ইতিহাসের উপর ভিত্তি করে গত বৃহস্পতিবার একটি গবেষণাপত্র প্রকাশ করেছে তামিলনাড়ুর পুরাতত্ত্ব বিভাগ। যা লিখেছেন পন্ডিচেরি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক কে রাজন ও আর শিবনন্থন। ৭৩ পাতার এই গবেষণাপত্রে স্পষ্ট দাবি করা হয়েছে, ৫হাজার ৩০০ বছর আগে ভারতে লোহার ব্যবহার ছিল।
এই তথ্য প্রকাশ্যে আসার পর স্বাভাবিকভাবেই ইতিহাসবিদদের একাংশ মনে করছেন, বিশ্বে লৌহযুগের নতুন ইতিহাস লেখা হতে পারে এই তথ্যের ভিত্তিতে। যদিও অনেক ইতিহাসবিদের দাবি, এই গবেষণার গুরুত্ব যে অপরিসীম তা বলার অপেক্ষা রাখে না। তবে এই তথ্যের উপর ভিত্তি করে এতখানি সরলীকরণ ঠিক নয়। মনে করা হচ্ছে, ভারতের হরপ্পা সভ্যতাতেও লোহার নিদর্শন থাকা উচিত। পাশাপাশি এই আবিষ্কারে উচ্ছ্বসিত দেশের জরিপ বিভাগের প্রাক্তন মহাপরিচালক রাকেশ তিওয়ারি। তিনি বলেন, "এতদিন আমরা জানতাম সিন্ধু সভ্যতাকে ভিত্তি করে দেশের পশ্চিমাঞ্চল সমৃদ্ধ হচ্ছিল, তখন বাকি অংশে তার কোনও ছাপ পড়েনি। কিন্তু সাম্প্রতিক গবেষণা সেই ধারনা বদলে দিচ্ছে। নিশ্চিতভাবে এই ঘটনা এক বিরাট আবিষ্কার।"