shono
Advertisement

সিডনিতে গৌরবজনক ড্র ভারতের, দ্রাবিড়ের জন্মদিনে ‘‌ওয়াল’ হয়ে উঠলেন বিহারী–অশ্বিন‌

এই ড্র জয়ের মতোই গৌরবের।
Posted: 12:49 PM Jan 11, 2021Updated: 02:29 PM Jan 11, 2021

‌অস্ট্রেলিয়া (‌প্রথম ইনিংস):‌ ৩৩৮ অলআউট
ভারত ‌(‌প্রথম ইনিংস):‌ ২৪৪ অলআউট
অস্ট্রেলিয়া (‌দ্বিতীয় ইনিংস):‌ ৩১২/‌৬ ডিঃ (গ্রিন ৮৪, স্মিথ ৮১, সাইনি ২/‌৫৪)‌‌‌
ভারত ‌(দ্বিতীয় ইনিংস):‌ ৩৩৪/‌৫ (‌পন্থ ৯৭, হ্যাজেলউড ২/৩৩)
ম্যাচ ড্র।

Advertisement

সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক:‌ ‌হাতে আট উইকেট। টেস্টের শেষ দিনে জয়ের জন্য প্রয়োজন ৩০৯ রান। হ্যাজেলউড–লিঁও–স্টার্ক–কামিন্সের মতো বোলার রয়েছেন বিপক্ষ দলে। এমন পরিস্থিতিতে আবার দিনের শুরুতেই আউট অধিনায়ক আজিঙ্ক রাহানে। বিরাট কোহালি তো নেই–ই। রোহিত শর্মাও আগেই আউট হয়ে ড্রেসিংরুমে। ‌

এমন পরিস্থিতিতে অতি বড় ভারতীয় সমর্থকও ম্যাচ বাঁচানোর স্বপ্ন দেখবেন না। কিন্তু এই ভারত তো অন্য ধাতুতে গড়া। হাল ছাড়ার বান্দা নন দেশের তারকা ক্রিকেটাররা। চোট পাওয়া ঋষভ পন্থ, চেতেশ্বর পূজারা, পায়ে টান ধরা হনুমা বিহারী এবং রবিচন্দ্রন অশ্বিন- এই চার মূর্তি সিডনিতে শুধু ম্যাচই বাঁচালেন না, দলকে প্রায় জয়ের কাছাকাছিও পৌঁছে দিয়েছিলেন। শেষপর্যন্ত অবশ্য ম্যাচ ড্রই হল। কিন্তু এই ড্র যে জয়ের মতোই গৌরবজনক। পন্থ–পূজারা আউট হয়ে যাওয়ার পরে ‘ওয়াল’ হয়ে ধরা দিলেন অশ্বিন–হনুমা। ক্রিকেটপাগলদের মনে করিয়ে দিলেন রাহুল দ্রাবিড়ের কথা। আজ যে ভারতীয় ক্রিকেটের  ‘দ্য ওয়াল’-এর জন্মদিন।  

[আরও পড়ুন: দুর্ঘটনার কবলে শোয়েব মালিকের গাড়ি, কেমন আছেন প্রাক্তন পাক অধিনায়ক?‌]

ভারতকে মাটি ধরিয়ে সিরিজের প্রথম টেস্ট ম্যাচ জিতেছিল অস্ট্রেলিয়া। পরের টেস্টেই রাহানের নেতৃত্বে দারুণ প্রত্যাবর্তন টিম ইন্ডিয়ার। সিডনি টেস্টের জন্য অন্য চিত্রনাট্য লেখা ছিল। টেস্টের শুরু থেকেই চালকের আসনে বসে পড়েছিলেন স্টিভ স্মিথরা। তার উপরে চোট বড় সড় ধাক্কা দিয়েছিল ভারতীয় শিবিরকে। আঙুল ভাঙেন রবীন্দ্র জাদেজা। কনুইয়ে চোট পান ঋষভ পন্থ। তার উপরে দ্বিতীয় ইনিংসে অজিরা পাহাড়প্রমাণ ৪০৭ রানের বোঝা চাপিয়েছিল ভারতের উপরে। এই অবস্থায় ব্যাট করতে নেমে রোহিত–গিলের হাত ধরে শুরুটাও ভালই হয়। কিন্তু চতুর্থ দিনের খেলা শেষ হওয়ার আগেই দুই ওপেনার আউট হন। রাহানে–পূজারা জুটির দিকে তাকিয়ে ছিলেন দেশের ক্রিকেটভক্তরা। পঞ্চম দিনের শুরুতেই আউট ভারত অধিনায়ক। বাড়তে থাকে চাপ। এই অবস্থায় পালটা মারের খেলা শুরু করেন পন্থ। শুরুতে বেশ কয়েকবার সুযোগ দিলেও পরে গিয়ার বদলান বাঁ হাতি ব্যাটসম্যান। পন্থের আক্রমণাত্মক ব্যাটিং সাজঘরের পরিবেশ বদলে দেয়। আত্মবিশ্বাস এনে দেয় বাকিদের মনে। উলটোদিকে  ক্রিজ আঁকড়ে পড়ে থাকেন পূজারা। শেষপর্যন্ত এই জুটি ভাঙেন লিঁও। শতরান মাঠে ফেলে আসেন পন্থ (৯৭)। তাঁকে নিয়ে কত সমালোচনা। তাঁর কিপিং নিয়ে সমালোচনা করেন দেশের প্রাক্তনরা। ব্যাট করতে নেমে বেহিসেবি শট খেলে বহুবার উইকেট ছুড়ে দিয়ে এসেছেন। এহেন ঋষভ পন্থ সিডনিতে স্মরণীয় ইনিংস খেলে গেলেন। এ দিনও মাঠের বাইরে বল ওড়াতে গিয়ে আউট হন। পন্থের  উলটো মেরুর বাসিন্দা আবার পূজারা। ক্রিজে দাঁড়িয়ে থেকে অজি বোলারদের বিষ শুষে নিচ্ছিলেন তিনি। ২০৫ বলে ৭৭ রানের ইনিংস খেলেন পূজারা।

[আরও পড়ুন: জঘন্য পারফরম্যান্সের জের, নিলামের আগে কেকেআর বাদ দিতে পারে এই তারকাদের]

পন্থ-পূজারা আউট হওয়ার পর ম্যাচ হারার আশঙ্কা তৈরি হয়। দিনের খেলা তখনও অনেকটাই বাকি। জয় তখনও অনেক দূর।  এই পরিস্থিতিতে এক অনন্য লড়াইয়ের সাক্ষী থাকল ক্রিকেটবিশ্ব। সেই লড়াইয়ের দুই নায়ক হনুমা বিহারী এবং রবিচন্দ্রন অশ্বিন। বিহারী ব্যাট করলেন সাড়ে তিন ঘণ্টার উপরে। তিন ঘণ্টার উপর ক্রিজে সময় কাটালেন অশ্বিন। রান নিতে গিয়ে হ্যামস্ট্রিংয়ে টান ধরে বিহারীর। এরকম পরিস্থিতিতে দ্রুত রান নেওয়া যায় না। পা অনেক সময় বিশ্বাসঘাতকতা করে বসে ব্যাটসম্যানের সঙ্গে। এত প্রতিবন্ধকতার মধ্যে লড়াই করে গেলেন হনুমা বিহারী। ১৬১ বলে করলেন ২৩ রান। এই ২৩ রান সেঞ্চুরির সমান। কারণ তখন দরকার ছিল উইকেটে টিকে থাকা। উইকেট গেলেই রক্তের স্বাগ পেয়ে যেত অস্ট্রেলিয়া। চাপ বাড়াত ভারতের উপরে। তাতে ভেঙেও পড়তে পারত ভারতের ব্যাটিং। এখানেই বিহারী জিতে গেলেন। রবিচন্দ্রন অশ্বিনও দাঁত কামড়ে পড়ে থাকলেন উইকেটে। ১২৮ বলে ৩৯ রান করলেন। কখনও কখনও রক্ষণও মনে ছাপ ফেলে যায়। তারও একটা সৌন্দর্য থাকে। টেস্ট ক্রিকেট তো এরকমই। সবকিছুর পরীক্ষা দিতে হয়। বিহারী-অশ্বিনের জমাটি ডিফেন্স ভাঙতে পারেননি স্টার্করা। যদিও উইকেটের পিছনে বিহারীর ক্যাচ ফেলেন টিম পেইন। সেই ক্যাচ ধরলে হয়তো বদলেও যেতে পারত ম্যাচের  ভাগ্য।  

একাধিক খেলোয়াড়ের চোট–আঘাত থেকে শুরু করে ম্যাচ চলাকালীন অজি সমর্থকদের বর্ণবিদ্বেষমূলক মন্তব্য, এমনকী ম্যাচের আগে কোয়ারেন্টাইনের বিধিভঙ্গ নিয়ে অজি সংবাদমাধ্যমের একাধিক অভিযোগ। টিম ইন্ডিয়ার ফোকাস নড়িয়ে দেওয়ার কম চেষ্টা করেনি অস্ট্রেলিয়া। মাঠের ভিতরের ‘বাউন্সার’ সামলানোর থেকেও মাঠের বাইরের ঘটনার ‘বিমার’ অসহনীয় হয়ে উঠছিল। এরকম পরিস্থিতিতে সিডনি দেখল এক দুরন্ত লড়াই। ব্রিসবেনে চতুর্থ টেস্টে আরও আত্মবিশ্বাসী হয়েই যে নামবে ভারত, তা বলাই বাহুল্য। 

 

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement