সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়, দুর্গাপুর: সারমেয় শাবকরাও শত্রুসম! নইলে কুকুরছানাদের নৃশংসভাবে পুড়িয়ে মারার চেষ্টা করে কোন দুর্জন? অথচ বাস্তবে ঘটল তেমনই। দুর্গাপুরের তিলক রোডের এক আস্তাকুঁড়েতে ৬ শাবককে ফেলে আগুন লাগিয়ে দেওয়ার অভিযোগে শোরগোল এলাকায়। যদিও এক শাবকের মৃত্যু হয়েছে। বাকি ৫ জনকে অর্ধদগ্ধ অবস্থায় উদ্ধার করে সঙ্গে সঙ্গে পাঠানো হয়েছে নিরাপদ স্থানে। তাদের বাঁচানোর চেষ্টায় হাত লাগিয়েছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। কে বা কারা এই ঘটনা ঘটিয়েছে, সে বিষয়ে অন্ধকারে এলাকাবাসী। তদন্তে নেমেছে পুলিশ। এহেন ঘটনার প্রতিবাদে গর্জে উঠেছে পশুপ্রেমী সংগঠন।
ইস্পাত নগরীর তিলক রোডের ৩০ নং স্ট্রিটের একটি গ্যারাজের পাশে ডাস্টবিনে সদ্য ৬ শাবকের জন্ম দিয়েছিল একটি কুকুর। এলাকাবাসী ছোট ছোট ছানাদের বড় হয়ে উঠতে দেখছিলেন। কখনও কখনও তাদের খাবার দিয়ে সাহায্যও করতেন। কিন্তু শুক্রবার রাতে আচমকাই সেই ডাস্টবিন থেকে ধোঁয়া বেরতে দেখেন স্থানীয় এক মহিলা। তিনি প্রতিবেশীদের ডেকে ডাস্টবিনের সামনে গিয়ে দেখেন, মা-সহ ৫ সারমেয় শাবকের গায়ে আগুন। তারা প্রাণে বাঁচতে চিৎকার করছে। সেখান থেকে কোনওক্রমে আগুন নিভিয়ে শাবকদের উদ্ধার করা হয়। কিন্তু একটি সারমেয় শাবকের মৃত্যু হয়। পাঁচ শাবকের অবস্থা আশঙ্কাজনক। স্থানীয় বাসিন্দারাই প্রথমে তাদের চিকিৎসা শুরু করেন। জানা যাচ্ছে, মা ও বাকি চার শাবকের অবস্থা গুরুতর।
এই আস্তাকুঁড়ের মধ্যে মা ও কুকুরছানাদের পুড়িয়ে মারার চেষ্টা হয়েছিল। নিজস্ব চিত্র।
শনিবার সকালে এই ঘটনা জানাজানি হতেই গোটা এলাকা জুড়ে ব্যাপক চাঞ্চল্য ছড়িয়ে পড়ে। পুলিশের কাছে অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে অজ্ঞাতপরিচয় দুষ্কৃতীদের বিরুদ্ধে। স্থানীয় বাসিন্দা অপর্ণা মুখোপাধ্যায় বলেন,"রাতে হঠাৎ দেখি, ডাস্টবিনের ভিতর থেকে ধোঁয়া বের হচ্ছে দেখে আমরা সেখানে যাই। দেখি, ছটি পথ সারমেয় শাবক-সহ তাদের মা আগুনে জ্বলছে! সেখানে বই, খাতা দিয়ে আগুন জ্বালানো হয়েছে। গন্ধ যাতে না ছড়ায় সেই জন্য নুনের প্যাকেটও রাখা হয়েছিল। এই নির্মম ঘটনা দেখে আমরা হতবাক। আমরা ছটি সারমেয় শাবককেই উদ্ধার করি। একটি সারমেয়র মৃত্যু হয়েছে। পাঁচটি শাবকের অবস্থা আশঙ্কাজনক। সেগুলিকে এলাকাতেই চিকিৎসা করা হচ্ছে। যারা এই ঘটনা ঘটিয়েছে তাদের কঠোর শাস্তির দাবি করছি।"
পশুপ্রেমী সংগঠনের পক্ষ থেকে দুর্গাপুর থানায় অভিযোগ দায়ের করা হয়। পশুপ্রেমী সংগঠনের পক্ষে অনিন্দিতা সরকারের বক্তব্য, "সদ্যোজাত পথ সারমেয়দের উপর এই নির্মম ঘটনা একেবারে মেনে নেওয়া যায় না। আমরা খবর পাওয়া মাত্রই সেখানে গিয়েছি। যারা এই ঘটনার সাথে যুক্ত তাদের কঠোর শাস্তির দাবি করছি।"