shono
Advertisement

ঐতিহ্যের নাটুয়াতেই পুজোর আনন্দ, নটরাজের ছন্দ খুলছে অশীতিপর শিল্পীর পরিবেশনায়

৮৪ বছর বয়সেও দুই প্রজন্মকে সঙ্গে নিয়ে নাটুয়া নেচে চলেন হাড়িরাম কালিন্দী। The post ঐতিহ্যের নাটুয়াতেই পুজোর আনন্দ, নটরাজের ছন্দ খুলছে অশীতিপর শিল্পীর পরিবেশনায় appeared first on Sangbad Pratidin.
Posted: 03:38 PM Oct 01, 2019Updated: 03:55 PM Oct 01, 2019

সুমিত বিশ্বাস, পুরুলিয়া: হরপার্বতীর মিলন, আর সেখানে উচ্ছ্বাস নেই, তা তো হতে পারে না। দুর্গোৎসবের একাধিক অনুষঙ্গের মধ্যে নাচগানও গুরুত্বপূর্ণ। দেবীপক্ষে সাবেক মানভূমের অন্যতম আকর্ষণ নাটুয়া নাচ। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এই শিল্পকলার ধার কিছুটা কমলেও, রীতি অটুট। পুরুলিয়া শহর ছাড়িয়ে একটু ভিতরে ঢুকলেই দুর্গাপুজোগুলিতে দেখা যায় ঐতিহ্যশালী নাটুয়ার দৃপ্ত পরিবেশনা।

Advertisement

[আরও পড়ুন: কবিগুরুকে অবলম্বন করে দুর্গাবন্দনা দিল্লির মাতৃমন্দিরে]

লম্বা পেটানো চেহারা।চওড়া গোঁফ। ঝাঁকড়া চুলের তেজ এখন আর না থাকলেও কাঁধ ঝাঁকানোর কায়দা রয়েছে আগের মতোই। গলায় মালা। হাতে গুচ্ছ সুতো। বয়স চুরাশি। একজন নাটুয়ার পরিচিতিতে চোখ বোলানোর সময় এখানে এসেই থমকে যেতে হয়। এই বয়সেও পরিবারের দুই প্রজন্মকে নিয়ে শিব–দুর্গার বিবাহ উপলক্ষে নাটুয়া নাচে পাগলপারা হন বলরামপুরের পাঁড়দ্দা গ্রামের হাড়িরাম কালিন্দী।

পুরুলিয়ার বলরামপুরের কাশের বনে দোলা লাগলেও হাড়িরামের গাঁ পাঁড়দ্দায় কোনও দুর্গাপুজোই হয় না। তাতে কী? উৎসব তো সর্বজনীন, সর্বব্যাপী। তাই দেবীপক্ষ পড়ার সঙ্গে সঙ্গেই নাটুয়া নাচতে থাকেন হাড়িরাম। লম্বা, শ্মশ্রুগুম্ফ-সহ চেহারা ঢাকের বোলে আন্দোলিত হতে থাকে। ডান কাঁধে থাকা ঢাক শূন্যে পাক খাইয়ে বাঁ কাঁধে, কখনও আবার দাঁতে কামড়েই ঘোরাতে থাকেন ঢাক। খেলা দেখান আগুন নিয়ে। দাঁতের শক্তিতে জোয়াল, ঢেঁকি, সিঁড়ি আগের মত আর না তুলতে পারেন না। কিন্তু আজও দন্তশক্তিতে ইট ভেঙে দেন। দেখান রিঙের খেলাও।
সাবেক মানভূমের প্রায় ৬০০–৭০০ বছরের প্রাচীন, পৌরুষদীপ্ত নাচ এই নাটুয়া। পৌরাণিক কাহিনি মতে, নাটুয়া নাচের উৎপত্তি শিবের সঙ্গে দুর্গার বিয়ের সময় থেকে। বলা যায় শিবের নাচ বা শাস্ত্রমতে নটরাজ নৃত্যে যে মুদ্রার ব্যবহার হয়ে আসছে, তা এই নাটুয়া নাচ থেকেই এসেছে। মহালয়ার পর থেকে হাড়িরাম পরিবার নিয়ে নাটুয়া নাচের মহড়ায় মেতে ওঠেন। পাঁড়দ্দা গ্রামে তাঁর ঘরের দাওয়ায় বসে এসব নিয়েই কথা বলছিলেন। জানালেন, “এই সময় আর ঘরে বসে থাকতে ভাল লাগে না। কাঁধে ঢাক তুলে মন যায় নাচতে।” বয়স আশি পেরলেও পুজোয় বরাত পান হাড়িরাম। ঢাক, নাটুয়া নাচে অংশ নেন তাঁর ছেলেরাও। তাই পাঁড়দ্দা গাঁয়ের শেষ প্রান্তে কালিন্দী মহল্লায় এখন শুধুই ঢাকের বোল-নাটুয়া নচের যুগলবন্দি -“ও রে ভাদর আশ্বিনের মজা…/ ও ভাই ভাদর আশ্বিনের মজা…/আর দিকে ছাতা যেন দুর্গাপূজা, ও ভাই রে…/ ও যে জল বৃষ্টির সঙ্গে ছ’মাস হোয় না দেখা/ বৃষ্টি করে কে চুরি বলো, কী করলে হরি…/ও হো রে জল বৃষ্টির জন্য কাঁদে সুন্দরী।”

[আরও পড়ুন: ‘বাংলা গান শুনুন’, পুজোর গান প্রকাশ্যে এনে বার্তা দিলেন ইমন]

বাবা লেড়ু কালিন্দীর হাতে ধরে ১২ বছর বয়সে হাড়িরামের নাটুয়ায় হাতেখড়ি। আর তাঁর হাত ধরেই তিন ছেলে প্রহ্লাদ, কম্পাউন্ডার, গুরুপদ এমনকী তাঁদের ছেলেদেরও এই নাচের পাঠ দেন চুরাশি বছরের হাড়িরাম। কম্পাউন্ডারের আট বছরের ছেলে দ্বিতীয় শ্রেণিতে পড়া অর্জুন কালিন্দী দাদু–বাবার সঙ্গে নাটুয়া নেচেই মাতিয়ে দিচ্ছে। রাত জেগে অনুষ্ঠানও করে। এবার পুজোতেও দাদু ও বড় জেঠুর সঙ্গে ঢাক বাজাতে বরাবাজার যাবে ছোট্ট অর্জুন। কলকাতায় ছৌ–নাটুয়ার বরাত পেয়েছেন মেজ ছেলে কম্পাউন্ডার। ধুতি জড়িয়ে, মাথায় ফেটি বেঁধে, কোমরবন্ধনী-সহ দু’হাতে লম্বা করে রঙবেরঙের কাপড়ের পাড় নিয়ে ছেলে–নাতনি সঙ্গী করে ঢাক হাতে নেচেই যাচ্ছেন হাড়িরাম। “বাপ–ঠাকুরদার নাচ কে বাঁচিয়ে রাখব বলেই তো চাকরি করিনি। নাতিদেরও নাটুয়া শেখাচ্ছি।” হাতে ঢাক নিয়ে কাঁধ ঝাঁকিয়ে বলে গেলেন হাড়িরাম। নটরাজের মুদ্রায় যেন ঝরে পড়ল একরাশ ঔদাস্য।

ছবি: সুনীতা সিং।

The post ঐতিহ্যের নাটুয়াতেই পুজোর আনন্দ, নটরাজের ছন্দ খুলছে অশীতিপর শিল্পীর পরিবেশনায় appeared first on Sangbad Pratidin.

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement