সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: প্রায় চারঘণ্টার বৈঠক। ভারতীয় সময় অনুযায়ী বৃহস্পতিবার মধ্যরাতে মুখোমুখি হন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প (Donald Trump) ও প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি (PM Narendra Modi)। দীর্ঘ সময় ধরে কথা হয় দুই 'বন্ধু'র। ওই বৈঠকের আগেই অবশ্য ট্রাম্প ঘোষণা করেন, এবার পারস্পরিক শুল্ক আরোপের পথে হাঁটবে আমেরিকা। যা থেকে পরিষ্কার হয়ে যায়, এর প্রভাব ভারতের উপরেও পড়তে চলেছে। এই পরিস্থিতিতে মোদির সঙ্গে ট্রাম্পের বৈঠকের মেজাজ কেমন থাকবে, সেই প্রশ্ন ছিলই। কিন্তু কূটনৈতিক দুনিয়ায় শেষপর্যন্ত দেওয়ানেওয়ার গল্পে কে কী পেল সেটাই আসল। সেক্ষেত্রে বৈঠক থেকে দিল্লির প্রাপ্তি কী হবে তা নিয়েই ছিল আলোচনা। শেষপর্যন্ত দেখা গেল ভারতের প্রাপ্তির ঝুলিতে রয়েছে এফ-৩৫ যুদ্ধবিমান এবং আরও বহু কিছুই।
এফ-৩৫ যুদ্ধবিমান
ভারতকে পঞ্চম প্রজন্মের এফ-৩৫ যুদ্ধবিমান দেবে আমেরিকা। বৈঠকে এই প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। পাশাপাশি আরও প্রতিরক্ষা সরঞ্জামও সরবরাহ করার কথা দিয়েছেন তিনি। এই যুদ্ধবিমান যে প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রে অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ এক সংযোজন হতে চলেছে সেবিষয়ে নিশ্চিত ওয়াকিবহাল মহল।
৫০০ বিলিয়ন ডলারের দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য
মোদি ও ট্রাম্পের মধ্যে বহু বিষয়েই কথা হয়েছে। বাণিজ্য, প্রতিরক্ষা, প্রযুক্তি নানা ইস্যুই উঠে আসে আলোচনায়। বৈঠক শেষে মোদি জানান, ভারত ও আমেরিকা ২০৩০ সালের মধ্যে তাদের দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যের পরিমাণ দ্বিগুণ বাড়িয়ে ৫০০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার করতে চায়। এবং দুই দেশ খুব শিগগির একটি পারস্পরিক লাভজনক বাণিজ্য চুক্তি করবে।
অভিবাসী প্রত্যর্পণ
এরই পাশাপাশি ট্রাম্প ও মোদির (Modi-Trump) মধ্যে কথা হয় বেআইনি অভিবাসী নিয়েও। আর সেখানে মোদি কথা দেন, মার্কিন মুলুক থেকে প্রত্যেক বেআইনি অনুপ্রবেশকারী নাগরিককে ফিরিয়ে নেবে ভারত। তাঁর সাফ কথা, বেআইনি ভাবে প্রবেশ করে বিশ্বের কোনও দেশেই থাকার অধিকার নেই কারও। সেই সঙ্গে জানান, আমজনতাকে ভুল বুঝিয়ে পাচার করা হচ্ছে। তবে মোদি আরও বলেন, মানব পাচারের বিরুদ্ধে একজোট হয়ে কাজ করতে হবে ভারত এবং আমেরিকাকে। পাচারচক্রকে নির্মূল করতে ‘যুদ্ধে’ নেমেছে ভারত। প্রধানমন্ত্রীর আশা, এই যুদ্ধে সর্বতোভাবে সাহায্য করবেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প।
তাহাউর হুসেন রানার প্রত্যর্পণ
২৬/১১ মুম্বই হামলার অন্যতম অভিযুক্ত তাহাউর হুসেন রানাকে ভারতে প্রত্যর্পণ নিয়েও কথা হয়েছে দুই রাষ্ট্রনেতার মধ্যে। এপ্রসঙ্গে মোদি জানিয়েছেন, ''আমি প্রেসিডেন্টের কাছে কৃতজ্ঞ যে তিনি এক অপরাধীকে ভারতে প্রত্যর্পণের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। ওই অপরাধী ২০০৮ সালে ভারতে গণহত্যা চালিয়েছিল। ভারতের আদালত যথাযথ পদক্ষেপ করবে তার বিরুদ্ধে।'' সন্ত্রাস দমনে একযোগে কাজ করার ব্যাপারেও দুই দেশের মধ্যে কথা হয়েছে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।
অসামরিক পরমাণু চুক্তি
ট্রাম্প জানিয়েছেন, মোদির (Narendra Modi) সঙ্গে তাঁর বৈঠকে ঠিক হয়েছে দুই দেশের প্রতিরক্ষা শক্তিকে মজবুত করতে আমেরিকার পারমাণবিক প্রযুক্তিতে সাহায্য করবে ভারত। পাশাপাশি দুই দেশের যৌথ বিবৃতি অনুসারে, ভারতে মার্কিন-পরিকল্পিত পারমাণবিক চুল্লি নির্মাণের জন্য একসঙ্গে কাজ করার পরিকল্পনাও করা হয়েছে বৈঠকে। আর এভাবেই মার্কিন-ভারত ১২৩ অসামরিক পারমাণবিক চুক্তির দিকে এগোবে দুই দেশ।
MAGA থেকে MIGA
মার্কিন মসনদে ফেরার স্বপ্ন দেখা ট্রাম্প (Donald Trump) কথা দিয়েছিলেন তিনি আমেরিকাকে আবার মহান করে তুলবেন। সেই দৃপ্ত ঘোষণা 'মেক আমেরিকা গ্রেট এগেইন' সংক্ষেপে 'মাগা' থেকে অনুপ্রেরণা নিয়েছেন মোদি। তিনি এদিনের বৈঠকে পর একটি নতুন শব্দবন্ধ ব্যবহার করেছেন। MIGA। অর্থাৎ 'মেক ইন্ডিয়া গ্রেট এগেইন'। মোদি বলেন, ''প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প প্রায়ই বলেন 'মাগা'র কথা। আর ভারতে আমরা বিকশিত ভারতের কথা বলি। অর্থাৎ মার্কিন ধারা অনুসারে সেটাকে বলা যায় 'মিগা'। আর একসঙ্গে মিলে ভারত ও আমেরিকা উন্নতির লক্ষ্যে একটি 'মেগা' জোট তৈরি করবে।''