রাজকুমার, আলিপুরদুয়ার: হাতি ও মানুষের সংঘাত এড়াতে অভিনব উদ্যোগ জলদাপাড়া জাতীয় উদ্যানের। মাদারিহাটে ইন্টিগ্রেটেড কন্ট্রোল রুম চালু করল জলদাপাড়া জাতীয় উদ্যান কর্তৃপক্ষ। এছাড়া বনাঞ্চলের নিরাপত্তা ব্যবস্থার সঙ্গে জুড়ে দেওয়া হচ্ছে আধুনিক পরিষেবাযুক্ত কন্ট্রোল রুমকে। জঙ্গলে চোরাশিকার, পাচার রুখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেবে এই কন্ট্রোল রুম। দু'টি ফোন নম্বরও চালু করেছে বনদপ্তর। এই দুই মোবাইল নম্বরে ফোন করে যাবতীয় খবর দেওয়া যাবে কন্ট্রোল রুমে। এদিকে, জঙ্গলের বাইরে হাতির করিডরে সৌরবিদ্যুৎচালিত ৩০টি ক্যামেরা বসানো হয়েছে। সেই ক্যামেরা থেকে ফিড সরাসরি চলে যাচ্ছে কন্ট্রোল রুমে। এআই প্রযুক্তিযুক্ত ক্যামেরার ফিড দেখে জরুরি ব্যবস্থা নেবে বনদপ্তর।জলদাপাড়ার এই উদ্যোগে খুশি পরিবেশ প্রেমীরা।
জলদাপাড়া জাতীয় উদ্যানের ডিএফও পারভীন কাশোয়ান বলেন, "আমরা ভবিষ্যতে ক্যামেরা এবং টিম নিশ্চয়ই বাড়াব। আপাতত যদিও অল্প সংখ্যক লোক নিয়ে যতটা ভালো কাজ করতে পারব, সেটাই করার চেষ্টা করব।" অত্যাধুনিক কন্ট্রোল রুমের ফলে চোরাশিকারিদের গতিবিধি নিয়ন্ত্রণ করা যাবে। তার ফলে বাঁচবে হাতিদের প্রাণ। আবার প্রযুক্তি নির্ভর এবং অচিরাচরিত শক্তির ব্যবহারের ফলে পরিবেশ সুরক্ষিত থাকবে। আগামীতে এই পরিকল্পনায় অন্যান্য জাতীয় উদ্যান ও বনাঞ্চল কর্তৃপক্ষ বন্যপ্রাণ রক্ষায় উৎসাহিত হবে বলে আশা তাঁদের। জাতীয় উদ্যান কর্তৃপক্ষকে ধন্যবাদ জানান পরিবেশপ্রেমীরা। এই উদ্যোগে খুশি আলিপুরদুয়ার নেচার ক্লাবের সম্পাদক ত্রিদিবেশ তালুকদার।
বলে রাখা ভালো, ভারত-নেপাল সীমান্তের মেচি নদী থেকে অসম সংলগ্ন সংকোশ নদী পর্যন্ত উত্তরবঙ্গের ‘এলিফ্যান্ট রেঞ্জ’। ওই রেঞ্জের উত্তরে ভুটান,পশ্চিমে নেপাল এবং দক্ষিণে বাংলাদেশ। এখানে রয়েছে বক্সা ব্যাঘ্র প্রকল্প, জলদাপাড়া, গরুমারা, চাপরামারি, নেওরাভ্যালি ও মহানন্দা জঙ্গলের ১ হাজার ২৮৫ বর্গ কিলোমিটার এলাকা। এটাই উত্তরের বুনো হাতিদের বিচরণ ক্ষেত্র। এখন এখানে সাত শতাধিক হাতির বসবাস। কিন্তু নিজেদের বসতি এলাকায় ওরা যে স্বচ্ছন্দে ঘুরে বেড়াতে পারছে তেমন নয়। অপরিকল্পিত নগরায়ণ, বসতি এলাকার সম্প্রসারণ, সড়ক নির্মাণ, বেড়ে চলা ছোট চা বাগান হাতির বিচরণ ক্ষেত্রকে টুকরো পকেটে পরিণত করে ছেড়েছে। ফলে বুনো হাতিরা সহজে এক জঙ্গল থেকে অন্য জঙ্গলে যাতায়াত করতে পারছে না। তার ফলে হাতি ও মানুষে সংঘাত তৈরি হয়েছে। উপদ্রব সবচেয়ে বেশি হচ্ছে আলিপুরদুয়ারের ফালাকাটা ও মাদারিহাটে। অন্যদিকে জলপাইগুড়ির মালবাজার, মেটেলি, বানারহাট ও নাগরাকাটা এলাকায় হাতি-মানুষের সংঘাত বাড়ছে। আর তা রুখতে নানা উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে।
