সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: প্রেসিডেন্টের গদিতে বসে একের পর এক বিধিনিষেধ আরোপ করে চলেছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। এবার তাঁর নজরে ব্রিকস। এই গোষ্ঠীর সদস্য দেশগুলোর উপর ১০০ শতাংশ শুল্ক চাপানোর হুঙ্কার দিয়েছেন তিনি। কারণ ব্রিকসে রয়েছে ভারত, রাশিয়ার মতো শক্তিধর রাষ্ট্র। বিশ্ব বাণিজ্যে যেভাবে এই গোষ্ঠীর উত্তরোত্তর উত্থান ঘটছে তাতে সিঁদুরে মেঘ দেখছে আমেরিকা। 'বন্ধু' ট্রাম্পের এই সিদ্ধান্তে কী করবে ভারত?
ভারত, চিন, ব্রাজিল, দক্ষিণ আফ্রিকা ও রাশিয়াকে নিয়ে তৈরি হয়েছে ব্রিকস (BRICS)। সময়ের সঙ্গে এর সম্প্রসারণ ঘটেছে। এখন ইরান, সৌদি আরব, মিশর, ইথিওপিয়া ও সংযুক্ত আরব আমিরশাহী, ইন্দোনেশিয়া এর সদস্যপদ পেয়েছে। ব্রিকসকে শক্তিধর জি-৭ জোটের অন্যতম প্রতিপক্ষ হিসাবে ধরা হয়। এই গোষ্ঠীর সদস্যদের মধ্যে নাম রয়েছে আমেরিকা ও ব্রিটেনের। এই মুহূর্তে বিশ্ব বাণিজ্যের ২৩ শতাংশ রয়েছে ব্রিকসের হাতে। আর ৩৩ শতাংশ জি-৭ জোটের। অন্যদিকে, এখনও বেশ কয়েকটি দেশ ব্রিকসের সদস্যপদের জন্য মুখিয়ে রয়েছে।
বিশ্লেষকদের মতে, বিশ্বে ব্রিকসের এই উত্থান ও গুরুত্ব মোটেই ভালোভাবে নিচ্ছেন না ট্রাম্প। কারণ তিনি সাফ বলে দিয়েছেন, 'আমেরিকা ফার্স্ট' অর্থাৎ যেকোনও কিছুতে আমেরিকা প্রথম। আর ব্রিকসের লক্ষ্য হচ্ছে, মার্কিন ডলারের নির্ভরশীলতা কমিয়ে দেশীয় মুদ্রার দর বাড়ানো। দ্রুত অর্থনৈতিক উন্নতি ঘটিয়ে শক্তি বৃদ্ধি করা। কিন্তু ডলার আমেরিকার অন্যতম অস্ত্র। এই কারণে ব্রিকস ট্রাম্পের কাছে চ্যালেঞ্জ হয়ে উঠেছে। তাই তিনি ঠিক করেছেন এবার থেকে এই গোষ্ঠীর দেশগুলোর উপর ১০০ শতাংশ শুল্ক চাপানো হবে। মার্কিন প্রেসিডেন্টের এই নির্দেশ কার্যকর হলে সম্প্রসারণের ক্ষেত্রে সমস্যায় পড়তে হবে ব্রিকসকে। মার্কিন শুল্কের ভয়ে অন্য দেশও হয়তো এই গোষ্ঠীর সদস্য হতে এগিয়ে আসবে না।
কিন্তু ব্রিকসের সদস্য হলেও বন্ধু ভারতকে আরও কাছে টানতে তৎপর ট্রাম্প। আমেরিকার ৪৭ তম প্রেসিডেন্ট পদে বসার পর তিনি ইঙ্গিত দিলেন অন্য কেউ নয়, এশিয়ার ভরকেন্দ্র আসলে ভারত। তাই শপথগ্রহণ অনুষ্ঠানে ভারতের প্রতিনিধি হিসাবে বিদেশমন্ত্রী এস জয়শংকরকে বিশেষ সম্মান দিয়েছিল ওয়াশিংটন। এবার ট্রাম্প সরকারের প্রথম কূটনৈতিক বৈঠকও জয়শংকরের সঙ্গেই করলেন মার্কিন বিদেশ সচিব মারো রুবিও ও জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা মাইক ওয়ালজ। বর্তমান আন্তর্জাতিক পরিস্থিতি, বিশেষ করে এশিয়া মহাদেশে ভারতের গুরুত্ব যে অপরিসীম তা বিলক্ষণ জানে আমেরিকা। তাই চিনের বাড়াবাড়িতে লাগাম টানতে দিল্লিকে আরও কাছে পেতে চাইছে ট্রাম্প প্রশাসন। কিন্তু ব্রিকসের সদস্যদের উপর শুল্ক চাপানোর সিদ্ধান্তে ভারতের কী প্রতিক্রিয়া হয় সেদিকেই নজর কূটনীতিকদের। বাণিজ্যের ক্ষেত্রে দুদেশ কতটা সহমত হবে সেনিয়েও সংশয় রয়েছে।