স্টাফ রিপোর্টার, শিলিগুড়ি: শীতের বিলম্ব এবার কি বাদ সেধেছে অতিথি বিহঙ্গকুলের আনাগোনায়! গত বছরও হেমন্তের ধানখেত সোনালি হতে উত্তুরে হিমেল হাওয়ায় ওরা দলেদলে পাড়ি দিয়েছে উত্তরের নদী জলাশয়ে। তিস্তা, জলঢাকা, মূর্তি, তোর্সা, মহানন্দা নদী, রসিকবিল, সাগরদিঘি-সহ আলিপুরদুয়ার ও জলপাইগুড়ির বিভিন্ন জলাশয় মুখরিত হয়েছে পরিযায়ীদের কলতালে। পাখিপ্রেমীদের ঘিরে ভিন্ন ধরনের পর্যটনশিল্প বিকাশের সম্ভাবনাও তৈরি হয়। কিন্তু এবার ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহেও জলাশয়, নদী শুনশান। পরিস্থিতি দেখে কপালে চিন্তার ভাজ পড়েছে পাখি বিশেষজ্ঞ এবং পরিবেশপ্রেমীদের। কয়েকদিন অপেক্ষার পর তারা কারণ অনুসন্ধানে নামার কথা ভাবছেন।
বম্বে ন্যাচারাল হিস্ট্রি সোসাইটির পাখি বিশেষজ্ঞ সৌম্য চক্রবর্তী বলেন, “এখনও সময় আছে। জলচর পরিযায়ীরা শীত জাঁকিয়ে না পড়লে আসে না। তাই কয়েকদিন অপেক্ষায় আছি। শীত পড়লেও ওদের দেখা না পেলে কারণ অনুসন্ধান করতে হবে।” অবশ্য পাখিপ্রেমীদের দাবি, উত্তরে ক্রমশ পরিযায়ী পাখির আনাগোনা কমছে। শুধু তাই নয়, দ্রুত বদলেছে ওদের শীতকালীন ঠিকানাও। অতিথি পাখিদের এমন আচরণ পরিবর্তনে ভূগোলের গবেষক মহলে উসকে দিয়েছে প্রশ্ন, তবে কি উত্তরের নদী ও জলাশয়গুলো এখন আর নিরাপদ মনে করছে না বিহঙ্গকুল? না কি সেখানে খাদ্য ভান্ডারে টান পড়েছে? তাদের বক্তব্য, পরিযায়ী পাখিরা অত্যন্ত স্পর্শকাতর। নিরিবিলি জলাশয়, নদী ওদের পছন্দের। ময়নাগুড়ি কলেজের ভূগোল বিভাগের প্রধান মধুসূদন কর্মকার বলেন, “সম্ভবত নদী, জলাশয়ে মানুষের আনাগোনা বেড়ে যেতে বিপদের শঙ্কায় ওরা মুখ ফেরাতে শুরু করেছে। না হলে কেন ওরা আগের মতো আসছে না?”
[আরও পড়ুন: বিয়ের মরশুমে মহার্ঘ গোলাপ-রজনীগন্ধা-চন্দ্রমল্লিকা! নবদম্পতির গলায় ৫০০০ টাকার মালা]
পাখিপ্রেমীদের সূত্রে জানা গিয়েছে, সাইবেরিয়া, তিব্বত, চিন-সহ ইউরোপের বিভিন্ন দেশ থেকে পরিযায়ীরা নভেম্বরেই উত্তরের বিভিন্ন প্রান্তে ঢুকে পড়ে। থাকে এপ্রিল মাস পর্যন্ত। ওই সময় প্রজননের কাজ চলে। জলঢাকা, মূর্তি, তিস্তার গজলডোবায় বেশি সংখ্যায় দেখা মেলে চোখাচোখি, কমন ভুজেন্ডার, রেড কর্বোরেট প্রজাতির জলচর পরিযায়ী পাখি। কয়েক বছরের সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে, ওই পাখিদের সংখ্যা ক্রমশ কমেছে। কোচবিহারের রসিকবিলে এক সময় যে পাখিদের দেখা যেত এখন নেই। পাখি সমীক্ষক দলের সদস্য ‘হিমালয়ান নেচার অ্যান্ড অ্যাডভেঞ্চার ফাউন্ডেশন’-এর কো-অর্ডিনেটর অনিমেষ বসু জানান, উত্তরের প্রতিটি নদীতে অত্যাচার বেড়েছে। দিনভর মানুষ ঘুরে বেড়াচ্ছে। কোথাও বিষ ছড়িয়ে, আবার কোথাও জলে বৈদ্যুতিক তার ছড়িয়ে মাছ শিকার চলছে। জল দূষণও বেড়েছে। এসব পরিযায়ীদের প্রভাবিত করছে। তবে এবার ডিসেম্বরের শুরুতেও পরিযায়ী দেখা না মেলার জন্য তিনি আবহাওয়াকেই দুষেছেন।
অনিমেষবাবু বলেন, “প্রতি বছর জানুয়ারিতে পাখি গণনা হয়। এবারও হবে। কারণ ওই সময় ভালো ঠান্ডা থাকে। এবার এখনও দিনে বেশ গরম অনুভব হচ্ছে। ওই কারণে জলচর পরিযায়ীরা আসা শুরু করেনি।” যদিও পাখিপ্রেমী রাজা রাউত মনে করছেন, আবহাওয়া একটি কারণ হতে পারে সব নয়। তিনি বলেন, “দিন কয়েক আগে পরিযায়ী পাখির ছবি তুলতে তিস্তা নদীর গজলডোবায় গিয়েছিলাম। খালি হাতে ফিরেছি। পাখি নাই। একটিও ছবি তুলতে পারিনি। কেন এমন পরিস্থিতি বিষয়টি নিয়ে আমাদের প্রত্যেকের গভীরভাবে ভাবা উচিত। প্রয়োজনে রাস্তায় নামতে হবে।”