‘রাজনৈতিক হস্তক্ষেপেই পিছিয়ে গেল ভারতীয় ফুটবল’, ফিফার নির্দেশে আক্ষেপ প্রাক্তনদের

11:27 AM Aug 16, 2022 |
Advertisement

সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: সর্বভারতীয় ফুটবল ফেডারেশনকে (AIFF) সাসপেন্ড করে দিয়েছে ফিফা। ফুটবল প্রশাসনে তৃতীয় পক্ষের হস্তক্ষেপের ফলে ফিফার নিয়ম লঙ্ঘন করা হচ্ছে, সেই অভিযোগেই শাস্তি দেওয়া হয়েছে ভারতীয় ফুটবলকে। এহেন সংকটময় পরিস্থিতিতে প্রাক্তন ফুটবলার থেকে প্রশাসকরা আঙুল তুলছেন ফেডারেশন কর্তাদের দিকেই। তাঁদের মতে, ক্ষমতা আঁকড়ে পড়ে থাকার মানসিকতার মাশুল দিতে হল ভারতীয় ফুটবলকে। ফিফার (FIFA) সিদ্ধান্তে ভারতীয় ফুটবল অনেকটাই পিছিয়ে গেল, এমনটাই জানিয়েছেন তাঁরা।

Advertisement

মোহনবাগান ক্লাবের সচিব দেবাশিস দত্ত বলেছেন, “২০১৯ বা ২০২০ সালে যদি নিয়ম মেনে ফেডারেশনের নির্বাচন করা হতো, তাহলে এই সমস্যার মধ্যে পড়তে হতো না। শীর্ষ আদালতের নির্দেশে প্রাক্তন ফুটবলারদের প্রশাসনের দায়িত্বে আনা হয়েছিল। কিন্তু এটা বোঝা দরকার, ভাল ফুটবলার প্রশাসনিক ক্ষেত্রে সেরকম দক্ষ নাও হতে পারেন। আপাতত আগামিকাল সুপ্রিম কোর্টে শুনানি রয়েছে, সেখানে শীর্ষ আদালত কী রায় দেয়, সেদিকেই তাকিয়ে রয়েছি।”

ফিফার সিদ্ধান্তের ফলে ডামাডোল শুরু হয়েছে, আদৌ এএফসি কাপের ইন্টারজোনাল সেমিফাইনালে মোহনবাগান (Mohun Bagan) খেলতে পারবে কিনা। সেই প্রসঙ্গে দেবাশিস দত্ত বলেছেন, “কিছু কর্তাদের অযোগ্যতায় আন্তর্জাতিক স্তরে মোহনবাগানের অংশগ্রহণ নিয়ে জটিলতা তৈরি হল। কে এর দায় নেবে?” ফেডারেশনের বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগরে দিয়েছেন প্রাক্তন ফুটবলার মানস ভট্টাচার্যও। তিনি বলেছেন, “ভারতের সমস্ত ক্রীড়া প্রশাসনেই পদ আঁকড়ে থাকার প্রবণতা ছিল। তা দূর করতেই হস্তক্ষেপ করেছিল সুপ্রিম কোর্ট। কিন্তু অন্য সব প্রশাসনে নিয়ম মাফিক নির্বাচন হয়ে গেলেও ফুটবলে কিছুই কাজ হয়নি।। ভারতের ক্রীড়া জগতে রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ এত বেশি, তার ফলেই শাস্তির মুখে পড়তে হল দেশের ফুটবলকে।”

Advertising
Advertising

[আরও পড়ুন: গৃহযুদ্ধে জর্জর মায়ানমারে রাষ্ট্রসংঘের বিশেষ প্রতিনিধি, চাপ বাড়ল সেনাশাসকদের]

২০১৮ সালের বিশ্বকাপ চলাকালীনই পাকিস্তানকে নির্বাসনে পাঠিয়েছিল ফিফা। সেই প্রসঙ্গ টেনে মানস জানিয়েছেন, “নির্বাচন নিয়ে গড়িমসির জন্য দায়ী সুপ্রিম কোর্ট নিযুক্ত কমিটিই। তাদের ব্যর্থতার কারণেই অনূর্ধ্ব-১৭ মেয়েদের বিশ্বকাপ হাতছাড়া হতে বসেছে।” সুপ্রিম কোর্ট নিযুক্ত কমিটির সদস্য ভাস্কর গঙ্গোপাধ্যায় অবশ্য কোনও মন্তব্য করতে চাননি। তিনি বলেছেন, “এটা সুপ্রিম কোর্টের বিচারাধীন বিষয়। তারাই যা বলার বলবে।”

ফিফার সিদ্ধান্ত একটু বেশি কড়া হয়ে গিয়েছে বলে মনে করেন প্রাক্তন ফুটবলার গৌতম সরকার। তিনি বলেছেন, “ভারতীয় ফুটবলের বড় ক্ষতি হয়ে গেল এই সিদ্ধান্তে। ফিফা এমন সিদ্ধান্ত না নিলেই বোধ হয় ভাল হতো।” জাতীয় দলের প্রাক্তন অধিনায়ক বাইচুং ভুটিয়াও মনে করেন , ফিফার সিদ্ধান্ত খুবই কঠোর হয়েছে। তবে এর ফলে প্রশাসনের উন্নতি হবে বলেই মনে করেছেন তিনি।  জাতীয় দল এবং মোহনবাগানের প্রাক্তন ফুটবলার সুব্রত ভট্টাচার্য বলেছেন, “এই পরিস্থিতি থেকে ঘুরে দাঁড়ানো খুবই মুশকিল। ফুটবলের উন্নতি করতে যাঁদের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে, কেউই কিচ্ছু জানেন না। প্রাক্তন ফুটবলার দীপেন্দু বিশ্বাসও মনে করেন, ভারতীয় ফুটবলের ইতিহাসে অন্যতম কালো দিন। নির্বাচন করাতে ফেডারেশনের গাফিলতির জন্যই এমন শাস্তি পেতে হল ভারতীয় ফুটবলকে। অনূর্ধ্ব-১৭ মহিলা বিশ্বকাপ আয়োজন করার মতো এতবড় সুযোগও হাতছাড়া হয়ে গেল। অনেক পিছিয়ে গেল ভারতীয় ফুটবল।” ফিফার এই সিদ্ধান্তে ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হবে কলকাতার ফুটবল। এএফসি কপে খেলতে পারবে না মোহনবাগান। বিদেশি খেলোয়াড় সই করাতে পারবে না ইস্টবেঙ্গল (East Bengal)। দ্রুত সমস্যা সমাধান হবে, আশা করছে ফিফা। তবে ভারতীয় ফুটবল কর্তাদের টনক নড়বে কি, তা নিয়ে সংশয় রয়েই যাচ্ছে।

নির্বাচন প্রক্রিয়া নিয়ে আলোচনা করতে আগামী বৃহস্পতিবার বৈঠক ডাকা হয়েছে এআইএফএফের তরফে। সেই আলোচনায় অংশ নেবেন ৩৫টি রাজ্যের ফুটবল প্রশাসকরা। নির্বাচনী বিধি এবং সংবিধান নিয়ে আলোচনা করা হবে। তবে তার আগে এই বিষয়ে রায় দেবে সুপ্রিম কোর্ট। সেই দিকে তাকিয়ে রয়েছেন ফুটবলপ্রেমীরা।  

[আরও পড়ুন: স্বাধীনতা দিবসে পরপর জঙ্গি হামলা কাশ্মীরে, শহিদ এক পুলিশকর্মী, আহত অন্তত দুই]

Advertisement
Next