shono
Advertisement

মহিলা সাইক্লিস্টকে যৌন হেনস্তার অভিযোগ, কোচকে বরখাস্ত করল সাই

সাইক্লিস্ট দলকে স্লোভেনিয়া থেকে দেশে ফেরত আনা হচ্ছে।
Posted: 04:15 PM Jun 09, 2022Updated: 04:23 PM Jun 09, 2022

স্টাফ রিপোর্টার: যৌন হেনস্তার শিকার হলেন এবার এক মহিলা সাইক্লিস্ট (Female Cyclist)। ফলে পুরো দলকে স্লোভানিয়া থেকে ফেরত নিয়ে আসা হচ্ছে। অভিযুক্ত কোচ আর কে শর্মাকে তদন্ত কমিটির সামনে বসতে হবে। স্পোর্টস অথরিটি অব ইন্ডিয়া বা সাই (SAI) একথা স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছে। তার আগেই অবশ্য কোচের পদ থেকে আর কে শর্মাকে সরিয়ে দেওয়া হল। বুঝিয়ে দেওয়া হল, সাই এই অভিযোগকে কতটা গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করছে।

Advertisement

পাঁচ পুরুষ ও এক মহিলার সাইক্লিস্ট দল ১৫ মে স্লোভেনিয়া (Slovenia) রওনা দিয়েছিল। সেখানে ট্রেনিংয়ের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় নামার কথা। পুরো দল ফিরে আসার কথা ছিল ১৪ জুন। এবছর এশিয়ান সাইক্লিং চ্যাম্পিয়নশিপ ১৮-২২ জুন হচ্ছে দিল্লিতে। কিন্তু অপ্রীতিকর আচরণ প্রদর্শনের গুরুতর অভিযোগ কোচের বিরুদ্ধে এনেছেন মহিলা সাইক্লিস্ট। তাই তড়িঘড়ি করে পুরো দলকে দেশে ফিরে আসার জন্য নির্দেশ দিয়েছে সাই। সংবাদ সংস্থাকে এই খবর জানিয়ে সাইক্লিং ফেডারেশনের চেয়ারম্যান ওঙ্কার সিং বলেছেন, “সাইয়ের পক্ষ থেকে বুধবার সকালে সাইক্লিং ফেডারেশনকে ডেকে পাঠানো হয়েছিল। বলে দেওয়া হয়েছে, কোচ আর কে শর্মা সহ পুরো দলকে দেশে যত শীঘ্র সম্ভব ফিরিয়ে আনতে হবে।” পরে সাই ঘোষণা করে দেয়, আর কে শর্মাকে কোচের পদে আর রাখা যাবে না। অর্থাৎ চাকরি গেল কোচের।.

মহিলা সাইক্লিস্ট সরাসরি কোচ আর কে শর্মার নামে সাইয়ের কাছে ই-মেলে অভিযোগ করে বলেছেন, কোচ তাঁকে রাতে একটা ঘরে থাকার প্রস্তাব দেন। এমন কী ‘স্ত্রী হয়ে থাকার কথা’ বলেছিলেন তিনি। না হলে ‘তাঁর জীবনে সবজি বিক্রি করা ছাড়া’ আর কিছু জুটবে না। এমনকী জীবন সংশয়ের হুমকিও দিয়েছিলেন। এসব শুনে তিনি প্রচন্ড আতঙ্কিত হয়ে পড়েন। ভয় পেয়ে যান। অভিযোগ অনুসারে, মহিলা সাইক্লিস্ট যখন শিবির ছেড়ে দেশে ফিরে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন তখন সংশ্লিষ্ট মহিলার পরিবারের সঙ্গে কথা বলেন কোচ। জানিয়ে দেন, খেলাধুলোয় তাঁর মেয়ের কোনও ভবিষ্যত নেই। বিষয়টি সোমবার প্রকাশ্যে এসে পড়ে। যেখানে বিবৃতি প্রকাশ করে সাই বলেছিল, একজন সাইক্লিস্টের জীবন বাঁচাতে দেশে ফেরত নিয়ে আসা হচ্ছে।

[আরও পড়ুন: টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের প্রস্তুতি শুরু আজ থেকেই, দিল্লিতে ভারতের সামনে দক্ষিণ আফ্রিকা]

 মহিলা সাইক্লিস্ট সরাসরি কোচের বিপক্ষে ই-মেলে পাঠানো অভিযোগ পত্রে জানিয়েছেন, ‘স্লোভেনিয়ায় ১৫ মে থেকে সাইক্লিং প্রশিক্ষণ করার ব্যবস্থা করা হয়েছিল। নির্ধারিত ভ্রমণের তিন দিন আগে কোচের কাছ থেকে একটা ফোন পাই। সেখানে তিনি বলেন, তাঁর সঙ্গে স্লোভেনিয়ার হোটেল বালনিয়াতে একই ঘরে থাকতে হবে। এই কথা শোনার পর আমি খুব ভয় পেয়ে যাই। ঘুমোতে পারছিলাম না। তখন আমি স্পোর্টস মনোবিদের সঙ্গে কথা বলি। কিন্তু স্লোভেনিয়ার ফ্লাইট ধরার জন্য সময় ছিল খুব সংক্ষিপ্ত। বিষয়টা নিয়ে অন্যান্যদের সঙ্গে কথা বলতে পারিনি। আমি ভেবেছিলাম, স্লোভানিয়ায় পৌঁছলে সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে।

১৬ মে স্লোভানিয়ায় পৌঁছই। আলাদা একটা ঘর দেওয়ার জন্য কোচকে অনুরোধ করি। খুব খারাপ ব্যবহার করেন কোচ। এমনকী এও জানিয়ে দেন, আমাকে দেশে ফেরত পাঠিয়ে দেওয়া হবে। তাই কোচের ঘরে থাকা ছাড়া আমার অন্য কোনও উপায় ছিল না। হোটেলের রেকর্ডে এটাই দেখানো হয়েছে। তখন বিষয়টা সাইয়ের নজরে আনি। তড়িঘড়ি করে সাই আলাদা ঘরের ব্যবস্থা করে। এই বিষয়টা কোচ মন থেকে মেনে নিতে পারেননি। তিনি আমার জীবন ধ্বংস করার নানা হুমকি দিতে থাকেন। শুধু তাই নয়, এমনও বলেন এনসিওই থেকে সরিয়ে দেবেন আমাকে। রাস্তায় সবজি বিক্রিই হবে আমার জীবনের একমাত্র পথ। ক্রমাগত মানসিক যন্ত্রণা, ভয় আমাকে পেয়ে বসে। ১৯ মে কোচ তাঁকে ট্রেনিংয়ের শেষে ম্যাসাজের জন্য প্রস্তাব দেন। কোচের বক্তব্য ছিল, প্র‌্যাকটিসের পর আমার শরীর শক্ত করার প্রয়োজন আছে। সেই প্রস্তাব মানিনি। ২৫ মে দল জার্মানি যায়। সেই দলে আমাকে রাখা হয়নি। কারণ হিসেবে তুলে ধরা হয়েছিল, থাকার জন্য অতিরিক্ত কোনও ঘর নেই। তাই দলের বাকিরা গেলেও আমি যাইনি।

বিষয়টা বাড়াবাড়ি পর্যায়ে যায় ২৯ মে। সেদিন কোচ জার্মানি থেকে ভোর সাতটায় ফিরে আসেন। দেখলাম, কোচ আমাকে জোর করে ঘরে টেনে নিয়ে যেতে চান। ঘর থেকে বেরিয়ে যাওয়ার জন্য তাঁকে অনুরোধ করি। তখন কোচ বলেন, আমাকে ওর খুব পছন্দ। স্ত্রী করে সারা জীবন রাখতে চান। এই কথা শোনার পর আমি খুব আতঙ্কিত হয়ে পড়ি। ভয় পেয়ে যাই। বারবার ঘর ছাড়ার জন্য অনুরোধ করতে থাকি। এমন কী এও বলি, আমাকে প্র্যাকটিসে যেতে হবে। তারজন্য প্রস্তুত হওয়া প্রয়োজন। কয়েক ঘন্টা কেটে যাওয়ার পর বিষয়টা আমি ক্রীড়া মনোবিজ্ঞানীকে জানাই। তাঁর এই অভব্যতা সহ্য করতে পারছিলাম না। তখন ঠিক করি ক্যাম্প ছেড়ে চলে যাব। তখন আমি যোগাযোগ করি টপসের প্রধান পুষ্পেন্দ্র গর্গের সঙ্গে। ৩ জুন আমাকে ফিরে আসার কথা বলেন। তাই আমার অনুরোধ, আপনারা আর কে শর্মাকে কঠোর শাস্তি দিন। শুধু আমার নিরাপত্তার জন্য নয়, অন্যান্য মহিলা ক্রীড়াবিদরা যাতে নিরাপত্তার বিষয়ে নিশ্চিত হয়।” সাইক্লিং ফেডারেশন পুরো বিষয়টা খতিয়ে দেখা শুরু করে। সাই সিদ্ধান্ত নিয়েছে, পাঁচ জনের কমিটির সামনে কোচ আর কে শর্মাকে ডাকা হবে। 

[আরও পড়ুন: ইসলাম বিরোধী মন্তব্যের জের, বিশ্বকাপে ভারতীয়দের প্রবেশে এখনই অনুমতি দিতে নারাজ কাতার

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement