সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: কথায় আছে, বাস্তব রূপকথার চেয়েও বিস্ময়কর। আরও একটি কথা বলা হয়, প্রকৃতিই সবচেয়ে বড় জাদুকর। মাঝেমধ্যে এমন কিছু দৃশ্য চোখের সামনে ভেসে ওঠে যে বলতেই হয় - 'কী দেখিলাম! জন্ম-জন্মান্তরেও ভুলিব না।' সম্প্রতি দিল্লি থেকে কাঠমান্ডু যাওয়ার পথে অর্থাৎ হিমালয় অঞ্চলের আকাশে বিমানযাত্রার সময় পাইলটের চোখে পড়েছিল, একসঙ্গে তিন-তিনটি অস্তমিত সূর্য! এক আকাশে কীভাবে তিন সূর্যের অবস্থান সম্ভব? এ কি জাদু নাকি বাস্তব? সেটাই ঠাহর করা যাচ্ছিল না। সেই ছবি তিনি পোস্ট করতেই ভাইরাল সোশাল মিডিয়ায়। বিজ্ঞানীরা অবশ্য তেমন অবাক হচ্ছেন না। কারণ, এমন দৃশ্যের নেপথ্যে যে গূঢ় বিজ্ঞান রয়েছে।
এক আকাশে একাধিক সূর্য তো জ্যোতির্বিজ্ঞান অনুযায়ী সম্ভব নয়। মহাকাশে এক নক্ষত্র থেকে আরেক নক্ষত্রের অবস্থান এতটাই দূরত্বের হয় যে সাধারণ চোখে তা দেখা যায় না। তবে যে হিমালয় পেরিয়ে যাওয়ার সময় তিন-তিনটি সূর্য থেকে ছটা বেরতে দেখলেন ওই পাইলট, তা কি মরুভূমিতে মরীচিকা-সম? একদম ঠিক ধরেছেন। ওটা মরীচিকার মতো ভ্রমমাত্র, যা একেবারে আলোকবিজ্ঞান দ্বারা ব্যাখ্যাযোগ্য। এই অবস্থাকে বিজ্ঞানের পরিভাষায় বলা হয়, পারহেলিয়ন (parhelion) বা সান ডগ।
সূর্যের দু'পাশ থেকে বিচ্ছুরিত ছটায় সূর্যভ্রম। ছবি: সংগৃহীত।
বিষয়টা কেমন? উচ্চ অক্ষাংশের অঞ্চলে থাকে প্রচুর সিরোস্ট্রটাস মেঘ। কেলাসিত বরফের কুচি দিয়ে তৈরি ওই মেঘ হালকা, স্বচ্ছ, সাদাটে ধরনের। ওর মধ্যেই লুকিয়ে জাদু। সূর্য যখন এই মেঘের সাপেক্ষে ২২ ডিগ্রি কৌণিক অবস্থানে থাকে, তখন ওই কেলাসিত বরফ বা মেঘের কুচিতে সূর্যের আলোর প্রতিসরণ এমনভাবে ঘটে যে মনে হয়, পরপর তিন অবস্থানে তিনটি সূর্য বিরাজমান। অথচ বাস্তব হল, সূর্য একটিই। তার দু'পাশ থেকে দুটি 'নকল সূর্য' (Mock Sun) দৃশ্যমান হয়। এটা মূলত সূর্যছটা।
তবে যে কোনও উঁচু পার্বত্য অঞ্চল বা হিমালয় বা আল্পস অঞ্চলে যে এক আকাশে একাধিক 'সূর্য' দেখা যায় অনবরত, তেমনটা নয়। কারণ, এমন 'নকল সূর্য' উদয়ের জন্য সবকটি শর্ত এক সারিতে ঘটতে হয়। যেমন যথেষ্ট পরিমাণ সিরোস্ট্রটাস মেঘের সঞ্চার, সূর্যের কৌণিক অবস্থান, সূর্যালোকের প্রতিসরণ - এসব ঘটলে তবেই Mock Sun দেখা যায়। যা ওইসব অঞ্চলের উপর দিয়ে যাওয়া বিমানচালকদের চোখে পড়া স্বাভাবিক। বিমানযাত্রার বিজ্ঞান আবার বলছে, সিরোস্ট্রাস মেঘ বিমান চলাচলের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ। তাই চালককে সেদিকে কড়া নজর রাখতে হয়।
